দিনাজপুর জেলার বিরামপুরে শশুরের কু-প্রস্থাবে রাজি না হয়ে প্রতিবাদ করায় পুত্রবধু মোস্তারিনা আকতার শিখা স্বামীর বাড়ি ছেড়ে দীর্ঘদিন ধরে বাবার বাড়িকে অবস্থান করছে। ঘটনাটি ঘটিয়েছে বিরামপুর পৌর শহরের হাবিবপুর গ্রামের বেলাল হোসেন(৬৫) নামে এক লম্পট শ^শুর । ওই ঘরছাড়া পুত্রবধু মোস্তারিনা এখনও উপজেলার দেউল গ্রামে দরিদ্র পিতা মাহাবুর রহমানের ঘরে লজ্জ্বায় মুখঢেঁকে গুমরে গুমরে কাঁদছেন।
মোস্তারিনার পিতা মাহাবুর রহমান জানান, শ^শুরের এমন কু-রুচিপূর্ণ আচরণের কারণে ও যৌতুকের দাবী করায় ঘর ভেঁঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে আমার মেয়ে মোস্তারিনার।
পুত্রবধুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক শ^শুরের এমন আপত্তিকর আচরণের বিরুদ্ধে দিনাজপুর আদালতে দেনমোহর আদায়, যৌতুক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটিসহ অন্যান্য আরো একটি মামলা শ^শুর বেলাল হোসেন ও স্বামী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করেছেন বলে মোস্তারিনা জানিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট ২০২০ইং তারিখে বিরামপুর পৌর শহরের ৬নং ওয়ার্ডের হাবিবপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান (২৫) এর সাথে উপজেলার জোতবানি ইউনিয়নের দেউল গ্রামের মাহাবুর রহমানের মেয়ে মোস্তারিনা আক্তার শিখা (১৫) এর সহিত বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই পুত্র বধু মোস্তারিনার উপর শ^শুর বেলাল হোসেনের কু-নজর পড়ে। বিষয়টি স্বামী মিজানুরকে জানিয়েও কোন সুরাহা না পেয়ে মোস্তারিনা তার বাবা মা’কে জানায়।
এ ঘটনার কথা বিয়াই বিয়ান জানতে পেরেছে শুনে শ^শুর বেলাল হোসেন পুত্র বধুর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। পুত্রবধুকে জব্দ করতে তিনি ২ লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবী উত্থ্যাপন করে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। সেই থেকে অদ্যাবধি মোস্তারিনা স্বামী সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতেই রয়েছেন। এক দিনের জন্যও তার স্বামী মিজানুর রহমান ও শ^শুর বাড়ির কোন খোঁজ খবর নিতে আসেনি। মোস্তারিনার শ^শুর ও স্বাামী বিভিন্ন স্থানে মানুষের মাঝে কোন বিয়েই হয়নি এমন অপ-প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ওই বিয়ের কনে ও বরের পক্ষে সাক্ষী ছিলেন আঃ রশিদ ও বরের আপন বড় বোন জামাই দেউল গ্রামের সিরাজুল ইসলাম এবং উক্ত আলোচিত বিয়েটি মৌলভী হিসেবে বিয়ে পড়িয়েছিলেন উপজেলার দক্ষিণ দামোদরপুর গ্রামের নবির উদ্দিনের ছেলে আব্দুল গফুর। বিয়েটি উপজেলার জোতবানি ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার্ড কাজী মফেজ উদ্দিন সরকার নিজ বাড়িতে নিজ হাতেই নিকাহ রেজিষ্ট্রেশন সম্পদান করেন বলে উক্ত নিকাহ নামায় সাক্ষ্য প্রদানকারী আঃ রসিদ, সিরাজুল ইসলাম, মশিউর রহমান ও মাহাফুজ সরকার সহ আরো অনেকে নিশ্চিত করেছেন।
বিয়ের সময় মোস্তারিনার বয়স ছিল ১৩ বৎসর। অপ্রাপ্ত বয়সে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী মফেজ উদ্দিন সরকার কিভাবে বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করেন তা কাহারো বোধগম্য নয়। উক্ত বিয়েতে দেনমোহর করা হয় ছয় লক্ষ টাকা এর ফি হিসেবে ৯ হাজার টাকা কাজী নিয়েছেন বলেও স্বাক্ষীরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জোতবানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পুত্রবধুর সাথে শ^শুরের এমন বাজে আচরণ শুনে হতবাক হয়েছি। কি করে শ^শুর ছেলের স্ত্রীর সাথে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে!
ঘটনার বিষয়ে মোস্তারিনার শ^শুর বেলাল হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি আরও জানান, আমার পুত্র বধু মোস্তারিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। তবে কাজী মফেজ উদ্দিন সরকারেরর সাথে আমার বোঝাপড়া হবে।
বিয়ে রেজিষ্ট্রির ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত মিথ্যা নাটককারীদের বিরুদ্ধে আসল সত্য উদ্ঘটনের জন্য আইনি সহায়তা চেয়ে দিনাজপুর বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেছি। সেটি এখন জেলা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন এ তদন্তনাধীন রয়েছে।
এলাকার সর্বস্থরের সচেতন মহল শ^শুর বেলালের কু-কর্মের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করেছেন। সেই সাথে শ^শুরের লালশার বলি পুত্রবধু মোস্তারিনার বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।