আইনজীবীর ফি আর মামলার খরচ যোগাতে নিঃস্ব থেকে আরও নিঃস্ব হয়ে পড়েছে দিনাজপুরের ১৩টি থানার হাজার হাজার মানুষ। একশ্রেণীর দুষ্ট লোকের খপ্পরে পড়ে সাধারণ মানুষের যেমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে, পক্ষান্তরে এই সুযোগে কিছু কিছু আইনজীবী দিন দিন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন। এদিকে জমি-জমা, বাড়ীর জিনিসপত্র খুইয়ে বছরের পর বছর মামলার খরচ যুগিয়ে খালি হাতে ফিরছে তারা।
প্রতিমাসে দিনাজপুরের আদালত পাড়ায় উকিল মক্কেলের মধ্যে লাখ লাখ টাকার লেনদেন হলেও মামলার শতকরা ৯০ ভাগেই শেষ মীমাংসা করতে বাধ্য হচ্ছে ভুক্তভোগীরা। এ অবস্থায় দিনাজপুরবাসীর মধ্যে বর্তমান সরকারের প্রস্তাবিত বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন ‘র’ সফল ও ব্যাপক প্রয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রায় ৩০ লাখ লোক সংখ্যা বিশিষ্ট এ জেলায় প্রতিমাসে আদালতে গড়ে প্রায় ৩ শতাধিক মামলা হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে চলচে এ মামলা। একশ্রেণীর মানুষ হয়রানিমূলকভাবে আর একজন এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঠুকে দিচ্ছে মামলা। আর এ মামলার জবাব দিতে প্রতিপক্ষও করছে পাল্টা মামলা। ফলে মামলার সংখ্যা দিন দিন ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। কখনও কখনও গ্রাম্য মাতব্বরের বিরুদ্ধেও মামলা করছে গ্রামের নীরিহ জনগণ।
এসব মামলা চালাতে তারা দৌড়াচ্ছেন জেলা আদালত ও থানায়। শুধুমাত্র জেলা জজ আদালত এবং ম্যাজেস্ট্রট আদালতেই প্রতিমাসেই হচ্ছে ৩ শতাধিক মামলা। এ মামলা চালাতে উকিলকে দিতে হচ্ছে অর্থ। বছরের পর বছর দিয়ে যেতে হচ্ছে এভাবে। শুধু উকিলকে নয়, আদালতে নির্ধারিত হারে দিতে হয় টাকা আদালত পাড়ায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুর জেলা আদালতে প্রায় ৫০০-এর বেশি আইনজীবী তালিকাভুক্ত। এরমধ্যে প্রায় শতাধিক পেশায় সক্রিয়। এদের প্রত্যেকের গড় আয় প্রতিদিন প্রায় ১০০০ টাকারও অধিক।
কোন কোন আইনজীবী প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকাও আয় করছেন। এর সর্বটাই মক্কেলের দায়ের করা মামলা থেকে রক্ষা পেতেে এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সচল রাখতে সাধারণ মানুষ নিজের যা কিচু সম্বল তা বিক্রি করে এনে তুলে দিচ্ছেন আইনজীবীদের হাতে। গড় হিসেবে প্রতিমাসে উকিল মক্কেলের মধ্যে লেনদেন হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
এই অর্থ দিয়ে বছরের পর বছর শত শত মামলা জিইয়ে রাখা হয। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে করা হয় ডাকাতি, চুরি, নারী নির্যাতন, হত্যা, ছিনতাই, রাহাজানি ইত্যাদি প্রচেষ্টা সহ অনেক মামলা। বছরের পর বছর ধরে মামলা ঝুলতে থাকায় বিভিন্ন মামলায় আটক ব্যাক্তিরাও বছরের পর বছর হাজত খাটতে থাকেন। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষ বসেন শালিস মীমাংসায়। উভয়পক্ষ সম্মত হন মামলা তুলে নিতে।
এভাবে শতকরা ৪০ ভাগ মামলা দীর্ঘ সময় ধরে চলার পর তুল নেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। শেষ মীমাংসা হবার পরে তারা নিষ্কৃতি পান মামলা থেকে। কিন্তু এরই মধ্যে ঘটে যার অনেক কিচু। অনেক পরিবার জমিসহ যা কিছু বিক্রি করে মামলার খরচ যোগচ্ছে। শত শত ব্যক্তি বিনাদোষে হাজত খাটছে দীর্ঘ সময়। যারা হাজত খাটছে তাদের বিচারগুলো দীর্ঘ সময়ে হওয়ায় তাদের পথে বসা ছাড়া আর কিছু নেই।
এবাবে দিনাজপুরের ১৩টি থানার মানুষ নিঃস্ব থেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। তবে দিনাজপুরের আদলতে যেসব মামলা দায়ের করা হয় তার সবই যে কেবল মীমাংসা করা হয় তা নয়।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, শতকরা ১০ ভাগ মামলা বিচার শেষে আইনের ফাঁকফোঁকর দিয়ে অপরাধীরা বেরিয়ৈ এসে আবার অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। শতকরা ৫ ভাগ মামলায় বিচারকার্য শেষে যথাযথ অপরাধীরা সাজা পাচ্ছে। বাকী শতকরা ৫ ভাগ মামলা আইনগুত ত্রুটির কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মূলত পুলিশের দেয়া ত্রুটিপূর্ণ চার্জসীট, সাক্ষী কর্তৃক সত্য ঘটনা চেপে যাওযায় এসব ঘটনা ঘটছে।
আইনজীবীরা কোন ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের সাক্ষীকেও বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব কারণে অচিরেই মামলা নষ্ট হয়। তবে মামলার ভাগ্যে যাই ঘটুক না কেন, উকিলের বাগ্যে ঘটছে উল্টোটা। দিন দিন তারা মক্কেলের কাছ থেকে চুষে নিচ্ছেন অর্থ। বছরের পর বছর মামলা চলার পর আপোষ রফার মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়েছে যাই হোক জনসাধারণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চায় এবং প্রতিপক্ষের যথোপযুক্ত নিম্নমানের শাস্তিকামনা করেন।
দিনাজপুরের ১৩টি থানার কত যে মামলা আদালত পাড়য রয়েছে তার সঠিক কোন হিসাব নেই। জেল হাজতে হাজার হাজার হাজতী ও আসামীরা অনকে নির্দোষ হয়েও বাস করছে। কিন্তু তারা সঠিক কোন বিচারও পাচ্ছে না। বা মামলাগুলোর দন্ড নিষ্পত্তিও হচ্ছে না।