সারাদেশে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল ২০২১ সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মাগুরা জেলা বাংলাদেশের ৫টি দরিদ্র জেলার মধ্যে অন্যতম।
মাগুরা জেলার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। বলা হয়েছে লকডাউনে শিল্প কলকারখানা খোলা থাকবে। মাগুরায় শিল্প কলকারখানা নেই বললেই চলে। মাগুরা জেলার প্রায় শতভাগ শ্রমজীবী মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। লকডাউন হয়তো আরও বাড়বে।
এমনিতেই করোনার কারণে দেশের ৯৫ ভাগ মানুষের আয় কমে গেছে। আবার এসময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে; একবছরে চালের কেজি প্রায় ২০ টাকা, সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ২০টাকা বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় লকডাউনে শ্রমজীবী মানুষ আরও বেশি সংকটে পড়ে যাবে। লকডাউনকে কার্যকর করতে হলে শ্রমজীবী মানুষের জন্য খাদ্যসামগ্রী ও অর্থ বরাদ্দ করতে হবে ।
এছাড়া জেলার স্বাস্থ্যসেবার মানও খুব খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা গণকমিটি মাগুরা জেলার পক্ষ থেকে গত এক বছর ধরে করোনা টেস্ট ল্যাব (পিসিআর ল্যাব), হাসপাতালে হাই ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম, আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করে করোনা রোগীর চিকিৎসার উপযোগী আয়োজন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে এসেছি।
বারেবারেই আমাদেরকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক বছর পরেও মাগুরা জেলায় করোনা চিকিৎসার যথাযথ কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি। করোনা টেস্ট ল্যাব (পিসিআর ল্যাব) নির্মাণ করা হয়নি, হাসপাতালে হাই ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের মাত্র ২টি নোজাল ক্যানোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে (যা একটি জেলার প্রয়োজনের তুলনায় ভীষণ অপ্রতুল), আইসিইউ নির্মাণ করা হয়নি।
এখনও অন্য জেলায় নমুনা পাঠানো হয় এবং তিন-চার দিন পর রিপোর্ট আসে। রোগীর অবস্থা সামান্য জটিল হলে-ই ঢাকা বা অন্য জেলায় রেফার করা হয়। মাগুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা থাকে না।
দ্বিতীয় ঢেউ এর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে করোনা রোগের তীব্রতা অনেক বেশি। অধিকাংশ রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে অক্সিজেনের না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর রোগী মারা যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে মাগুরা জেলার চিকিৎসা সেবার আয়োজন বাড়াতে হবে।
মাগুরাবাসীর পক্ষ থেকে মাগুরা জেলা গণকমিটি নিম্নলিখিত দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছে—
১। লকডাউনে গ্রাম-শহরের শ্রমজীবীদের জন্য এক মাসের খাদ্য ও নগদ ৫ হাজার টাকা দুর্নীতি ও দলীয়করণমুক্তভাবে প্রদান করতে হবে।
২। করোনা টেস্ট ল্যাব (পিসিআর ল্যাব) নির্মাণ করতে হবে । টেস্ট রিপোর্ট দ্রুত দিতে হবে । হাসপাতালে হাই ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করে করোনা রোগীর চিকিৎসার উপযোগী আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে ।
৩। জেলায় সবাইকে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে ।