কুড়িগ্রামে অবিরাম বৃষ্টির কারণে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে ! ধরলা নদীর পানি আবারো বৃদ্ধি পেয়ে পুনরায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী মানুষজন। অন্যদিকে, ব্রহ্মপূত্র নদের পানি অপরিবর্তিত থাকলেও বিপদসীমার উপরে অবস্থান করায় টানা তিন সপ্তাহ ধরে মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে রয়েছে। লোকজন বন্যার পানির মধ্যে বাড়ির ভিতর উঁচু মাচা করে, রাস্তায়, রেললাইন ও বাঁধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু অবিরাম বর্ষণে জীবন যাত্রা আরো পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে ! বেড়েছে বানভাসীদের মাঝে সীমাহীন দুর্ভোগ।
এদিকে, চিলমারী উপজেলায় বন্যার পানি প্রবেশ করে চিলমারী উপজেলা শহরসহ নতুন করে আরে বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত করেছে। এনিয়ে জেলার ৩ লক্ষ পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নের ৪৭৫টি গ্রাম এখনো পানির নীচে তলিয়ে আছে। কুড়িগ্রামে টানা ৩ সপ্তাহ ধরে তিস্তা ছাড়া সবগুলো নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপরেই অবস্থান করায় খাদ্য সংকটে ভুগছে মানুষজন।
বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে রৌমারীতে এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত উপজেলা শহর রক্ষা সেমিবাঁধ ৩০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলা পরিষদসহ রৌমারী বাজার। ফলে চরম বিপাকে রয়েছে সেখানকার মানুষ। একই অবস্থা বিরাজ করছে চর রাজিবপুর উপজেলায়। বন্যায় উপজেলা পরিষদে পানি ওঠায় স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে সেখানে। এছাড়াও কুড়িগ্রাম, উলিপুর ও নাগেশ্বরী পৌরসভার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় নিরাপদ আশ্রয় না পাওয়ায় মহাসড়ক, বাঁধ অথবা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ওইসব পানিবন্দি এলাকার পরিবারগুলো।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, সোমবার সকালে ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ৪৯ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারীতে ৫৫ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগার গত ২৪ ঘণ্টায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে । ফলে জেলা শহরসহ সর্বত্রই এখন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
বন্যার পানির স্রোতে জেলা শহরের বড় গরুর হাট সদরের যাত্রাপুর ও ঘোগাদহ ইউনিয়নের একটি সড়কের দুটি জায়গা পানির তোড়ে ভেসে যাওয়ায় বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ঈদের আগে এই হাটের বেচাকেনা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ইজারাদার ও গরুর খামারীরা।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, উজানে প্রবল বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।
সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ১৭০ মেট্রিকটন জিআর চাল, ৯ লাখ টাকার ত্রাণ উপজেলাগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও শিশু খাদ্য ও গবাদিপশুর জন্য ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।