দেশে যখন করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারন করেছেন ঘরবন্ধি হয়ে পড়েছেন জনসাধারণ। কিন্তু ঘরবন্ধি হলেতো আর পেতের ক্ষুধা বা চলতি ইরো বোরো মৌসুমের ধান আসবেনা ঘরে। চাষিরা যখন ঘরে ধান তোলা নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় এবং শ্রমিক নিয়ে বিপাকে। ঠিক সেই মুহূর্তে রাজশাহীর তানোরে বোরো চাষিদের জন্য আশীর্বাদ হয়েছেন কম্বাইন্ড হারভেস্টার নামক ধান কাটা মেশিন।
এমেশিনে ধান কাটা মাড়াই সব কিছু এক সাথেই হচ্ছে। এতে করে শ্রমিক সঙ্কট যেমন দূর হচ্ছে তেমনি ভাবে অল্প খচরে এমেশিনের মাধ্যমে কৃষকের রক্তঘামের কাঙ্ক্ষিত ফসল উঠছে ঘরে। গত শনিবার পৌর এলাকার ধানতৈড়গ্রামের ধানী মাঠে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের ধান কাটা মাড়ায়ের শুভ উদ্বোধন করেন উপজেলা কৃষি অফিসার শামিমুল ইসলাম।
সরেজমিনে উপজেলার কামারগাঁ ইউপি এলাকার মাদারিপুর ধানী মাঠে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। সেই ধান কাটা দেখতে এবং ধান কাটার সিরিয়াল নিতে ভিড় জমে কৃষকের।প্রতি ঘণ্টায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন এক একর জমির ধান কাটতে সক্ষম। তবে ঘণ্টায় কাদা বা পানি জমে থাকা জমির ধান কাটতে পারে দেড় থেকে দুই বিঘা জমি। মেশিন দিয়ে ধান কেটে যখন পনের মন ধান জমা হচ্ছে তখন লম্বা সাধা রঙয়ের পাইপ দিয়ে আবর্জনা ছাড়াই বস্তায় ভরে দেয়া হচ্ছে ধান। মাদারিপুর এলাকার চাষি চন্দন দাসের ধান কাটছিল কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন।
তিনি জানান জমিতে পানি জমে আছে এজন্য শ্রমিকরা ধান কাটতে অনেক মজুরী চাচ্ছে। কিন্তু এমেশিন আমাদের জন্য এক প্রকার আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। মেশিন ছাড়া ধান কাটা যেতনা। অপ্ল সময়ের মধ্যে আমার জমির ধান কাটা হয়ে গেল। তাঁরা বিঘা প্রতি দুই হাজার টাকা নিচ্ছে। সেখানেই সিরিয়াল নিয়ে ছিলেন আরেক চাষি রহিম তিনি জানান আমার এক বিঘা জমির ধান কেটে নিব। চন্দনের ধান কাটা শেষ হলে আমার জমিতে যাবে মেশিন। যেখানে এক বিঘা জমির ধান কাটা মাড়াই করতে খরচ হত চার থেকে পাঁচ হাজার সেখানে মেশিনে কাটলে খচর হচ্ছে দুই হাজার টাকা। রমেন নামের আরেক চাষি এক বিঘা জমির ধান কেটে নিতে মেশিনের কাছেই বসে ছিলেন। তিনি জানান জমিতে একটু পানি জমে থাকার কারনে শ্রমিকরা অনেক মজুরি চাচ্ছে। এজন্য মেশিনেই কাটব।অবশ্য মেশিনে ধান কাটার জন্য খড় সেই ভাবে পাওয়া যাবেনা। কারন খড়গুলো জমে থাকা পানিতে পড়ছে। তবে ধান পাইপের মাধ্যমে আবর্জনা মুক্ত পরিষ্কার ধান বস্তায় ভরা যাচ্ছে।
কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনটি নওগাঁ জেলা থেকে নিয়ে এসেছেন সহিদ নামের এক ব্যক্তি, তিনি জানান প্রতি ঘণ্টায় শুকনো জমি হলে এক একর জমির ধান কাটা যাবে। প্রতি ঘণ্টায় তেল লাগে ৮ থেকে ৯ লিটারের মত। মেশিন চালক দুলাল জানান শুকনো জমি হলে এক একর জমির ধান কাটতে এক ঘণ্টারও কম সময় লাগে। আর কাদা পানি জমে থাকলে সময় একটু বেশি লাগে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার সাইফুল্লাহ জানান কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে ঘণ্টায় এক একর জমির ধান কাটা মাড়াই ঝাড়াই ও বস্তাবন্ধি করা যায়। এতে খরচ হয় মাত্র ৮ হাজার টাকা।আর শ্রমিক দিয়ে এর খরচ হত ১৬ হাজার টাকা। এমেশিন দিয়ে ধান কাটলে কৃষকের খরচ ও সময় দুটো বাচবে। এ মেশিন কিনতে সরকার কৃষককে অর্ধেক টাকা ভুরতুকি দিচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার শামিমুল ইসলাম বলেন চলতি মৌসুমে এউপজেলায় ১৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এপর্যন্ত ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পেরেছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকা নিয়োমিত মাঠ পরিচর্যার কারনে রোগ বালা ছিল না, এজন্য ফলনও হচ্ছে বাম্পার। এমনকি কি শ্রমিক সঙ্কটের কথা বিবেচনা করে কৃষি খাতকে যান্ত্রিককরন করা হচ্ছে। উপজেলায় দুটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটা হচ্ছে এবং বাহির থেকেও এমেশিন ধান কাটার জন্য উপজেলায় এসেছে। বহিরাগত শ্রমিকদের ব্যাপারে মনিটরিংসহ খোজ খবর নেয়া হচ্ছে। আশা করছি এরকম আবহাওয়া থাকলে অল্প দিনের মধ্যেই কৃষকরা তাদের রক্তঘামের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে জানান একর্মকর্তা।