ঢাকা ০২:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

৮ বছর পরে হারানো ছেলে ফিরে পেয়ে পরিবারে আনন্দের বন্যা

৮ বছর পরে মায়ের কোলে ফিরেছে হারানো ছেলে মাইদুল ইসলাম সুজন (১৮)। ছেলেকে ফিরে পেয়ে পরিবারে বইছে আনন্দের বন্যা। ঘটনা ঘটেছে বরগুনার আমতলী উপজেলার টেপুড়া গ্রামে শুক্রবার রাতে।

পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের টেপুড়া গ্রামের মতিন মুন্সির কন্যা বিলকিস বেগমের সাথে ১৯৯৭ সালে পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর গ্রামের রুহুল আমিন খন্দকারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্বামী রুহুল আমি বিলকিসকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো।

ইতিমধ্যে তাদের কোল জুড়ে আসে ছেলে মাইদুল ইসলাম সুজন ও মেয়ে তামান্না। কিন্ত তা সত্বেও বিয়ের সাত বছরের মাথায় বিলকিসের সাথে স্বামীর সম্পর্কচ্ছেদ ঘটে । অসহায় বিলকিস ছেলে সুজন ও মেয়ে তামান্নাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। ছেলে সুজনকে একটি হাফিজি মাদরাসায় ভর্তি করে দেন। পরে তিনি একটি গার্মেন্টেসে কাজ নেয়। কষ্টে চলে তাদের দিনকাল। ২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী তুরাগ থানার ভাড়া বাসা থেকে মোবাইলে লোড দিতে গিয়ে পথ হারিয়ে সদর ঘাটে আসে।

ওইখানে দেখা হয় পটুয়াখালীর মকবুুল হোসেন মাস্টারের সাথে। তিনি সুজনকে তার বাসায় নিয়ে আসেন। মাস্টারের আদর সোহাগে ভুলে যান মা ও পরিবারের কথা। মা ছেলেকে খুজেও পায়নি । একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় । পরে ওই বছর ২৬ ফেব্রুয়ারী ঢাকার তুরাগ থানায় মা বিলকিস বেগম সাধারণ ডায়েরী করেন। ছেলেকে হারিয়ে মা বিলকিস মেয়ে তামান্নাকে নিয়ে বাবার বাড়ীতে চলে আসেন। খেয়ে না খেয়ে কোন মতে বাবার বাড়ীতে চলে তার জীবন। এদিকে গত চার বছর আগে মকবুল মাস্টারের ছেলে মেহেদী হাসান সুজনকে পটুয়াখালী জজ কোর্টের সামনে তার প্রিয়জন ফটোস্ট্যাটের দোকানে কাজ দেয়। ওই দোকানে সুজন চার বছর ধরে কাজ করছে।

এর মধ্যে পটুয়াখালীতে তার বেশ বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়। ওই বন্ধুদের মধ্যে হাফেজ মোঃ মোস্তফা ও মাসুদের সাথে বেশ ঘনিষ্টতা। তাদের কাছে সুজন সকল কিছু খুলে বলে। ওই দুই বন্ধু মিলে সুজনের পবিরারের সন্ধান করতে থাকে। বন্ধু মোস্তফা তার বড় ভাই অহিদুজ্জামানের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। পরে অহিদুজ্জামান আমতলী উপজেলার কাঁঠালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আবু ছালেহ’র সাথে যোগাযোগ করে।

এই দু’জনে মিলে সুজনের সমুদয় পরিচয় উৎঘাটন করেন। পরে সুজনকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে অহিদুজ্জামান ও শিক্ষক আবু ছালেহ পটুয়াখালী থানার দ্বারস্থ হন। শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে পটুয়াখালী সদর থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মুকিত হাসান ও সদর থানার ওসি আখতার মোর্শ্বেদের উপস্থিতে মাইদুল ইসলাম সুজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার মা বিলকিস বেগমের হাতে তুলে দেন। ৮ বছর পর মা ও ছেলের মিলন মেলায় এক হৃদয় বিধারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। পাশাপাশি আনন্দে আত্মহারা হয়ে মা ও ছেলে ।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

আপলোডকারীর তথ্য

৮ বছর পরে হারানো ছেলে ফিরে পেয়ে পরিবারে আনন্দের বন্যা

আপডেট সময় : ১০:৪৮:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জুলাই ২০২০

৮ বছর পরে মায়ের কোলে ফিরেছে হারানো ছেলে মাইদুল ইসলাম সুজন (১৮)। ছেলেকে ফিরে পেয়ে পরিবারে বইছে আনন্দের বন্যা। ঘটনা ঘটেছে বরগুনার আমতলী উপজেলার টেপুড়া গ্রামে শুক্রবার রাতে।

পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের টেপুড়া গ্রামের মতিন মুন্সির কন্যা বিলকিস বেগমের সাথে ১৯৯৭ সালে পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর গ্রামের রুহুল আমিন খন্দকারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্বামী রুহুল আমি বিলকিসকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো।

ইতিমধ্যে তাদের কোল জুড়ে আসে ছেলে মাইদুল ইসলাম সুজন ও মেয়ে তামান্না। কিন্ত তা সত্বেও বিয়ের সাত বছরের মাথায় বিলকিসের সাথে স্বামীর সম্পর্কচ্ছেদ ঘটে । অসহায় বিলকিস ছেলে সুজন ও মেয়ে তামান্নাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। ছেলে সুজনকে একটি হাফিজি মাদরাসায় ভর্তি করে দেন। পরে তিনি একটি গার্মেন্টেসে কাজ নেয়। কষ্টে চলে তাদের দিনকাল। ২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী তুরাগ থানার ভাড়া বাসা থেকে মোবাইলে লোড দিতে গিয়ে পথ হারিয়ে সদর ঘাটে আসে।

ওইখানে দেখা হয় পটুয়াখালীর মকবুুল হোসেন মাস্টারের সাথে। তিনি সুজনকে তার বাসায় নিয়ে আসেন। মাস্টারের আদর সোহাগে ভুলে যান মা ও পরিবারের কথা। মা ছেলেকে খুজেও পায়নি । একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় । পরে ওই বছর ২৬ ফেব্রুয়ারী ঢাকার তুরাগ থানায় মা বিলকিস বেগম সাধারণ ডায়েরী করেন। ছেলেকে হারিয়ে মা বিলকিস মেয়ে তামান্নাকে নিয়ে বাবার বাড়ীতে চলে আসেন। খেয়ে না খেয়ে কোন মতে বাবার বাড়ীতে চলে তার জীবন। এদিকে গত চার বছর আগে মকবুল মাস্টারের ছেলে মেহেদী হাসান সুজনকে পটুয়াখালী জজ কোর্টের সামনে তার প্রিয়জন ফটোস্ট্যাটের দোকানে কাজ দেয়। ওই দোকানে সুজন চার বছর ধরে কাজ করছে।

এর মধ্যে পটুয়াখালীতে তার বেশ বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়। ওই বন্ধুদের মধ্যে হাফেজ মোঃ মোস্তফা ও মাসুদের সাথে বেশ ঘনিষ্টতা। তাদের কাছে সুজন সকল কিছু খুলে বলে। ওই দুই বন্ধু মিলে সুজনের পবিরারের সন্ধান করতে থাকে। বন্ধু মোস্তফা তার বড় ভাই অহিদুজ্জামানের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। পরে অহিদুজ্জামান আমতলী উপজেলার কাঁঠালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আবু ছালেহ’র সাথে যোগাযোগ করে।

এই দু’জনে মিলে সুজনের সমুদয় পরিচয় উৎঘাটন করেন। পরে সুজনকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে অহিদুজ্জামান ও শিক্ষক আবু ছালেহ পটুয়াখালী থানার দ্বারস্থ হন। শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে পটুয়াখালী সদর থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মুকিত হাসান ও সদর থানার ওসি আখতার মোর্শ্বেদের উপস্থিতে মাইদুল ইসলাম সুজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার মা বিলকিস বেগমের হাতে তুলে দেন। ৮ বছর পর মা ও ছেলের মিলন মেলায় এক হৃদয় বিধারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। পাশাপাশি আনন্দে আত্মহারা হয়ে মা ও ছেলে ।