টানা ভারি বর্ষণ উজান থেকে নেমে আসা পানিতে রাজশাহীর তানোরে ঢুবেছে শতশত একর জমির রোপা আমনের ধানের ক্ষেত। রোপণের সপ্তাহ না যেতেই পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং দিনের দিন এর সংখ্যা বাড়তেই আছে বলে একাধিক কৃষকরা জানান। অবশ্য উপজেলার নিচু এলাকার জমির রোপণকৃত ধান তলিয়ে যাচ্চে। আর উচু এলাকার জমির ধান সবুজে ঘেরা।
ওই সব জমিতে চলছে পরিচর্যার কাজ। অপর দিকে নিচু এলাকার জমিতে রোপা আমনের চারা রোপণের দশ থেকে বারো দিনের মধ্যে ঢুবে যাবার কারনে ওই সব জমিতে আর ধান হবার কোনই সম্ভবনা নেই। ফলে যাদের জমির ধানের চারা রোপণের এক সপ্তাহের মধ্যে তলিয়ে গেছে তাঁরা চরম হতাশায় দিন পার করছেন। কারন চারদিকে থইথই করছে পানি, দ্রুত নামার কোন সম্ভবনা দেখছেন না। এতে করে হাজার হাজার কৃষক চরম লোকসানের মধ্যে পড়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার নিচু এলাকা বলতে তানোর পৌরসভা, চান্দুড়িয়া এবং কামারগাঁ ইউপি এলাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন কামারগাঁ ইউপি এলাকার কৃষকরা। ওই ইউপির প্রতিটি ধানের মাঠে কমর হাঁটু পানি। কামারগাঁ ইউপির মালার মাঠ, ছাঐড়, হরিপুর, মাদারিপুর, জমশেদপুর, মালশিরা, দুস্থরামপুর, আমিরপুর, পারিশো দুর্গাপুর, শ্রীখন্ডা দমদমা, আব্দুল্লাপুর, মহাদেবপুর, মিরাপুরসহ পুরো এলাকার ধানের জমি এখন পানির নিচে।
পারিশো দুর্গাপুরগ্রামের কৃষক রিগান জানান মিরাপুর দিঘি মাঠে আমার ৫ বিঘা, রেজাউলের ৫ বিঘা, পারিশো দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাম কমল সাহার ১০ বিঘা, বকুল মেম্বারের ৩বিঘা, বাতাসপুর গ্রামের উজ্জলের ৩বিঘা,শরি বিশ্বাসের ৫বিঘা। তিনি আরো জানান রোপণের দশ দিনের মাথায় ঢুবেছে জমির ধান। আবার অনেক মাঠ থেকে পানি না নামার কারনে শতশত একর জমি পড়ে আছে।
কামারগাঁ ইউপির কৃষক ইউপি আ”লীগের সাধারন সম্পাদক সুফি কামাল মিন্টু জানান কত কৃষকের নাম বলব প্রতিটি মাঠের জমির ধান তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি নামার কোন আসা দেখছেনা এলাকার কৃষকরা। পানি নেমে গেলেও চারার অভাবে জমিগুলো পড়ে থাকবে। যদি কোনভাবে চারা পাওয়া যায় তাহলে নতুন করে ধান রোপণ করতে পারবে।
তানোর পৌর এলাকার হরিদেপপুর, গুবিরপাড়া, চাপড়া, ধানতৈড়, গোল্লাপাড়া, আমশো, জিওল, বুরুজ, কালীগঞ্জ এলাকার বিল ধারের জমির ধানগুলো পানির নিচে। ধানতৈড়গ্রামের আনারুল জানান বিল ধারে আশরাফুলের ২বিঘা, জিয়ারুলের দেড় বিঘা, রাব্বানীর এক বিঘা, আব্দুল অয়াহেদের ৩বিঘা, আফাজের পনের কাঠা। গুবিরপাড়াগ্রামের মুকবুলের আড়াই বিঘা, মশিউরের দেড় বিঘা, রমজানের ২৫ কাঠা, নাইমের ২বিঘা,
এন্তাজের এক বিঘা, সাহেবের এক বিঘা, আজিজুরের এক বিঘা।
গোল্লাপাড়াগ্রামের কৃষিবিধ নুর মোহাম্মাদ জানান গুদামের নিচে আমার আড়াই বিঘা, আলমগীরের ২ বিঘা, সমসেরের ২বিঘাসহ অনেকের জমির ধান পানির নিচে। তিনি আরো জানান চান্দুড়িয়া চৌকির ব্রিজ থেকে কামারগাঁ ইউপি পর্যন্ত কৃষকের ধান পানির নিচে। আমশো তাতিয়ালপাড়া গ্রামের ফিরোজ জানান আমার ৮বিঘা কাশেমের আড়াই বিঘাসহ অনেকের জমি ঢুবেছে। কাশেম বাজার বুরুজগ্রামের জুয়েল জানান আমার ১২ বিঘা, আপেলের ৯বিঘা, কুদ্দুস মিয়ার ১৫ বিঘা,বুলবুলের ৫ বিঘা, নারায়নের সাড়ে ৫বিঘা, গনির ১১ বিঘা, সুব্রতর সাড়ে বিঘাসহ ওই মাঠের সব জমি ঢুবে গেছে।
চান্দুড়িয়া ইউপির দেওতলা, শিবনা দমদমা ও বেড়ল পাড়া মাঠের জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই ইউপির মুসলেম উদ্দিন জানান বেড়লপাড়া মাঠে আমার ৩বিঘা, দেওতলা, বেড়লপাড়া, বিল দমদমা মাঠে সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিনের ৪০বিঘা, সোহেলের ১০ বিঘা, গাফফারের ২০ বিঘা, হাজী এহিয়ার ২০ বিঘা, সামেদের ৬ বিঘা, রাজ্জাকের ৮ বিঘা, হাজী কুড়ানুর ৮ বিঘা।
এছাড়াও সরনজাই ইউপির রহিমা ডাঙ্গা, চণ্ডিপুর এবং কলমা ইউপির কুযিশহর, আজিজপুর, ঘিতো কাঞ্চনপুর ও চন্দনকোঠা মাঠের জমির ধান বন্যার পানিতে ঢূবেছে বলে কৃষি অধিদপ্তর নিশ্চিত করেন। কৃষি বিজ্ঞানী নুর মোহাম্মাদ জানান যে সব জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে সেই পানি দ্রুত নামার আসা নেই। কারন চারদিকেই পানি আর পানি। আর পানি নেমে গেলেও রোপণকৃত ধানের চারা পচে যাবে।
প্রতি বিঘা জমি রোপণে প্রকার ভেদে খরচ হয় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা করে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের যদি সরকার আলাদা ভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করেন তাহলে কিছুটা হলেও লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাবে। কিংবা কোন এলাকা থেকে চারার ব্যবস্থা করে দিলে পুনরায় জমি রোপণ করতে পারবেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার শামিমুল ইসলাম জানান রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে। আর বন্যার পানিতে এপর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমির ধান। কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের দেয়া হবে। তবে ক্ষতির সংখ্যা আরো বেশি বলে কৃষকরা দাবি করেন।