কুড়িগ্রামে ধরলার পানি কিছুটা কমলেও বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ! অন্যদিকে, ব্রুম্মপুত্রের পানি ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ! কয়েকদিন ধরে মানুষজন পানিবন্দি থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করছে ।চারদিকে শুধু বানভাসী মানুষের অসহায়ত্ব, বোবা চাহনী আর ভোগান্তির চিত্র।
যে রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া চলাচল করছিল এখন সেই রাস্তা দিয়ে চলছে নৌকা। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও অসংখ্য ঘর-বাড়ি ও নলকুপ তলিয়ে থাকায় নদ-নদীর অববাহিকার সবগুলো চর ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানি ও চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। তীব্র হচ্ছে গবাদি পশু ও শিশু খাদ্যের সংকটও। এ অবস্থায় সামান্য ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও তা সবার ভাগ্যে জুটছে না। চোখে পড়ছে না কোন বেসরকারী ত্রাণ তৎপরতা।
ওদিকে, বন্যার পানির তোড়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা শহর রক্ষা বাঁধের ৫০ মিটার ভেঙ্গে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উলিপুর উপজেলার বেগমগন্জ ইউনিয়নের মশালের চর, বালাডোবার চর, ফকিরের চর, বতুয়াতলির চর, সাহেবের আলগা ইউনিয়নের জাহাজের চর, কাশিয়ার চর, চেরাগির চরসহ অন্যান্য দুর্গম চরাঞ্চলগুলো ঘুরে দেখা গেছে সেখানকার মানুষজনের জীবন-যাপনের একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে নৌকা।
ঘরের ভিতর গলা পানি থাকলেও র্পার্শ্ববর্তী কোন উঁচু বাঁধ বা শুকনো জায়গা না থাকায় তারা নৌকার মধ্যেই ছাগল, ভেড়া, হাড়ি, পাতিল নিয়ে দিন যাপন করছে। এসব এলাকার নলকুপ তলিয়ে থাকায় তারা বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছে। ঘরে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার না থাকায় তারা একবেলা খেয়েই দিন পাড় করছে।
উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চরের অনেকেই চৌকি দঁড়ি দিয়ে ঘরের চালের সাথে ঠেকিয়ে রেখেছে। কাছাকাছি কোন শুকনো জায়গা না থাকায় ছেলে-মেয়ে, ছাগল ভেড়া নিয়ে নৌকায় অবস্থান করছে কেউ কেউ। প্রায় ২০ দিন ধরে ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন খাদ্য সহায়তাও পাইনি অনেকেই।
মশালের চরের ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন জানান, তার ওয়ার্ডের তিন শতাধিক পরিবার দীর্ঘ ২০/২১ দিন ধরে পানিবন্দি থাকলেও তাদের কোন ত্রাণ সহায়তা দেয়া সম্ভব হয়নি। সামান্য কিছু চাল বরাদ্দ পেয়েছি তা হয়তো ৩০ থেকে ৩৫টি পরিবারকে দেয়া সম্ভব হবে। এই মুহুর্তে এই মানুষগুলোর শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি জরুরী হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে চিলমারি উপজেলা সদরের অফিস পাড়াও পানিতে নিমজ্জিত !
চিলমারী-কুড়িগ্রাম রেললাইনটি এখন হুমকির মুখে ! শতশত মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে আশ্রয় নিয়েছে !
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো: হাবিবুর রহমান জানান, বন্যা কবলিতদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। কিন্তু উলিপুর উপজেলার হাতিয়া বাঁধের রাস্তায় ও চিলমারীর রানীগঞ্জ, কাঁচকলা ও ফকিরের হাট এলাকায় বানভাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ পর্যন্ত কোনো মেডিকেল টিমের সাক্ষাৎ তারা পায়নি ! এ এলাকাগুলোতে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে ! গত ২০ জুন থেকে এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জনই শিশু।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, সরকারী ভাবে বন্যা দুর্গতদের জন্য ১৬০ মেট্রিক টন চাল ও ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং তা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, আজ সকালে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি কিছুটা কমে চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৬২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।