বগুড়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের নামে জমি কিনেছে এস আই ওহিদুজ্জামান। প্রাথমিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ইতোমধ্যে তাকে বদলিও করা হয়েছে। বগুড়ার শাহজাহানপুরের ফুলতলায় যুবলীগ কর্মি ফোরকান হত্যা মামলার আসামী পক্ষের কাছ থেকে জমি কিনে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই মামলা তদন্তকারি কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর মো: ওহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে।
গত ফেব্রুয়ারীর ২২ তারিখে শহরের ফুলতলা এলাকায় প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ কর্মি ফোরকান চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরদিন সকালে মারা যান ফোরকান।
এ ঘটনায় তার মা মোছা: শাহানা বেওয়া বাদি হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন শাহজাহানপুর থানায়। আসামীদের অনেকেই পরিচিত হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তারে নানা তালবাহানা করেন ওই তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: ওহিদুজ্জামান। অভিযোগ পাওয়া গেছে, আসামীদের থেকে টাকা নিয়ে নিজের নামে জমি কিনেন তিনি।
সাব রেজিস্ট্রিারের কার্যালয় থেকে পাওয়া ২৪৩৫ নম্বর দলিলে সাজাপুর মৌজায় ৪৭৯৯ নম্বর দাগে দাতা মালেকা বেওয়ার ৬ শতক জমি নিজ নামে কিনেন ওই কর্মকর্তা।
নিহত ফোরকানের মা মোছা: শাহানা বেওয়া জানিয়েছেন, “এ ঘটনায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারী শাজাহানপুর থানায় বাদি হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জানের নামে মামলা করেন।
ফোরকানের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ আসামীদের গ্রেপ্তারে ওই তদন্ত কর্মকর্তা যোগসাজশ করে ও গাফিলতি দেখিয়ে সময় পার করেছেন।
নিহত ফোরকানের ছোট ভাই মো: ফয়সাল জানিয়েছেন, “এলাকায় আসামীরা চলাফেরা করলেও তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তেমন আগ্রহ ছিল না এসআই ওহিদুজ্জামানের। কয়েকবার ফোন কারেও তাকে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন ফয়সাল।”
স্থানীয়দের অভিযোগ মো: ওহিদুজ্জামান নানা ধরনের অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত ছিল। মাদক সেবীদের সাথে তার ভালো সম্পর্ক ছিল সব সময়। অপরাধীদের সুযোগ করে দিয়ে তিনি নিজেও নানা সময় মাদক সেবন করতেন।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে দেখা যায়, এসআই ওহিদুজ্জামান টি শার্ট পরে আসামীর স্বজনদের সাথে উপজেলা পরিষদ চত্বরে দীর্ঘ সময় পার করেন। তাদের সাথে কয়েক দফা কথা বলতে এবং ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় ওই কর্মকর্তাকে।
তদন্ত শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই আইন লংঘন করে কর্মস্থলে ১৪ লাখ ৯০ হাজার টাকায় জমি কেনের তিনি। এলাকাবাসির অভিযোগ জমি কিনতে আসামী পক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন পুলিশের ওই সদস্য।
এস আই মো: ওহিদুজ্জামানের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, “জমি কেনার বিষয়টি সত্য তবে কারো কাছ থেকে বা আসামীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমি কিনেছি এমন অভিযোগ মিথ্যা।
বগুড়ার শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রশাসনিক কাজের স্বার্থে গত ১৩ মার্চ এসআই ওহিদুজ্জামানকে বদলি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বগুড়া পুলিশের মিডিয়া সেল প্রধান ও সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: ফয়সাল মাহমুদ জানান, প্রাথমিক তদন্তে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়ায় ওহিদুজ্জামানকে তৎক্ষনিকভাবে বদলি করে সিরাজগঞ্জে দেয়া হয়েছে। আর এ মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বগুড়ার গোয়েন্দা পুলিশকে।