রাজশাহীর তানোরে টানা বৃষ্টিতে কাঁচা রাস্তার চরম বেহাল অবস্থা। বৃষ্টির কারনে কাঁচা মাটির রাস্তাগুলো কাদা পানিতে একাকার হয়ে পড়েছে। ফলে ওই এলাকার জনসাধারণ প্রয়োজনের জন্য বাজার ঘাটেও আসতে পারছেনা। যানবাহন তো দূরে থাক পেয়ে হেটেও যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। উপজেলার প্রানপুর প্রকাশনগর গাল্লা বৈদ্যপুর হয়ে কয়েলহাট থেকে বানিয়াল দিয়ে বনকেশরের মোড়, অপরদিকে কুষ্ণপুর কচুয়া দিয়ে মোহনপুর মোড় হয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁচা রাস্তা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন এসব গ্রামের হাজার হাজার জনসাধারণ ।
ফলে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে পাঁচন্দর ও বাধাইড় ইউনিয়নের হাজারো মানুষ। এসব কাঁচা মাটির রাস্তার কারণে আজো এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না।ওই সব এলাকার জনসাধারণের দাবি জরুরি ভিত্তিতে মাটির রাস্তাাগুলো পাকাকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগীরা ¯’ানীয় সংসদ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অথচ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে সাংসদ জোরালো ভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবার নির্বাচিত হতে পারলে উপজেলায় এক ইঞ্চি রাস্তা কাঁচা থাকবেনা। কিন্তু নির্বাচনের প্রায় দুই বছর হতে চললেও প্রতিশ্রুতির কোন বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। বরং যে সব পাকা রাস্তা রয়েছে সেগুলোরও বেহাল দশা। যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন যত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে গ্রামগঞ্জের রাস্তাগুলো ঝকঝক হয়ে থাকার কথা। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের জন্য রাস্তার এমন পরিণতির খবর উঠে আসছে।
স্বাধীনতার পর এত বছর অতিবাহিত হলেও রাস্তাগুলো পাকা না হবার কারণে প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষকে দৈনন্দিন চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাকা সড়ক না থাকায় প্রতি বছর বর্ষাকাল এলে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা এসব এলাকার দুঃখ দুর্দশা লাঘবে পাকা রাস্তাা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও কখনোই সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরে এলাকাবাসী রাস্তার জন্য বিভিন্ন মহলের কাছে আবেদন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাল্লা বৈদ্যপুর ,কয়েলহাট,বানিয়াল,বোনকেশর, চকপাড়া,জিৎপুর কচুয়া, মোহনপুর গ্রামের মানুষ থানা সদরে যাতায়াত করে থাকে। গ্রাম থেকে দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে পাকা রাস্তায় আসার পর যানবাহনে উঠতে পারেন। যার কারনে একদিকে হয় সময় নষ্ট অন্যদিকে পিচ্ছিল পথে হাটতে পেতে হয় চরম বেগ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, এসব এলাকার বসবাসকারী মানুষ তাদের প্রয়োজনের কারণে অন্যত্রে যেতে পারেনা। আর দীর্ঘদিন ধরে কোনো সংস্কার কাজ না হওয়ায় চলাচলের উপযোগিতা হারানোসহ রাস্তার বিভিন্নœ অংশে পানি জমে থাকার কারনে জীবনের ঝুকি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে । বর্ষা হলে রাস্তাগুলো কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। সপ্তাহের এক দিন সোমবার একটি প্রাচীন হাট বসে মু-ুমালায়। দূর-দূরন্ত থেকে কৃষিপণ্য ও মালামাল মাথায় করে এলাকাবাসীকে মু-ুমালা হাটে যেতে হয় পণ্য বিক্রি করতে হয়।
এছাড়াও উপজেলার তালন্দ ইউপির কালনাগ্রামের আদিবাসীপাড়াসহ কয়েক কিলোমিটার মাটির রাস্তা এখনো হয়নি পাকা। বিশেষ করে আদিবাসী পাড়ার রাস্তাটি লালচে মাটির হবার কারনে পায়ে হেটে যাওয়া চরম কষ্টকর। পাড়ার মধ্যে রয়েছে দুটি বিশাল আয়তনের পুকুর। প্রটেশন অয়াল নির্মাণ না করার কারনে পুকুরে পানিতে রাস্তা সরু হয়ে পড়ছে।
আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা জেঠা টুডু সহ অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান বাংলাদেশ স্বাধীনের এত বছর পরও আমাদের পাড়ার রাস্তার দিকে কেউ ভুলেও দেখেনা। কিন্তু ভোটের সময় ভোট চাইতে এলে আমাদের একটাই দাবি থাকে রাস্তাটি পাকা করনের, তারাও প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হবার পর ঘুরেও দেখেনা। আমরা আদিবাসী বলে কি আমাদের কোনই মুল্য নেই।
বিগত দশ বছর ধরে আমাদের সরকার দেশ পরিচালনা করছেন, তারপরও কেন আমাদেরকে দুর্ভোগ নিয়ে চলতে হবে। এরকম টানা বৃষ্টি চলতে থাকলে রাস্তা ধসে পুকুরে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। এমনকি কারো অসুখ হলে যানবাহন পাওয়া যায়না। বাধ্য হয়ে গ্রাম্য ডাক্তাররাই আমাদের ভরসা। যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাটি পাকা করন করা অত্যান্ত জরুরী। তা না হলে নকশা থেকে মুল রাস্তা বিলীন হয়ে যাবে।
গাল্লা গ্রামের আবু সুফিয়ান ও সাদিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন মধ্যে গাল্লা গ্রাম একেবারেই অবহেলিত। জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি পাকাকরণের কথা বললেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। রাস্তাঘাট না থাকায় এ এলাকায় উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি।
ভোট এলে নেতারা রাস্তা করে দেয়ার স্বপ্ন দেখান কিন্তু ভোট চলে গেলে তারা আর মনে রাখেন না। এ এলাকায় কোনো মাইক্রোবাস, ট্রাক, নছিমন-করিমন, আটোরিকশা, আটো ভ্যান, পায়ে চালিত ভ্যান চলাচল করতে পারে না। রাস্তা পাকা না হওয়ার ধান ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে আসেন না।
ফলে তাদের ধান কম দামে বিক্রি করতে হয় । ফলে তারা ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকেও বঞ্চিত হন। এ এলাকার সন্তান সম্ভাবা মা, মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে নিতে হলে দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
কচুয়া আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ফুলমোহাম্মাদ বলেন, কৃষ্ণপুর থেকে কচুয়া গ্রামের এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন সাইকেল ও বই কাঁধে নিয়ে কলেজে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের । বর্ষা মৌসুমে কষ্টের কোনো শেষ থাকে না। যদি সরকার এই কৃষ্ণপুর থেকে মোহনপুর মোড় পর্যন্ত পাকা রাস্তা নির্মাণ করত তাহলে এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেত এলাকাবাসিরা।
বাধাইড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, গাল্লা গ্রামের রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মানুষের জনস্বার্থে রাস্তাটি পাকা করা উচিত।
পাঁচন্দন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন জানান, কচুয়া গ্রামের কাঁচা রাস্তাটি পাকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সরকার (এলজিইডি) তানোর উপজেলার প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, জনবল সঙ্কটের কারণে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা কাঁচা রয়েছে। আগামী অর্থ বছরে এই রাস্তাগুলি পাকা করার ব্যাপারে কিছু করা যায় কি না জরুরী ভিত্তিতে গুরুত্ব দেয়া হবে ।