বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতেই গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করে গুম প্রতিরোধে সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর আবেদন জানিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল -জেএস ডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশে গুম করার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। বাংলাদেশের গুমের ঘটনা বন্ধ করতে হেফাজতে থাকা ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তিদের নিরাপদে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সরকারের সমালোচকদের নিশানা করে অব্যাহতভাবে গুমের ঘটনা ঘটিয়ে চলছে।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত রাষ্ট্রে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো অপরাধ ক্রমাগত ঘটতে থাকলে এবং তার বিচার না হলে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তাই শেষ হয়ে যাবে। মানুষের জীবন সুরক্ষা দেওয়াই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলো কি ভয়াবহ সংকটে নিপতিত হচ্ছে। মানসিক ও অর্থসংকটে পরিবারগুলো দিশেহারা। আইনগত জটিলতার কারণে সম্পদ থেকেও তারা সম্পদের ব্যবহার করতে পারছে না। স্বজনকে ফিরে পেতে শিশুরা আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে কিন্তু রাষ্ট্র নিষ্পাপ শিশুদের হাহাকারে কোন সাড়া দিচ্ছে না। অথচ সরকার সত্যকে বারবার অস্বীকার করে যাচ্ছে। বরং রাষ্ট্র গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে দিনের পর দিন দায়মুক্তি দিয়ে যাচ্ছে। এ সর্বনাশা নীতি চলতে থাকলে সমাজ ক্রমাগত বর্বরদের দখলে চলে যাবে।
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে সকল রাষ্ট্র হত্যা-গুমের আশ্রয় নেয় তাদেরকে নিবৃত্ত করার জন্য জাতিসংঘ গুম বিরোধী সনদ চূড়ান্ত করে। এই সনদে বিশ্বের ৯০ টি দেশ স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ এখনও স্বাক্ষর করেনি। ফলে জাতিসংঘের মানবাধিকার অধিকার ফোরামের শুনানিতে বাংলাদেশ প্রায় নিয়মিতভাবে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে, যা জাতির জন্য খুবই লজ্জাজনক।
আমরা আশা করছি সরকার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে গুম বিরোধী জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষর করবে এবং বাংলাদেশ থেকে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অপসংস্কৃতি চিরতরে বিলুপ্ত করবে, যা হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে প্রকৃত শ্রদ্ধার নিদর্শন।
গুমের শিকার নিখোঁজ ব্যক্তিদের অবিলম্বে খুঁজে বের করার জন্য তিন দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন:
(১) বিচার বিভাগের নেতৃত্বে ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন’ গঠন করতে হবে।
(২) গুম অপহরণের সাথে যুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(৩) গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন করা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা আশা করছি সরকার অবিলম্বে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বর্বরতা থেকে জাতিকে মুক্ত করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।