ভান্ডার নামে খ্যাত ও দেশ ব্যাপী ব্যাপক সুপরিচিত বৃহত্তর নওগাঁ জেলার বৃহত্তম মান্দা উপজেলার বিলে, খালে, মাঠে, নদীর দুু’ তীরে, ক্ষেতেখামারে এখন চলছে বোরো ধান কাটার মহোৎসব। নিচু অঞ্চলের এক ফসলী জমিতে আগাম লাগানো ধান ঘরে তুলতে ব্যস্তত সময় পার করছেন কৃষকরা।
ইতিমধ্যে অন্তত ৩০০ হেক্টর জমির ধান কাটা প্রায় হয়ে গেছে। আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে পড়েছেন কৃষকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে ভারশোঁ, তেঁতুলিয়া, মান্দা, পরানপুর, কশব, কাঁশোপাড়া ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের এক ফসলী জমিতে বোরো ধানের আগাম চাষ হয়ে থাকে। আগাম লাগানো সেই ধানগুলো জমিতে হলুদবরণ ধারণ করেছে। এসব ইউনিয়নের মাঠগুলোতে এখন আর নেই সবুজের সমারোহ। এখন সেখানে দোল খাচ্ছে ধানের সোনালী শীষ।
উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে ১৯ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্য মাত্রায় চেয়ে ২৪০ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল হীরা, তেজ, গোল্ড জাতের চাষ হয়েছে ২ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। সরকার হাইব্রীড জাতের ওপর প্রণোদনা দেওয়ায় গতবছরের তুলনায় ৮২৫ হেক্টর বেশি জমিতে এ ধানের আবাদ করেছেন কৃষকরা। এ ছাড়া এবছর ব্রি ধান-২৮ ও জিরাশাইল ধানের চাষও অন্যান্য বছরের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি চাষ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার উপজেলার প্রসাদপুর ইউনিয়নের প্রসাদপুর গ্রামের মফেল পাইক, আমিনুল ইসলামসহ পরানপুর ইউনিয়নের সোনাপুর, গোপালপুর ও তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর বিল ঘুরে কৃষকদের চরম ব্যস্তত সময় পার করতে দেখা গেছে। কালিকাপুর বিলের কৃষক মাসুদ রানা ও শামসুল আলম প্রামানিক, প্রসাদপুর বাঘের বিলের কৃষক মকবুল হোসেন ফকির, মোবারক হোসেন ফকির, আবুল কাশেম ও বেলাল হোসেন, দেলুয়াবাড়ি এলাকার মাঠের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম, চকউমেদ গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদিন জানান, ধানের চারা রোপণের পর থেকে আবহাওয়া অনুকূল ছিল।
সেচকাজে কোনো রকম বিঘ্ন ঘটেনি। তবে মাঝে মধ্যে বিদুৎ কিছুটা কষ্টে ফেলেছে। ধানের পাতা পচা রোগ ও নেকব্লাস্ট রোগের আক্রমণ তেমন ছিল না । এজন্য জমিতে দফায় দফায় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়নি।
এসব মাঠের কৃষকরা বলছেন, চলতি মওসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তাদের ঘরে স্বপ্নের ফসল ওঠার কোন সমস্যা আর নেই ইন শা আল্লাহ্। এখন শুধু কাটা-মাড়াই করে ঘরে তোলার অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত এমন আবহাওয়া থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন দৈনিক নয়া দিগন্ত প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলার নিচু অঞ্চলগুলোতে আগাম জাতের লাগানো ধানের কাট-মাড়াই বর্তমানে শুরু হয়ে গেছে। চারা রোপণ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল ছিল।
এছাড়াও এবারে ধান খেতে রোগ-বালাই কম দেখা গেছে। তবে বর্তমান সময়ে দিনের তাপমাত্রা ৩৫/৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলেও খেতে এর তেমন প্রভাব পড়েনি। কিন্তু তারপরেও হিটস্টোকের কারণে ধান কিছুটা চিটা হয়ে যাবারও কিছু সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে। তারপরেও সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ আবাদ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।