গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সুদের টাকা আদায় করতে বিধবা মা ও ১০ শ্রেনীতে পড়–য়া তার মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতে মাস খানেক পর আবারও এক গৃহবধুকে গাছের সঙ্গে বেধে পাষবিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া গৃহবধুকে নির্যাতনের অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত হলেন- কিশোরগঞ্জের নিকলি থানার ছাতিরচর এলাকার জুনায়েদ মিয়ার স্ত্রী শিলা আক্তার (২৫)।
এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের নিকলি থানার ছাতিরচর এলাকার ফজল মিয়া দীর্ঘদিন আগে জীবিকার খোঁজে তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আসে।
পরে কালিয়াকৈর উপজেলার সিনাবহ পশ্চিমপাড়া উন্দারটেক এলাকায় বন বিভাগের জমিতে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। কিন্তু ফজল মিয়ার সাথে পাশের বাড়ির জুনায়েদ মিয়ার অবৈধভাবে বনের জমিতে থাকা বসত-বাড়ির সীমানা দখলকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল।
এর জেরে গত শুক্রবার বিকেলে ফজল মিয়ার স্ত্রীর আয়েশার সাথে পাশের বাড়ীর জুনাইদের স্ত্রী শিলার ঝগড়া হয়। তাদের বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে জুনায়েদ ও তার স্ত্রী শিলা, সহযোগী নাসির মিয়া ও তার স্ত্রী সালেহা বেগম, আজিজ মিয়া, সাহেরা বেগম, শহরবানুসহ আরো কয়েক মিলে ওই গৃহবধু আয়েশাকে টেনে নিয়ে যায়।
পরে তারা গৃহবধু আয়েশাকে একটি আম গাছের সাথে বেঁধে মারপিট করে। নির্যাতনের সময় আয়েশা বেগমের মেয়ে নুপুর আক্তার এগিয়ে আসলে তাকেও মারপিট করা হয়। এ সময় তাদের ডাক চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং গৃহবধু আয়েশাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
পরে ওই গৃহবধু আয়েশা বেগম বাদী হয়ে ওইদিনই কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এদিকে এ ঘটনার পর গত বুধবার বিকালে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান ও সিরাজ উদ্দিনসহ কয়েকজন মাতাব্বর ওই গৃহবধুকে চাপ দিয়ে মীমাংসার জন্য শালিস বৈঠকে বসেন।
ওই বৈঠকে জুনায়েদকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু নির্যাতিতা গৃহবধু আয়েশা বেগম তাদের বিচার মেনে নেননি। পরে ওই গৃহবধু আয়েশা বেগম বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ ওই এলাকা থেকে জুনায়েদ মিয়ার স্ত্রী শিলা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে।
নির্যাতিতা গৃহবধু আয়েশা বেগম জানান, “জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে জুনায়েদ নাসির উদ্দিন, আজিজ, সালেহা, ও তাদের লোকজন আমাকে আম গাছের সাথে বেঁধে মারপিট করেছে। আমি ন্যায় বিচার চাই”।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান ও মাতাব্বর সিরাজ উদ্দিন জানান, পুলিশ স্থানীয়ভাবে মিমাংসার জন্য আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। পরে বৈঠকে বসে ওই গৃহবধুর চিকিৎসা খরচের জন্য ৫ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, আয়েশা বেগম নামে নারীকে নির্যাতনের অভিযোগে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিলা আক্তার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গৃহবধু আয়েশা বেগমকে গাছে বেধে নির্যাতনের মাসখানেক আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারী উপজেলার সিরাজপুর এলাকায় সুদের টাকা না পেয়ে বিধবা গৃহবধু মমতাজ বেগম ও ১০ শ্রেনীতে পড়–য়া তার মেয়ে মাহবুবা আক্তার ঝুমাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পাষবিক নির্যাতন করা হয়।