কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ী থেকে পানি না নামায় দুর্ভোগ বেড়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক বানভাসী মানুষের। গত এক সপ্তাহের অব্যাহত বন্যায় কর্মহীন হয়ে পড়া বানভাসী সিংহভাগ পরিবারের ঘরে খাবারও শেষ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছেন অনেকে।
সরকারীভাবে ত্রান তৎপরতা শুরু হলেও অপ্রতুলতার কারনে অনেকেরই ভাগ্যে তা জুটছে না। জেলার ৯ উপজেলার ৫০ ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৬‘শ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলসহ সবজি ক্ষেত।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার পারবতীপুর চরের মজির আলী জানান, গত ১ সপ্তাহ ধরে পারবতীপুর চরের সব ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে আছে। বাড়িতে শুকনো জায়গা না থাকায় চুলা জ্বালানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারনে শুকনো খাবার খেতে হচ্ছে তাদের।
একই চরের রব্বানী জানান, প্রতি বছর বন্যার আগে কিছু খাবার ঘরে মজুদ রাখতেন তারা। কিন্তু এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারনে দীর্ঘ সময় কর্মহীন হয়ে পড়ে আছেন তারা। সঞ্চিত ঘরের সামান্য খাবার শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে ধারদেনা করে একবেলা খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন পার করছে অনেকেই ! বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে গো খাদ্যের সংকট তীব্র আকার ধারন করেছে।
পার্শ্ববতী চর গ্রাম গারুহারা বলদিয়াপাড়ার শাহজামাল ও সুরুজ আলী জানান, ঘর-বাড়িতে পানি উঠলেও নৌকা না থাকায় ঘরের চৌকি উঁচু করে সেখানেই বসবাস করছেন তারা। খাদ্য সংকটে ভুগলেও এখন পর্যন্ত সরকারী বা বেসরকারী কোন সহায়তা পৌছায়নি তাদের কাছে।
এ ব্যাপারে যাত্রাপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মাইনুদ্দিন ভোলা জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়নের ১৫ হাজার পানিবন্দি মানুষের জন্য বুধবার ৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের মতোই একই অবস্থা ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের অববাহিকায় উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ি ও রাজারহাট উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক চরাঞ্চল গুলোর। অন্যদিকে, বন্যার পানিতে ডুবে তিন শিশুসহ মোট চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৪২ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোঃ রেজাউল করিম জানান, জেলার বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নতুন করে আরো ১‘শ মেট্রিক টন চাল ও ১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে তা দ্রুত বিতরণ করা হবে।