মিনিকেট চালের নামে সৈয়দপুরের ভোক্তাদের সাথে চলছে ব্যাপক প্রতারণা। চাল মিল মালিকসহ বড় বড় ব্যবসায়ীরা বিআরবি-২৮ বা ২৯ অথবা যে কোন মোটা চাল অটো রাইস মিলে ছাটাই করে মিনিকেট নামে লুফে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। এসব বিষয়ে বনিক সমিতি বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অবগত থাকলেও উৎকোচ বিনিময়ে তারা নিশ্চুপ।
কৃষি বিভাগ জানান সৈয়দপুর তথা বৃহত্তর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে মিনিকেট নামের কোনো ধরনের ধান নেই। এবং এ ধান আবাদও হয় না। আশির দশকে ভারতে বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট একটি সরু জাতের ধানের উদ্ভাবন করেন। ১৯৯১ সালে ভারতের ঐ সরু জাতের ধান ভারতের পর প্রথম চাষাবাদ শুরু হয় বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গার নবীনগরে।
প্রথম বছরেই দ্বিগুণ ফলন আর সরু চালের ভাত ওই এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। ধীরে ধীরে ব্যাপকতা ও পরিচিতি পেতে থাকে ওই ধানের। এক পর্যায়ে গত ৫/৬ বছর আগে দিনাজপুর, ঠাকুরগাও, পঞ্চগড়, রংপুর ও সৈয়দপুরেও এর চাষাবাদ শুরু হয়। এসব এলাকায় যে পরিমাণ সরু ধানের চাষাবাদ হয় তাদের চাহিদার ২০ শতাংশ ও পূরণ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সারা বছর কোথা থেকে ওই চাল সরবরাহ করা হয় বা হচ্ছে তা বুঝার উপায় নেই।
গ্রামের হাট বাজার থেকে আরম্ভ করে জেলা উপজেলার আড়ৎ ও চালের দোকানে মিনিকেট নামের ওই সরু চালের সয়লাব হয়ে গেছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন রংপুর ও রাজশাহীর মিনিকেট চালের মোকাম হচ্ছে কুষ্টিয়ার খাজানগর। এরপর যশোরের নওয়াপাড়া, কুষ্টিয়ার আল¬াহর দরগা, পাবনার ঈশ্বরদি, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, নীলফামারী ও সৈয়দপুর। কথিত চাল ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের মোটা চাল অটো রাইস মিলে ছাটাই করে মিনিকেট নামে বাজারজাত করে ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
অনেক ব্যবসায়ী বলছেন এক শ্রেণীর মিল মালিক বিআর-২৮, ২৯, ২৩, ২৪, ৩০ ও বিআর-৫০ সহ বিভিন্ন জাতের ধান মেশিনে মোম পালিশ করে সরু করছে। এরপর সেগুলি বস্তায় ভরে মিনিকেট সিল ব্যবহার করে বাজারে সরবরাহ করছে তারা। এমনকি হাইব্রিড ধানের চালও মেশিনে সরু করে মিনিকেট চাল বলে বিক্রি করা হচ্ছে। মোটা যে চাল বিক্রি করা হয় ৪০-৪২ টাকা কেজি দরে। সেই চাল ছাটাই করে মিনিকেট নাম দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে। এতে ভোক্তারা প্রতারিত হলেও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন মিল মালিকসহ অসাধু বেশ কিছু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন।
এ বিষয়ে সৈয়দপুরের অটো রাইস মিলের মালিক আফজাল হোসেন জানান, বড় বড় চাল ব্যবসায়ীরা মোটা চাল সরু করেন সত্য কিন্তু এরপর সেগুলি কোন নামে বিক্রি করা হচ্ছে তা তিনি বলতে পারবেন না। তবে ভোক্তাদের সাথে যারা প্রতারণা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
একই কথা জানান, সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা আলম। তিনি জানান, যে দেশে মিনিকেট নামের কোনো ধান নেই সে দেশে মিনিকেট চাল আসে কোথায় থেকে। যারা মোটা সরু করে মিনিকেট ধান/চাল বলে বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।