বাগেরহাটের মোল্লাহাটে ইউপি সদস্য প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক বৃদ্ধ নিহতের জেরে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি বসত ঘর ভাংচুর ও লুট করেছে প্রতিপক্ষরা।এঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ফের সংঘর্ষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।প্রাণ ও মূল্যবান সম্পদ রক্ষায় অনেকেই এলাকার বাইরে অবস্থান করছেন।এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার (০১ এপ্রিল)বিকেলে মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মামুন শেখ ও কিবরিয়া শরীফের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়।এদের মধ্যে আসাদ শেখ (৭০) নামের এক বৃদ্ধকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিলে সন্ধ্যায় তিনি মারা যায়।ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার (০২ এপ্রিল)জুমআবাদ নিজ বাড়িতে নিহত আসাদের শেখের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহতের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
নিহতের ভাইয়ের ছেলে ইউপি সদস্য মামুন শেখ বলেন, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী কিবরিয়া শরীফের লোকেরা আমাদের বাড়িতে এসে আমার চাচাকে মারধর এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। এসময় আমার চাচার ছেলে আরিফকেও মারধর করেছে তারা।পরে আমরা শেখ আসাদ চাচাকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিলে সেখানে তিনি মারা যান।
পরবর্তীতে আমাদের লোকজন ওদের কাছে জানতে গেলে আবারও সংঘর্ষ হয়।কিবরিয়ার লোকজন আমাদের কিছু কর্মীর বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে। শুনেছি আমাদের কর্মীরাও কিবরিয়ার সমর্থকদের বাড়ি-ঘরে ভাংচুর চালিয়েছেন। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাই।
নিহতের ছেলে আহত আরিফ শেখ বলেন, নির্বাচনী বিরোধের জেরে মিকাইলের নির্দেষে শত্রুপক্ষ আমাকে মারধর করছিল।আমাকে ঠেকাতে গেলে সন্ত্রাসীরা আমার বাবাকে বেধরক মারপিট করে।পরবর্তীতে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিলে আমার বাবা মারা যায়। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই।
এদিকে আসাদ শেখের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার রাতে মামুন শেখের লোকজন স্থানীয় ছবেদ আলী মোল্লা, মিকাইল চৌধুরী, সামাদ মোল্লা, আনিস চৌধুরী, শওকত চৌধুরী, ছবে আলী ভুইয়া, পলাশ শরীফসহ অন্তত ২০-২৫টি বাড়িতে ভাংচুর চালায়।এর মধ্যে ছবেদ মোল্লার দুইতলা বাড়ির আট ভাইয়ের ঘরের মালামাল নগদ টাকা লুট করে নেয় ভাংচুরকারীরা এমন অভিযোগ ওই পরিবারের।
ছবেদ মোল্লার পুত্রবধু তানিয়া বেগম ও রাবেয়া বেগম বলেন, রাতে ইউপি সদস্য শেখ মামুন ও ওয়ালিদ শিকাদারে নির্দেষে কয়েকশ লোক লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসেন। প্রাণভয়ে আমরা বাগান ও ধান ক্ষেতে আশ্রয় গ্রহন করি। তারা ঘেট ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে সবকিছু ভাংচুর করে। ঘরে থাকা প্রায় ৮ লক্ষ টাকা, ২০ থেকে ২২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, টিভি, ফ্রিজসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।আমাদের একেবারে নিস্ব করে দিয়ে গেছে। শুধু আমাদের বাড়িতে নয়, আমার ননদের বাড়িসহ আশপাশের অনেকের বাড়িতেই এমন তান্ডব চালিয়েছেন মামুন শেখ ও শিকদার বাড়ির লোকেরা।
ছবেদ মোল্লার মেয়ে নাছিমা বেগম এবং আত্মীয় মোসা হালিমা বেগম বলেন, আমার ভাইরা প্রবাসে থাকেন।বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে আমার ভাবিরা বাড়িতে থাকেন। কাল রাতে যে তান্ডব চালিয়েছে, তা ভাষায় বর্ণনাতীত।আবারও তারা তান্ডব চালাতে পারে। তাই বাড়িতে থাকার সাহস পাচ্ছি না। মূল্যবান মালামাল সব নিয়ে গেছে। তারপরও যেটুকু সম্বল রয়েছে তাই নিয়ে বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছি।
দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে পরে আহত গ্রাম্য চিকিৎসক আরিফ শরীফ বলেন, মামুন শেখ ও কিবরিয়া শরীফের সমর্থকদের মধ্যে কয়েকদফা সংঘর্ষ ঘটে।এই সংঘর্ষে স্থানীয় ভুইয়া, শিকদার, শেখ ও মোল্লা বংশের লোকেরা অংশ নেয়।এতে অনেক লোকজন আহত হয়েছেন। একজন নিহত হয়েছেন। এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ভাংচুরের নির্দেষ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ালিদ শিকদার বলেন, আমি ঢাকাতে থাকি। এলাকার কোন বিবাদে আমার কোন ভূমিকা নেই। আমি চাই এলাকার মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক। সেই সাথে যারা প্রকৃত অপরাধি তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।
মোরগ প্রতিকের প্রার্থী কিবরিয়া শরীফ বলেন, মামুনের লোকজন আমার সমর্থকদের বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুট করেছে।আমি সকল ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর শাফিন মাহমুদ বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষে আসাদ শেখ নামের একজন নিহত হয়েছেন।এছাড়া এ ঘটনার জেরে উভয় পক্ষের প্রায় ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। ফের সংঘর্ষ এড়াতে ওই গ্রামে অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।