রাজশাহীর তানোর উপজেলার মু-ুমালা পৌর সভার নিজ ওয়ার্ডে জালিয়াতির মাধ্যমে অতন্ত ১৬ ব্যাক্তির নামে দুইবার ওএমএস কার্ড ও মৃত ব্যাক্তির নামে একই কার্ড দেয়ার অভিযোগে পৌর সভার কাউন্সিলর আমিন হোসেন আমিনকে ২য় দফা কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর সভার প্যাডে ২০২০/১১৩ নং স্বারককে শোকজ নোটিশে স্বাক্ষর করেন উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী।
গত (১৪ মে) বৃহস্পতিবার পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফা নোটিশ কপি কাউন্সিলর আমিন হোসেন আমিরের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে নিশ্চিত করেন পৌর কর্তৃপক্ষ ।
এতে নোটিশ প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় অফিসিয়ালী ব্যব¯’া গ্রহন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
দ্বিতিয় দফা শোকজ নোটিশ প্রাপ্ত কাউন্সিলর হলেন,০৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আমির হোসেন আমিন ।
০৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলের শোকজ নোটিশে উল্লেখ করা হয়,গত ১৬.০৪.২০২০ ইং তারিখে মুন্ডুমালা পৌরসভায় এক হাজার ২০০ ওএমএস কার্ড বিতারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিন্ধান্ত অনুযায়ী ৫ নং ওয়ার্ডে ৩২৯ নম্বর হতে ৫৫০ নম্বর সিরিয়ালে মোট ২২২ টি কার্ড বরাদ্ধ দেয়া হয়।
কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আমিনের বরাদ্দকৃত ২২২ কার্ডের মধ্যে ওয়ার্ডের একাধিক ব্যাক্তির নামে দুটি করে কারে ওএমএস কার্ড দেয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেছে। এমন কম পক্ষে ১৬ ব্যাক্তির নামে ও্এমএস কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে দিয়েছেন কাউন্সিলর আমিন । সরকারী কার্ড আপনি কেন জেনে শুনে জালিয়াতি করেছেন তার জবাব নোটিশ প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অফিসে লিখিত ভাবে জানাতে হবে। অন্যথায় অফিসিয়ালী ব্যব¯’া গ্রহন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগেও তিনি এসব বরাদ্ধ কার্ডের মধ্যে ওই ওয়ার্ডে মৃত ব্যাক্তি আমজাদ হোসেনের নামে ৪৯৮ নং ক্রমিকের কার্ড অর্ন্তভুক্ত করেছেন কাউন্সিলর আমিন হোসেন আমিন। তাছাড়াও তিনি একই ওয়ার্ডে প্রায় ৯ জন ব্যাক্তিকে দুইবার করে একই কার্ড প্রদান করেছেন,যা সরকারী আইন লঙ্ঘন হয়েছে। তাই তাকে ১০ মে প্রথম দফা শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমিন শোকজ নোটিশের কোন জবাব দিচ্ছেন না।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী বলেন, কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আমিন হোসেন আমিন জেনে শুনে তার ওয়ার্ডে একক ব্যাক্তির নামে একাধিক ওএমএস কার্ড দিয়েছেন এমন অভিযোগ পাওয়ার পর তারা তালিকাকৃত ব্যাক্তিদের নাম যাছাই বাছাই করে অন্তত ১৬ জনের নামে দুইবার করে একই কার্ড প্রদান করেছেন। তাই তাকে ১৩ মে দ্বিতীয় দফা কারণ দশার্নো(শোকজ) নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এবং শোকজ নোটিশের অনুলিপি কপি বিভাগীয় কমিশনার,জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারে অফিসারের দপ্তরে তাদের বরাদ্দকৃত কার্ডের তালিকা ডকুমেন্টও তথ্য প্রমাণসহ প্রেরণ করা হয়েছে, যেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যব¯’া গ্রহন করা হয়।
এর আগে তিনি মৃত ব্যাক্তির নামে ওএমএস কার্ড ও কম পক্ষে ৯জন ব্যাক্তিকে দ্বিতিয় বার করে কার্ড দেয়ার অভিযোগে ১০ মে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। তাতেও তার সন্তোষ জনক জবাব পাওয়া যাইনি।
এ বিষয়ে শোকজ প্রাপ্ত ০৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমির হোসেন আমিন তার ওয়ার্ডে এক ব্যাক্তির নামে একাধিক ওএমএস কার্ড দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন ভুল করে এমনটা হতে পারে। কার্ড গুলো সংশোধন করে অন্য জনকে দেয়া হবে এবং নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এর আগে একই কারণে ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তাফিজুর রহমানকে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়। এতে বলা হয় আপনি গত ১৭/০৪/২০২০ ইং তারিখে ৮ নং ওয়ার্ডের মোঃ আরিফুল ইসলাম পিতা কসিমুদ্দিন সাং হাসনা পাড়া চোরখর মুণ্ডুমালা পৌরসভা তানোর রাজশাহী। উক্ত ব্যাক্তির নামে ৪১৮ নম্বর কার্ডটি ডবল দিয়েছেন। তাছাড়া ৪১৬ নম্বর জহিরুল ইসলাম পিতা শাহালাল সাং হাসনাপাড়া ও ৪৬৯ নম্বর কার্ড একই ব্যাক্তি জহিরুলকে দিয়েছেন। যাহার প্রমান স্মারক ৭২ তারিখ ১৭/০৪/২০২০ ইং তালিকাভুক্ত ৬০০জন ওএমএস তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে। যাহাতে আপনার স্বাক্ষর সম্পাদন করা আছে। আপনি কেন ডবল অন্তর্ভুক্ত করেছেন তাঁর ব্যাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পৌরসভায় দাখিলের জন্য অনুরোধ করা হল।
এছাড়াও মুণ্ডুমালা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কসিমুদ্দিনের পুত্র আরিফুল ইসলাম মেয়র গোলাম রাব্বানীকে মৌখিক ভাবে ১০ টাকা কেজি বা ওএমএস কার্ড পাওয়ার জন্য বলেন। তাঁর প্রেক্ষিতে মেয়র আরিফুল কে একটি কার্ড দেন, যার নম্বর ১৫০। কিন্তু মেয়রকে বেকায়দায় ফেলতে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুস্তাফিজুর ৪১৮ নম্বর আরেকটি কার্ড এবং ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৪৮২ নম্বর কার্ড দেন। আরিফুলের বাড়িতে এদুটি কার্ড দেবার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না।
বাড়িতে এসে দুটি কার্ডের বিষয়ে জানতে দুই কাউন্সিলর বলেন আমাকে মেয়র সাহেব ১৫০ নম্বর কার্ড দিয়েছেন, তারপরও আপনারা কেন আমাকে দুটি কার্ড দিলেন। জবাবে দুই কাউন্সিলর তাকে জানায় কার্ড রেখে দাও চাল তুলে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিবি। আর কার্ডের বিষয়ে তুই কাউকে কিছু বলবিনা বলেও জানায় দুই কাউন্সিলর। কিন্তু বিষয়টি অনিয়ম বা পরবর্তীতে সমস্যা হবে বলে গত ৮/৫/২০২০ইং তারিখে আরিফুল লিখিত ভাবে মেয়র মহোদয়কে অবহিত করে ১৫০ নম্বর মেয়রের দেয়া কার্ড বহাল রেখে ৪১৮ ও ৪৮২ নম্বরের দুটি কার্ড বাতিলের আবেদন করেন।
কিন্তু কাউন্সিলর মুস্তাফিজুর শোকজ নোটিশের জবাবে এসব ডবল কার্ডের কথা অস্বীকার করে বলেন মেয়রের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করায় শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান তাঁরা মেয়রের জনপ্রিয়তা এবং তাঁর রাজনৈতিক সুনাম ক্ষুন্ন করতে জেনে বুঝে এসব অনিয়ম করে মেয়রের উপর দোষ দিয়ে দায় সারতে চান। কিন্তু তাঁরা অভিযোগ করে এখন নিজেরাই হেয় হয়ে পড়েছেন। পৌর এলাকার একাধিক বাসিন্দারা জানান যেখানে মেয়র নিজের অর্থে লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রথম থেকে এপর্যন্ত খাদ্য সামগ্রীসহ ঈদ সামগ্রী বিতরণ করছেন। আর তিনি এসব অনিয়ম করবেন এটা হাস্যকর ছাড়া কিছুই না। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইন গত ব্যবস্থা নেবারও দাবি জানান।