করোনার প্রকোপের মধ্যে প্রথম বিদেশ সফর। অভিজ্ঞদের সঙ্গে একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার নিয়ে সূদর নিউজিল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছেন বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। কিউইদের মাটিতে অতীত ইতিহাস বদলানোর তাড়না নিয়ে আজ শনিবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সময় সকাল হওয়ার আগেই শুরু হবে দুদলের দ্বৈরথ। ডানেডিনে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায়।
আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের অধীনে হচ্ছে এই সিরিজ। ঘরের মাঠে গত জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে এই সিরিজে যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশের। হোম সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জিতে পুরো ৩০ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে এবার হবে আসল পরীক্ষা। কারণ এবারের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড।
কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশের এবার সিরিজটা অনেকটা হিসাব-নিকাশ পাল্টানোর লড়াই বলা চলে। অধরা জয়কে স্পর্শ করার হাতছানি তামিম-মুশফিকদের সামনে। এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২৬ টি ম্যাচ খেলে একটিতেও জেতেনি বাংলাদেশ। ওয়ানডেতেও ১৩টি ম্যাচ খেলে জয়হীন বাংলাদেশ। সেই আক্ষেপই এবার মেটানোর স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। সূদর নিউজিল্যান্ড থেকে ক্রিকেটভক্তদের তেমনটাই আশা দেখালেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ জয় না দেখলেও সাফল্য আছে ডমিঙ্গোর। দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ হিসেবে ২০১৪ ও ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডে জয়ের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। এবার বাংলাদেশের হয়েও সেই স্বাদ নিতে চান প্রোটিয়া কোচ। বাংলাদেশকে নিয়ে একদিন আগে আশা দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো দল আগে যা করতে পারেনি, আমাদের জন্য তা করার দারুণ সুযোগ এবার।
আমরা সবাই এটি নিয়ে রোমাঞ্চিত। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডে আমার এটি প্রথম সফর। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আগে এখানে এসেছি, জানি এখানে কাজটা কতটা কঠিন। তবে তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এটি বড় সুযোগ।’ কিছু করে দেখাতে মরিয়া অধিনায়ক তামিম ইকবালও। নেতা হিসেবে তামিমেরও প্রথম বিদেশ সফর এটি।
প্রথম সফরেই ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার আশ্বাস দিলেন অধিনায়ক, ‘আমাদের ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হবে, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে হবে। আক্রমণাত্মক ক্রিকেট বলতে প্রতি ১০ ওভারে ১০০ রান করতে হবে, সেটা বোঝাইনি। কিংবা প্রথম ৫ ওভারে ৫ উইকেট নিয়ে নিতে হবে। ব্যাপারটি হলো, সবকিছুতে ইতিবাচক থাকতে হবে, যা-ই করিনা কেন।
যেহেতু আমাদের অতীত রেকর্ড ভালো নয় এখানে, সেহেতু ভিন্নভাবে কাজ করতে হবে, ভিন্নভাবে ভাবতে হবে।’প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ হলেও সিরিজটি হালকাভাবে নিচ্ছে না নিউজিল্যান্ড। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ও দলের প্রধান কোচ গ্যারি স্টিড তেমনটাই জানালেন। শততম ওয়ানডে খেলতে যাওয়া অধিনায়ক এই লড়াইয়ের জন্য বেশ মুখিয়ে আছেন।
ম্যাচের আগের দিন বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আমরা এই দুই দল পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছি বেশকবার। এখানেও খেলেছি। আমরা জানি, ওরা এমন এক দল যারা শেষ পর্যন্ত লড়ে যায়। এই সিরিজও ভিন্ন হওয়ার কথা নয়। অনেক সময় নিয়ে এবার তারা প্রস্তুতি নিয়েছে। আমরা মুখিয়ে আছি লড়াইয়ের জন্য।
বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না স্বাগতিক কোচও। তিনি বলেন, ‘তাদের হাতে থাকা সব বিকল্পের বিষয়ে আমরা খবর নিয়েছি এবং আমাদের সবটুকু কাজ করে রেখেছি। বাংলাদেশ ক্রমেই উন্নতির পথে থাকা একটি দল। আমার মনে হয়, এই দলের গভীরতাও বাড়ছে। আমরা তাদের হালকাভাবে নেব না। আমার মনে হয়, গত তিন-চার বছরে ওরা আগের চেয়ে বেশ ভালো মানিয়ে নিতে শিখেছে।
সবমিলিয়ে ভালো একটা লড়াইয়ের আশা করছে দুদল। একই সঙ্গে বাংলাদেশের চাওয়া নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয়ের খাতা খোলা। নিজেদের শেষ পাঁচ ওয়ানডের সবগুলোতে জিতেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে শেষ ম্যাচের তিনটিতে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। নিশ্চিতভাবে এই সিরিজে জয় নিয়ে বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলে শক্ত অবস্থায় যেতে চাইবে দুদল।
বাংলাদেশ দল : তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন দাস, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ নাঈম, তাসকিন আহমেদ, আল আমিন হোসেন, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন, মেহেদী হাসান ও নাসুম আহমেদ।
নিউজিল্যান্ড ওয়ানডে দল: টম ল্যাথাম (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), ট্রেন্ট বোল্ট, ডেভন কনওয়ে, মার্টিন গাপটিল, ম্যাট হেনরি, কাইল জেমিসন, ড্যারিল মিচেল, জেমস নিশাম, হেনরি নিকোলস, মিচেল স্যান্টনার, টিম সাউদি, রস টেইলর, উইল ইয়াং।