বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে সবুজ ধানের পাতাগুলো। আর এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে উঠছে কৃষকের স্বপ্ন।
কদিন পরেই সবুজ চারাগুলো হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ। রাশি রাশি সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষাণীর শূন্য গোলা।
সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক এনামুল হক তার চার বিঘা জমিতে এবার ইরি বোরো চাষ করেছেন। সুষ্ঠু সবল সবুজ ধানের চারাগুলো হাতড়াচ্ছিলেন তিনি।
এমন সুন্দর চারা দেখে তার মনটা খুশিতে ভরে উঠেছে। এবছর সার ও বিদ্যুতের কোনো সংকট না থাকায় খুবই ভালো ফলনের আশা করছেন বলে জানান তিনি।
কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি ইরি বোরো মৌসুমে প্রতি বিঘায় অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ মণ ধান উৎপাদন হবে বলে জানান তিনি। সলঙ্গা থানার চড়িয়া মধ্যপাড়া গ্রামের জলিল মিয়া তার বিশ বিঘা জমিতে ইরি বোরো ধান লাগিয়েছেন। নিজ জমিতে বালাইনাশক দিতে দিতে এখন পর্যন্ত ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। ফলন খুব ভালো হবে জানান তিনি।
তাড়াশ উপজেলার সাস্তান গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আসার আলী ও একুই গ্রামের আব্দুস সালাম, মাধবপুরের হাবিব মন্ডলসহ অনেকেই বলেন, এবছর বিদ্যুৎ ও সারের কোনো সংকট হয়নি। যে কারণে ফসলের চেহারা অনেক সুন্দর হয়েছে। সবল-সতেজ চারাগুলো দেখে মনে হয় ধানের ব্যাপক ফলন হবে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলনবিল, অধ্যুষিত রায়গঞ্জ, তাড়াশ, সলঙ্গা, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর অঞ্চলের নিচু জমিগুলো এ বছরে প্রায় ৩-৪ মাস বন্যা ও পানির নিচে তলিয়ে থাকে। ফলে তারা ইরি বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল। ভালোভাবে এ ইরি বোরো ফসল ঘরে তুলতে পারলে তাদের সারা বছরের চাহিদা পূরণ হয়। এ কারণেই ইরি বোরো মৌসুকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখে এ অঞ্চলের চাষিরা।
এবছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চাষিরা ধান রোপণ করেছেন। যথা সময়ে সার, বালাইনাশক ও সেচ দিতে পারায় প্রাথমিকভাবে চারাগুলো উজ্জীবিত রয়েছে। ধান গাছে শীষ গজানো থেকে শুরু করে ধান পাকার আগ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো ফলন হবে বলে জানান কৃষকেরা।
তবে বাজারে ধানের পর্যাপ্ত মূল্য না থাকায় হতাশাও প্রকাশ করেছেন চাষিরা। কৃষকদের দাবি, এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে যে পরিশ্রম আর ব্যয় করা হয়, সে তুলনায় ধানের মূল্য তারা পাচ্ছেন না। ফলে ধান চাষের আগ্রহও হারিয়ে ফেলছেন অনেক কৃষক।
তাদের দাবি সরকার যেমন করে সার-বীজ, কীটনাশক ও বিদ্যুতের ঘাটতি মিটিয়েছে, তেমনই ধানের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করলে প্রান্তিক চাষিদের দুঃখ-দুর্দশা ঘুচে যাবে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর সিরাজগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় ইরি বোরো চাষ বেড়েছে। তবে চলনবিল অধ্যুষিত চারটি উপজেলায় ব্যাপকহারে ধান উৎপাদন করা হচ্ছে। পুরো জেলায় এক লাখ চল্লিশ হাজার ছয় শত নব্বই হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু হানিফ জানান এ বছর এখন পর্যন্ত ইরি বোরো চাষে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। সার, বীজ ও বালাইনাশক সংকট ছিল না।
তাছাড়া নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকায় সেচ কার্যক্রমও সঠিকভাবে চলেছে। ফলে এবার ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, এবছর এক লক্ষ্য চল্লিশ হাজার ছয় শত নব্বই হেক্টর জমিতে ইরি বোরো চাষ করা হয়েছে। লক্ষ্য মাত্রা প্রতি হেক্টর ৪ দশমিক ২৩ মেট্রিক টন। যেটা গত বছরের চেয়ে বেশি।