সিন্ডিকেট চক্রের বা কমিটির কিছু সদস্যরা আরাম আয়েশে দিন যাপন করলেও রাজশাহীর তানোরে দেড়শর অধিক দলিল লেখকের দিন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে। আবার ক্যাশিয়ার সিনিয়র দলিল লেখক ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে রাজার হালে দিন পার করছেন।
এছাড়াও সিনিয়র দলিল লেখকদের মাঝে বিশাল এক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই চক্রের সদস্যদের কেউ কোটি টাকার মালিক আবার কেউ দু এক বিঘা জমি থেকে বিঘার পর বিঘা জমি কিনেছেন আবার কেউ গড়েছেন ফ্লাট বাড়ি বাইকের শোরুম।
সিন্ডিকেট চক্র বাদে প্রায় ১৬০জন মত দলিল লেখক মানবেতর জীবন যাপন করলেও কমিটির নেতারা দেখেও না দেখার ভান করে আছে। ব্যাংকে লাখ লাখ টাকা জমা থাকলেও কোন ভাবেই সিন্ডিকেট চক্র উত্তোলন করতে দিচ্ছেনা বলে একাধিক কমিটির সদস্যারাই নিশ্চিত করেছেন। ফলে এসব সিন্ডিকেট চক্রের ব্যাপারে সাংসদ নির্বাহী অফিসারসহ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এবং ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ কারী সিনিয়র দলিল লেখক কামারগাঁ বিএনপির একাংশের সভাপতি খলিলুর রহমান খলিলের কঠোর শাস্তির দাবি উঠেছে।
জানা গেছে ১৯৭৯ সালে তানোরে সাবরেজিট্রি প্রতিষ্ঠা হয়। ওই সময় তানোর সদরে জায়গা না থাকার কারনে তালন্দ কলেজ এলাকায় চলে কার্যক্রম। এর পর ৯০ সালের আগে তানোর সদর বাসি অনেক আন্দোলন করে সদরে নিয়ে আসে অফিস। ওই গুটি কয়েক দলিল লেখক ছিলেন। তাঁরা জাল দলিল একজনের জমি টাকার বিনিময়ে অন্যকে দিয়ে দেওয়া। এরপর ধীরে ধীরে দলিল লেখকের সংখ্যা বাড়তে থাকলে সিন্ডিকেট চক্র আদালতে রিট করেন। বন্ধ থাকে দলিল লেখকের লাইসেন্স। পরে রিট খারিজ হলে দলিল লেখকের লাইসেন্স আসার হিড়িক পড়ে। ২০১০ সালের আগে দলিল লেখকের সংখ্যা ছিল ৬০ থেকে ৭০ জনের মত।
সেই সময় থেকে সিন্ডিকেট করে টানা দশ বছর ধরে সভাপতি হিসেবে আছেন মুণ্ডুমালা বাজারের বাসিন্দা তাসির উদ্দিন, সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন তানোর সদরের তানোরগ্রামের রাব্বানী। কমিটির বডিতে রয়েছেন গুবিরপাড়াগ্রামের ভ্যান্ডারও দলিল লেখক রায়হান, গোল্লাপাড়াগ্রামের জাল দলিল করে জেল খাটা দুলাল, হিন্দুপাড়াগ্রামের উত্তম। ২০১৯ সালে কমিটির মেয়াদ শেষ হলে নামমাত্র আহবায়ক কমিটি করা হয়।
আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান তালন্দ হরিদেপপুরগ্রামের ফাইজুল ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয় কুজিশহর গ্রামের খাইরুল ইসলামকে। ২০১৯ সালের প্রথম দিকে আদায় কারী আলহাজ্ব অয়াহেদের কাজ থেকে দায়িত্ব কেড়ে নিয়ে দেয়া হয় মাদারিপুরগ্রামের ভুমিদস্যু নামে পরিচিত খলিল কে।
তিনি দায়িত্ব পেয়ে ক্ষমতাসীন দলের কিছু দলিল লেখককে ম্যানেজ করে প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। যেটা আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে প্রকাশ পাই।এভাবে সিন্ডিকেট এবং কোন ধরনের হিসাব দিতে রাজি হন না। তাঁরা নিজেরাই হিসেব করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এদিকে দেশে যখন করোনার ছোবলে ঘরবন্দি সকল ধরনের শ্রেণী পেশার মানুষ। বন্ধি হয়ে পড়েছেন প্রায় ১৭৫ জন দলিল লেখক। গত ২৫ মার্চ থেকে এপর্যন্ত থই থই খেলা করে দু বারে ২হাজার করে ৪ হাজার টাকা প্রদান করেন। পাচ জায়গায় স্বাক্ষর নিয়ে জুনিয়র দলিল লেখকরা পাই ২ হাজার আর সিনিয়ররা পাই ৩ হাজার টাকা।
এ নিয়োমের প্রতিবাদ করে ইউএনও অফিসে মৌখিক অভিযোগ দেন দলিল লেখক দেলোয়ার শংকরসহ একাধিক সদস্য। পরে ইউএনও সাবেক সভাপতি তাসির টাকা বণ্টন কারী উত্তম কে ডেকে সতর্ক করে দিয়ে হিসেব দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
এছাড়াও প্রায় ১০০জন নতুন দলিল লেখকদের কাছ থেকে ইচ্ছে অনুযায়ী সিন্ডিকেট চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যার কোন হিসেব নেই। দলিল লেখক দেলোয়ার জানান এই সিন্ডিকেট চক্র কত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তাঁর কোন হিসেব নেই। যাদের কিছুই ছিলনা তাঁরা আজ বাড়ি গাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে লাখ পতি বনে গেছেন। দুদকের মাধ্যমে এদের বিরুদ্ধে অভিযান দিয়ে এত সম্পদের মালিক কিভাবে হল ।
আবার আইন অমান্য করে রায়হান ভ্যান্ডার ও দলিল লেখক, ফাইজুল ভ্যান্ডার আবার দলিল লেখক হিসেবে বছরের পর বছর জুড়ে কাজ করছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়না। তাঁরা লাখ লাখ টাকা কামিয়েছেন এক মাস কেন সারা বছর এমন অবস্থা থাকলেও তাদের কোন অভাব থাকবেনা।
দলিল লেখক আসরাফুল জানান প্রতিটি জিনিসের দাম হুহু করে বাড়ছে। তাদেরকে বারবার বলা হচ্ছে ব্যাংকে টাকা রেখে লাভ কি এসময় যদি টাকা দেয়া না হয় তাহলে হিসেব দিয়ে সমিতি বাতিল করে দিক। আফজাল নামের আরেক দলিল লেখক জানান এক বস্তা চাল কিনতে লাগছে ২ হাজার টাকারও বেশি। আবার কাচা বাজার ব্যাপক চড়া। এঅবস্থায় খেয়ে পরে বেঁচে থাকায় বড় দায়। তবে আমরা না খেয়ে থাকব আর তাঁরা আরামে থাকবে এটা হতে দেয়া যাবেনা। সমিতি মানে আপদ বিপদে এগিয়ে আসা ।
এনিয়ে আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব আলহাজ্ব খাইরুল ইসলাম জানান শুধুমাত্র তানোর সদরে যে সব দলিল লেখক আছে তারাই টাকার কথা বলছেন। বহিরাগতরা কিছুই বলছেনা। আপনার জমি আছে ধান চাল টাকার অভাব নেই আপনি তো এমন কথা বলবেন এমন প্রশ্ন করা হলে কোন উত্তর না দিয়ে দেখা যাবে বলে এড়িয়ে যান।
কমিটির আহবায়ক আলহাজ্ব ফাইজুল ইসলাম বলেন আমি বুঝে পাইনা এই দুর্যোগের সময় সমিতির সদস্যরা কেন সমস্যাই থাকবে। তারাতো আর ত্রানের লাইনে দাড়াতে পারবেনা, তাহলে ব্যাংকে টাকা রেখে লাভ কি। আমি সবে মাত্র দায়িত্বে এসে দেখলাম খলিল প্রায় ২০ লাখ নারায়ন প্রায় ৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। তাদের টাকা আসলেও তো এক কালিন একটা মোটা অংকের টাকা দেয়া যায়। কিন্তু সদরের কিছু দলিল লেখক সমিতিকে নিজের সম্পদ ভেবে যা ইচ্ছে তাই করছে। তাঁরা পেটের জালা কি বুঝবে।
টাকা আত্মসাৎ কারী খলিল জানান ৩০ এপ্রিলের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়া হবে। আপনি সমিতির টাকা কেন আত্মসাৎ করলেন জানতে চাইলে কোন কিছু না বলে টাকা ফেরতের কথা বলেন। তবে অনেকে জানান সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য তিনি বাকিদের ম্যানেজ করে আবার দিন তারিখ নিবেন।
টাকা আত্মসাতের সময় সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন আলহাজ্ব তাসির উদ্দিন। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় কিভাবে অল্প সময়ের মধ্যে খলিল ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করলেন এবং সেটা এত পরে প্রকাশ পেল কেন তিনি জানান ২০১৯ সালে তাঁর কাছ থেকে হিসেব নেয়া হয়েছিল না।
যারা ভ্যান্ডার তাঁরা কিভাবে দলিল লেখক হিসেবে সমিতির টাকা পান প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন আসলে একজন দুই ব্যবসা করতে পারেননা এটা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী কাজ। এই দুর্যোগ অতিবাহিত হলে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।