গত আগস্ট মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩০২ টি। নিহত ৩৭৯ জন এবং আহত ৩৬৮ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬৬, শিশু ৩২। এককভাবে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ১২১ টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১২৯ জন, যা মোট নিহতের ৩৪.০৩ শতাংশ। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪০.০৬ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৮১ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১.৩৭ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৭ জন, অর্থাৎ ১২.৪০ শতাংশ।
এই সময়ে ১৩ টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত, ৩২ জন আহত এবং ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৬টি পৃথক রেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ জন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্টনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
দুর্ঘটনায় বাস যাত্রী ১৬, ট্রাক যাত্রী ৮, পিকআপ যাত্রী ১৫, কাভার্ডভ্যান যাত্রী ৩, মাইক্রোবাস যাত্রী ১৩, প্রাইভেটকার যাত্রী ১৭, ট্রলি যাত্রী ৩, লরি যাত্রী ১, ট্রাক্টর ২, জীপ ১, সিএনজি যাত্রী ১০, ইজিবাইক-অটোরিকশা যাত্রী ৪৬, নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র যাত্রী ২১, রিকশা যাত্রী ৬, লেগুনা যাত্রী ৩ এবং বাই-সাইকেল আরোহী ৪ জন নিহত হয়েছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে শিক্ষক ১১ জন, চিত্রশিল্পী ১ জন, পর্বতারোহী ১ জন, পুলিশ সদস্য ১ জন, গ্রাম পুলিশ ১ জন, বিমান বাহিনীর কর্মচারী ১ জন, পল্লী বিদ্যুতে চাকরিজীবী ১ জন, স্কুল প্রহরী ১ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৩ জন, ঔষধ ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ৯ জন , রাজমিস্ত্রী-কাঠমিস্ত্রী ২ জন, মিল শ্রমিক ২ জন, পোশাক শ্রমিক ৮ জন, মাছ-সবজি ও গরু ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ী ২৯ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ২ জন এবং শিক্ষার্থী ৫৮ জন (ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ১ জন ও ঢাকা কলেজের ১ জনসহ)। ফরিদপুর সদর উপজেলার এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজ কর্মএলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১১৩ টি (৩৭.৪১%) জাতীয় মহাসড়কে, ৯৮ টি (৩২.৪৫%) আঞ্চলিক সড়কে, ৫৩ টি (১৭.৫৪%) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৮ টি (১২.৫৮%) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনাসমূহের ৭৬ টি (২৫.১৬%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৮৭ টি (২৮.৮০%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৮৩ টি (২৭.৪৮%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৪৪ টি (১৪.৫৬%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১২ টি (৩.৯৭%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২০.৮৯ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ৩.৯১ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-এ্যাম্বুলেন্স-জীপ ৬.৫২ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৪.১৭ শতাংশ, মোটর সাইকেল ২৩.৬৯ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-লেগুনা) ১৬.৬০ শতাংশ, নসিমন-পাখিভ্যান-অটোভ্যান-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র ১০.৬৩ শতাংশ, রিকশা-বাইসাইকেল ২.৭৯ শতাংশ এবং অন্যান্য (ড্রামট্রাক, রোড রোলার, লাটা হাম্বার, কনস্ট্রাকশন মিকচার মেশিন) ০.৭৪ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা ৫৩৬ টি। (ট্রাক ৭২, বাস ৭৬, কাভার্ডভ্যান ১৬, পিকআপ ২৪, লরি ৭, ট্রলি ৬, ট্রাক্টর ৮, মাইক্রোবাস ১২, প্রাইভেটকার ১৭, এ্যাম্বুলেন্স ৪, জীপ ২, ড্রাম ট্রাক ১, রোড রোলার ১, লাটা হাম্বার ১, কনস্ট্রাকশন মিকচার মেশিন ১, মোটর সাইকেল ১২৭, বাই-সাইকেল ৪, নসিমন-পাখিভ্যান-অটোভ্যান ২৫, ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র ৩২, ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-লেগুনা ৮৯ এবং রিকশা ১১ টি।
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪.৩০%, সকালে ৩০.১৩%, দুপুরে ২২.১৮%, বিকালে ১৯.৫৩%, সন্ধ্যায় ১০.৯২% এবং রাতে ১২.৯১%।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৭৩ টি দুর্ঘটনায় নিহত ৮৪ জন। সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে। ২২ টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ জন। একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৬ টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত। সবচেয়ে কম মুন্সিগঞ্জে। ১ টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ:
১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; ২. বেপরোয়া গতি; ৩. চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; ৪. বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; ৬. তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; ৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; ৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; ৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি; ১০. গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সুপারিশসমূহ:
১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; ২. চালকদের বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; ৩. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; ৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা তৈরি করতে হবে; ৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; ৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; ৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; ৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; ১০. “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” এর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।