রাজশাহীর তানোরে পাওনা টাকা চাওয়ার অপরাধে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। চলতি মাসের ১৪মে উপজেলার মুণ্ডুমালা পৌর এলাকার চুনিয়াপাড়া সোনা পুকুর বা মাসুমের দোকানের সামনে প্রথমে ঘটে কথা কাটাকাটির ঘটনা, এর পর মামলার প্রধান আসামী টাকা ধার নেয়া ব্যাক্তি সেতাবুরের বাড়ির সামনে পুনরায় ঘটে মারপিটের ঘটনা।
এঘটনায় টাকা পাওনাদার আহত মাসুমের স্ত্রী শামিমা রেজা সেতাবুর রহমানকে প্রধান করে ১০জনের নামে মামলা করেন। অপর দিকে সেতাবুরের ভাই মাহাবুর রহমান বাদী হয়ে শিক্ষক আতাউর রহমানকে প্রধান করে ৯ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। ফলে ঘটনাটি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং যে কোন মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।
জানা গেছে , উপজেলার মুণ্ডুমালা পৌর এলাকার চুনিয়াপাড়া গ্রামের ইদ্রিশ মুন্নার পুত্র সেতাবুরের কাছ থেকে একই গ্রামের মৃত আজিমুদ্দিনের পুত্র মাসুম ১৭ হাজার টাকা পাই। সেই পাওনা টাকা মাসুম একাধিকবার চাইলেও না দিয়ে বিভিন্ন ভাবে তালবাহানা করেন সেতাবুর। এঅবস্থায় চলতি মাসের ১৪মে সেতাবুর চুনিয়াপাড়া সোনা পুকুর পাকা রাস্তার উত্তর দিকে মাসুমের দোকানের সামনে সেতাবুর কে দেখে পাওনা টাকা চাই। টাকা চাইতেই সেতাবুর দিতে অস্বীকার করে গালি গালাজ শুরু করেন। মাসুম গালমন্দ করতে নিষেধ করলে সেতাবুর গালমন্দ চালিয়ে যান ও উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
এরই যের ধরে মাসুম তাদের নিজস্ব জায়গায় বাশের খুঁটি বসাতে শুরু করেন। এসময় সেতাবুরের হাতে থাকা লোহার সাবল দিয়ে মাসুমকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করে। সাথে সাথে মাসুম চিৎকার দিয়ে মাটিতে নুয়ে পড়েন। তাঁর চিৎকার শুনে তাঁর স্ত্রীসহ প্রতিবেশিরা ঘটনাস্থলে আসলে সেতাবুরসহ তাঁর ভাই ও ভাতিজা রকি পালানোর সময় মেহগুনি গাছের সাথে তাঁর মাথায় আঘাত লেগে মারাত্মক আহত হয় । এদিকে প্রতিবেশিরা মাসুমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। মাথার আঘাত বেগতিক হবার কারনে ৬টি সেলাই এবং পাঁচদিন হাসপাতালে থাকার পর তাকে ছাড়পত্র দেন চিকিৎসকরা।
মাসুম জানান, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও পাওনা টাকা দিতে চাইনা সেতাবুর। চলতি মাসের ১৪ মে পরিকল্পিত ভাবে আমাকে মারার জন্যই দোকানের সামনে এসেছিল। তাকে দেখে পাওনা টাকা চাওয়া মাত্র তিনি উত্তেজিত হয়ে গালমন্দ শুরু করেন। আমিসহ দোকানে বসে থাকা লোকজন নিষেধ করলেও কোন কর্ণপাত না করে আমাকে নানা ধরনের হুমকি প্রদান করছিল। তাদের বাড়ি সংলগ্ন জায়গায় আমি বাশের খুঁটি বসাতে শুরু করি। এসময় সেতাবুর আমাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে লোহার সাবল দিয়ে মাথায় আঘাত করার সাথে সাথে রক্ত বের হওয়া শুরু করে। সেই আঘাতে আমি বাচাও বাচাও বলে চিৎকার দিয়ে মাটিতে নুয়ে পড়ি, তখন তাঁরা আমাকে লাথি মারতে থাকে।
চিৎকারে আমার স্ত্রীসহ প্রতিবেশীরা সেখানে আসলে তাঁরা পালিয়ে যায়।মাসুমের স্ত্রী মামলার বাদী শামিমা রেজা জানান ঘটনা ঘটে সাড়ে ৭ টার দিকে, ঘটনাস্থলে আমার স্বামীর আত্ম চিৎকারে অনেক লোক একসাথে আসছিল সেটা বুঝতে পেরে সেতাবুর, মাহবুর ও রকিসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। পালানোর সময় অন্ধকারে রকি মেহগুনি গাছের সাথে ধাক্কা লেগে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়। ওই সময় আমার দেবর শিক্ষক আতাউর ছিলেন না। অথচ মামলায় তাকেই প্রধান আসামী করা হয়েছে এবং হুমকি দিচ্ছে এবার তাঁর চাকুরী খাওয়া হবে।
এদিকে সেতাবুরের ভাই মাহাবুর মামলায় উল্লেখ করেন আমাদেরসহ কয়েক বাড়ির চলাচলের রাস্তা বাশের বেড়া দিয়ে ঘিরছিল। যার ফলেই মারপিটসহ মামলার ঘটনা ঘটে। সেতাবুর জানান কোন পাওনা টাকার হিসেব নেই এখানে। আমাদের চলাচলের রাস্তা জোরপূর্বক ভাবে তারা ঘিরে দিচ্ছিল। আমার ভাতিজা রকি নিষেধ করা মাত্র তাঁর মাথার বাম সাইডের কানের উপরে প্রচণ্ড আঘাত করে । তানোর মেডিকেলে নিলে ডাক্তার রামেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। এখানে এসে অপারেশন করা লেগেছে । আমরা রোগিকে নিয়ে শহরেই আছি এবং যে জায়গা ঘিরে দিচ্ছিল সেটি খাস জায়গা। তাদের নিজস্ব জায়গা হলে আমাদের কিছুই করনীয় ছিলনা।
উভয় মামলার তদন্ত কারি সাব ইন্সপেক্টর ( নিরস্ত্র) স্বপন কুমার সরকারের ০১৭৫৫-১১৭৬২৬ মোবাইল নম্বরে ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেন নি।