সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লায় সংখ্যালঘুদের গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ও মন্দির ভাংচুর করে লুটপাটের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হকের অনুসারী ও ইউপি মেম্বারসহ ১৬০০জনকে আসামী করে ২টি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মামলা দায়েরের পর অভিযানে নামে পুলিশ। আজ শুক্রবার (১৯শে মার্চ) দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২২জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এঘটনার প্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থল সংখ্যালঘুদের গ্রাম নোয়াগাঁও পরিদর্শন করেছেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মশিউর রহমান ও পুলিশের রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ বিপিএম। তারা পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে ৩৭জনকে ৫হাজার টাকা করে আর বাকিদেরকে ১হাজার করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন- সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ইমন।
থানা সূত্রে জানা যায়- সংখ্যালঘুদের গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ও মন্দির ভাংচুর করে লুটপাটের ঘটনায় একটি মামলার বাদী হয়েছেন শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল। আর অন্য মামলাটি দায়ের করেছেন শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম।
মামলায় আসামী করা হয়েছে দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের চন্দ্রপুর, নাচনী ও শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের মাওলানা মামুনুল হকের ১৬০০জন অনুসারীকে। তাদের মধ্যে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার উস্কানিদাতা হিসেবে মামলার প্রধান আসামী করা হয়েছে দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নাচনী গ্রামের বাসিন্দা স্বাধীন মিয়াকে। দায়েরকৃত ২টি মামলায় ৭০-৮০জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে আর বাকি আসামীদেরকে অজ্ঞাত হিসেবে রাখা হয়েছে। তবে দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় বর্তমানে থমথম অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানাগেছে।
এলাকাবাসী জানায়- হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য বিরোধী নেতা বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস (৩০)। এঘটনার প্রেক্ষিতে মাওলানা মামুনুল হকের অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত মঙ্গলবার রাত ১১টায় ঝুমন দাসকে খোঁজে বের করে আটক করে থানায় সোপর্দ করে।
তারই জের ধরে এরপর দিন গত বুধবার সকালে শাল্লা উপজেলার কাশিপুর ও দিরাই উপজেলার নাচনি, সন্তোষপুর ও চন্দ্রপুর গ্রামের কয়েক হাজার মামুনুল অনুসারী দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র ও লাটি-সুটা নিয়ে সংখ্যালঘু গ্রাম নোয়াগাঁও গিয়ে ৮৭টি বাড়িঘর ও ৬টি মন্দির ভাংচুর করে লুটপাট করে।
শাল্লা থানার ওসি মোঃ নাজমুল হক এঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন- গ্রেফতারকৃত ২২জনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তের স্বার্থে আপাদত আসামীদের নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে দায়েরকৃত মামলার আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।