সরকার একটি রাষ্ট্রের মালিক নয়, মালিক হলো রাষ্ট্রের জনগণ। সরকার শুধু মাত্র নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়। তাই জবাবদিহিমূলক সমাজ গঠনে সরকার ও বিরোধীদল উভয়কেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিরোধীদল কেবল বিরাধীতার জন্য বিরোধীতা করবে না। তবে বিরোধীদলকে চাপে রাখার মানসিকতাও পরিহার করতে হবে। দেশে উন্নয়নের পাশাপাশি বৈষম্য ও দুর্নীতিও আছে। বৈষম্য ও দুর্নীতি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ক্ষত। দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে আরো কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত স্বাধীনতা দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, এমপি এসব কথা বলেন।
অন্যদিকে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধ সহ বৈষম্যহীন, অসম্প্রদায়িক ও ন্যায় বিচার ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরির শপথই হোক স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আজকের মূলমন্ত্র।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে এই প্রতিযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ কে পরাজিত করে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা বিজয়ী হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক চর্চা এখনো পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। মুক্ত চেতনায় বিবেকবান হয়ে উদারতার সাথে গঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে। গঠনমূলক সমালোচনা না থাকলে রাষ্ট্র সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়না। ব্যাক্তি কেন্দ্রীকতা পরিহার করে অন্যের যুক্তিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ভূল থেকে শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা উচিত। অতীতের সরকারগুলির সাথে বর্তমান সরকারের পার্থক্য এই যে অতীতের সরকার অপরাধ এবং অপরাধীকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বর্তমান সরকার কোন অপরাধকে ধামাচাপা না দিয়ে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ফসলে আজ আমরা খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ, নারী শ্রমিকরা পোশাক শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে, অভিবাসী শ্রমিকদের অর্থে রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে, কলকারখানার শ্রমিকরা রপ্তানি আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই সময়ে আমরা কি এসব শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ন্যায্যতা রক্ষা করতে পারছি ? যাদের অবদানে এই অর্জন তাদের কতটুকু হিস্যা আমরা পূরণ করতে পেরেছি ? নাকি ধনী দরিদ্রের বৈষম্য বাড়িয়ে কিছু সংখ্যক মানুষের অন্যায্য সুবিধা আমরা প্রদান করে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা যেভাবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করছি, মাথা পিছু আয় বেড়েছে, জীবন যাত্রার মান্নোয়ন ঘটেছে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহ সর্ব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছি। একেইভাবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার শপথ নিতে হবে, দেশের অর্থ লুণ্ঠনকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে, বিদেশ অর্থ পাচারকারীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতে হবে, ধর্মের নামে অপরাজনীতিকারীদের প্রতিহত করতে হবে।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সহযোগী অধ্যাপক জোসিন্তা জিনিয়া, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, রোজিনা ইসলাম এবং পার্থ সঞ্জয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।