“একোন আজাবের মধ্যে পড়লাম, কাজ শেষে বাড়ি যেতে পারলাম না। সন্ধ্যার পরে ঝড় বৃষ্টিতে আটকে পড়ি। রাতে রাজশাহীর গাড়ি না পাওয়ায় বাসস্ট্যান্ডে কেটেছে নির্ঘুম রাত। দুপুর ১২টায়ও কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। কিভাবে বাড়ি যাবো, কি খাবো, কোথায় থাকবো সব কিছু মিলিয়ে যেনো এক আজাবের মধ্যে পড়িছি”। এমনই অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন রাজশাহী থেকে বাগেরহাটে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে আসা আসা আবদুল করীম ও আনারুল ইসলাম।
দুপুর ১২টায় বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে বসা (রাজম্ত্রিী) শ্রমিক দুই যুবক আবদুল করিম ও আনারুল বলেন, ১৫ দিন পূর্বে বাগেরহাটের সাইনবোর্ড এলাকায় আসি রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে। গতকাল (৪ মার্চ) কাজ শেষে ব্যাগ গুছিয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা দি। পথের মধ্যেই হঠাত ঝড়ের মধ্যে পড়ে যাই। বাসস্ট্যান্ডে পৌছাতে বেজে যায় রাত ১০টা।
কোনো গাড়ি নেই, বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও নেই। সারারাত এই যাত্রী ছাউনিতেই বসে ছিলাম। ভোর থেকেই অপেক্ষা করছি যদি কোনো ব্যবস্থা হয় বাড়ি ফেরার। এরপরেও রিক্সায়, ভ্যানে, মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ভাড়া ৩ গুন হওয়ায় যেতে পারছি না, কি করবো।
এভাবে বাড়ি ফিরতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন কর্মহীন অনেক মানুষ। বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছেন যদি কোনো ব্যবস্থা হয় বাড়ি ফেরার। পটুয়াখালী থেকে আসা ৫’জন বিদ্যুত শ্রমিক আটকে আছেন বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে, গন্তব্যে যশোর ও খুলনা। তাদের মধ্যে থেকে রিপন, আকাশ বলেন, আমরা পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে পোল নাম্বারিং এর কাজ করতাম।
কাল রাতে কাজ শেষে আমাদের বাড়ি ফেরার কথা ছিলো। কিন্তু রাতে ঝড়-বৃষ্টি হওয়াতে ফিরতে পারিনি। ভোরে উঠে বিভিন্ন যানবাহনে করে বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডের পৌছাই। কিন্তু এখন আর কোনো পথ পাচ্ছি না যাওয়ার।
অসুস্থ বোনকে দেখতে যেতে হবে খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে। বোন বেশি অসুস্থ। পন্যবহনকারী কোনো ট্রাক বা পিকআপ দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন বাগেরহাট কেবি বাজার এলাকার বাসিন্দা মোঃ সাইফুল ইসলাম, যদি কোনো ভাবে যাওয়া যায়।
গনপরিবহন বন্ধ থাকায় একটু দূরের পথ যেতে সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়েই উঠতে হচ্ছে অটোরিক্সা বা ভ্যানে। অনেকেই আবার দুই থেকে তিন গুন বেশি ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছেন গন্তব্যে।
এদিকে বাগেরহাটের কয়েকজন রিক্সাচালক বলেন, লকডাউনের কারনে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত তেমন কোনো আয়-রোজগার করতে পারিনি। একদিকে কিস্তির টাকা পরিশোধের চিন্তা অন্যদিকে সংসারের খরচ। এই নিয়েই আছি মহা সমস্যায়।
অন্যদিকে বাগেরহাটে শহরের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ দোকানের সামনে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে স্থানীয়দের। কেউ খবরের কাগজ পড়ছেন, কেউ বা দিচ্ছেন আড্ডা। তবে লকডাউনের প্রথম দিনে বেশিরভাগ মানুষ-ই মাস্ক পরিহিত ছিলেন।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা কাজ করছি। কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সে বিষয়টিকে সামনে রেখে খুব দ্রুতই আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে সকল মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতন থাকার আহবান জানান তিনি।