মাত্র দেড় হাজার টাকা পকেটে নিয়ে মুম্বাই শহরে গ্যারেজে ঘুমানো সেই ছেলেটা আজ বলিউডের বেতাজ বাদশা। পৃথিবীর দ্বিতীয় সবচেয়ে ধনী অভিনেতা। কোটি কোটি মানুষের ইন্সপিরেশন। দিল্লি শহরের ন্যাশনাল অফ ড্রামায় একটি ছোট ক্যান্টিন চালাতো ছেলেটির বাবা। যা আয় হতো তা দিয়ে টেনে টুনে চলতো চার জনের সংসার। কিন্তু হঠাৎ একদিন গলায় ক্যান্সার ধরা পড়লো ছেলেটির বাবার।
এক বছর ক্যান্সারের সাথে লড়াই চালানোর পর বাবা যখন মারা গেলেন ছেলেটির বয়স তখন মাত্র ১৫ সেই শুরু হলো লড়াই। সংসার চালানোর জন্য ছেলেটির মা পথে নামলেন কাজ করতে। বোনও যতোটা পারতো সাহায্য করতো মাকে। অভাব অনটনের সাথে লড়তে লড়তেও পড়াশুনা চালিয়ে গেলো ছেলেটি।
কিন্তু আবার একটি ধাক্কা। মাত্র ২৫ বছর মা-কে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়লো ছেলেটি । অবসাদে ভুগতে শুরু করলো একসময় । সেই অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে সিদ্ধান্ত নিলো মুম্বাই পাড়ি দেওয়ার।
মাত্র দেড় হাজার টাকা পকেটে নিয়ে জীবনে প্রথমবার ছেলেটি পা রাখে মুম্বাই শহরে। গোটা মুম্বাই শহরে কেউ ছিলো না ছেলেটার। রেলওয়ে স্টেশন থেকে গ্যারেজ, স্টুডিওর ছাউনি থেকে লোকের অফিস, টিকেথাকার জন্য যখন যেখানে পেরেছিলো রাত কাটিয়েছিলো ছেলেটা ।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার তিনি বলেছিলেন, আমি যতটা সফল হয়েছি, তা পেরেছি কারন আমি ব্যর্থতা মানতে পারতাম না। সফল হওয়ার জন্য আমি কখনো এতটা প্রাণপণ চেষ্টা করিনি যতটা না করেছি ব্যর্থতাকে এড়ানোর জন্য।
আমি খুব সাধারণ এক নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। দারির্দ্য কি জিনিষ তা আমি খুব স্পষ্ঠভাবে চোখের সামনে দেখেছি। আমি জানি তার আসল রুপ কতখানি নিষ্ঠুর। যখন আমার বাবা-মা মারা যান দারির্দ্যর নিষ্ঠুরতার সঙ্গে আর একটি শব্দ যোগ হয় ব্যর্থতা।
আমি কোন মতেই আর দরিদ্র থাকতে চাইনি তাই যখন আমি অভিনয় শুরু করি, তার সঙ্গে সৃজনশীলতার কোন সম্পর্ক ছিলো না। আমি যে সব সিনেমা করতাম, তার বেশির ভাগই ছিলো অন্যদের ফেলে দেওয়া চরিত্র, অথবা এমন কিছু, যাতে কেউই অভিনয় করতে রাজি হয়নি। আমি সে সব চরিত্রের প্রতিটিতে অভিনয় করেছি শুধু একটা কারণে, যাতে আমাকে বেকার বসে না থাকতে হয়।
এসব করতে করতেই আমি এক সময় বড় অভিনেতা হলাম।সাফল্য তার নিজের নিয়মেই আমার জীবনে এসেছে, আমি আমার নিজের কাজটুকু করেছি মাত্র। এক নামজাদা পরিচালকের ছেলের বাতিল করা সিনেমাই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিলো ছেলেটির।
১৯৯২ সালের প্রথম সিনেমা ”দিওয়ানা”-ও জন্য পেলেন ফ্লিমফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। তার পর ডর, রাজু বানগায়া জেন্টলম্যান, বাজিগর, আঞ্জাম, কারন অর্জুনের মত একের পর এক হিট সিনেমা দর্শককে উপহার দিয়ে ছেলেটা পাকাপাকি করে জায়গা করে নিলো দর্শকের মনে। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গেলো ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া ”দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে”।
এই একটা ছবি বারতবর্ষের সীমানা ছাড়িয়ে দেশে দেশে ছড়িয়ে দিলো ছেলেটির নাম। গোটা পৃথিবী জানলো দিলীপ কুমার, দেবআনন্দ, রাজেশ খান্না, অমিতাভ বচ্চনের পর বলিউডে রাজত্ব করতে এসেছে আরেক সুপারস্টার। যার নামশাহরুখ খান।
তার গালের টোল কাপাঁ কাপাঁ গলায় কথা বলা দু-হাত ছড়িয়ে দাড়ানোর ম্যজিক আজও আছন্ন করে রেখেছে আট থেকে আশিকে। সৎ পথে থেকে নিজের ইচ্ছেশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা একজন মানুষ নিজেকে কোন উচ্ছতায় নিয়ে যেতে পারে শাহরুখ খান তার জলজ্যন্ত উদহারণ। সূত্র : ফাপরবাজ