নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের উত্তাল পূর্নভবা নদী নাব্যতা হারিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে খরায় এর তলদেশ খেলার মাঠ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
নদীটিতে এক সময় ঢেউয়ের তালে চলাচল করতো অসংখ্য পালতোলা নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে চলতো চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, গোমস্তাপুর, রহনপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থানের ব্যবসা কেন্দ্র গুলোতে। সে সময়ে বিভিন্ন স্থানের বড় বড় হাট বাজারে ধান, পাট, আলু, বেগুন, সরিষা, কালাই, গমসহ বিভিন্ন পন্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের ছোট বড় নৌকায় পাল তুলে ছুটে চলতেন। শুধু পন্যই নয় হাট বাজার গুলিতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেতেন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি পশুপাখিও। ঐ সময়ে পূর্নভবা ছিল পূর্ন যৌবনা।
এলাকার এক মাত্র নদী পথ হিসাবে ব্যবহার করে অসংখ্য মানুষ ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন জীবিকার শক্ত ভীত গড়ে তুলেছিলেন। শুধু হাট বাজারই নয়, নদীটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল অনেক জনপদ। এ নদীর পানি দিয়ে কৃষকরা দুই পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সবুজ ফসল ফলাতো। এর পানি দিয়ে নানা ফসলে ভরে উঠত ফসলের ক্ষেত।
আবার ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতীর মাছের অফুরন্ত উৎস ছিল এই পূর্নভবা। মাছ পাওয়া যেত সারা বছর ধরে। ফলে জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন ও পাশের গ্রাম গুলিতে অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছিল। জীবিকা নির্বাহের জন্য জেলেরা রাত দিন ডিঙি নৌকায় জাল নিয়ে চষে বেড়াতেন মাছ ধরার জন্য। মাছ বিক্রি করে অসংখ্য জেলে পরিবারের সংসার চলতো।
সময় গড়িয়ে চলার সাথে সাথে সেই ভরা যৌবনা পূর্নভবা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। জেলে পরিবার গুলো হয়ে গেছে প্রায় বিলীন। পাড় গুলো হয়েছে কৃষি জমি। নদী গর্ভে জেগে উঠা চরে এলাকার শিশুরা খেলছে ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলা।
এক সময়ের ব্যবসা বণিজ্যের উৎস গুলো হয়েগেছে চিরতরে বন্ধ। থমকে গেছে নদী, নিভে গেছে বিপুল সম্ভবনা। নদীকেন্দ্রিক সম্ভবনা গুলো নিভে গেলেও কেউ কখনও এসব নিয়ে ভাবেনি। খরা মৌসুমে সরকারি ভাবে নদীটি খননের পদক্ষেপ নেয়া হলে অন্তত মরা খালে পরিণত হতো না।
নদীটি কখনও খনন বা রক্ষণা-বেক্ষনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। খরা মৌসুমে নদীর জায়গা দখল করে অনেকেই ধান চাষ করছেন। এভাবে চলতে থাকলে এক সময়ের উত্তাল পূনর্ভবা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে বলে বিশিষ্টজনরা মনে করছেন।