নাম শহিদ উদ্দিন। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ৫ জনের সংসার। দীর্ঘদিন ধরে ময়মনসিংহ নগরীর মাসকান্দা এলাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। নির্ধারিত কোন কাজ নেই। যখন যা পারেন, তাই করে সংসারের দায় মিটিয়ে কোন রকমে চলছেন। করোনার কারণে লকডাউন। কাজ নেই। রমজান মাস। সংসারের খরচ তো বন্ধ নেই। রমজানে অনেকাংশেই বেড়েছে সংসার খরচ। তিনি সহ পরিবারের সবাই রোজা রাখছেন। এ অবস্থায় মঙ্গলবার বিকালে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে বিনা পয়সায় ইফতার পেয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
করোনা সংক্রমণরোধে লকডাউন পরিস্থিতিতে অল্প আয়ের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা লকডাউন বুঝে না। পেটের তাগিদে অল্প আয়ের মানুষ যেন কোন কিছু মানছেই না। লকডাউন নিশ্চিত করতে মাঠে থাকা পুলিশ অনেকক্ষেত্রেই নিম্ন আয়ের মানুষ, রিক্সা, ভ্যান, অটো চালকদের পিছনে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার বিকালে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে অল্প আয়ের মানুষ শহিদ উদ্দিন পুলিশের কাছ থেকে বিনা টাকায় ইফতার পেয়ে মহাখুশি। রমজানে অসহায়, সল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষদের ৫ টাকায় ইফতারি সরবরাহ করা পুলিশের কাছ থেকে তিনি টাকা ছাড়াই বিনা মুল্যে এই ইফতার পেয়েছেন।
লকডাউনে শনিবার থেকে ৫ টাকায় ইফতারি সরবরাহ শুরু করেছে জেলা পুলিশ। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান। এ সময় পুলিশ সুপার বলেছেন কারো কাছে টাকা না থাকলেও তিনি ইফতার পাবেন। টাকার জন্য কেউ ইফতার করতে পারবেনা তা হতে পারে না। পুলিশ সুপারের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়িতা শিল্পী ইফতারি সরবরাহ করেন।
করোনায় লকডাউন আর দ্রব্যমুল্যের উর্দ্বগতির পরিস্থিতিতে অসহায়, দুঃস্থ, ভাসমান, দিনমজুর, রিক্সা, ভ্যান চালক ও নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ যাতে কমমুল্যে মানসম্মত ইফতার খেতে পারে, সেই চিন্তা চেতনায় জেলা পুলিশ নিজস্ব (বেতনের টাকা) তহবিল থেকে রমজান মাসজুড়ে ইফতারি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নামমাত্র মূল্য বা প্রতীকি বা টোকেন মূল্য ৫ টাকায় এই ইফতার সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান মিয়া বলেন, অসহায়, অল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষজন্য তাদের ঘাম জড়ানো টাকায় বাজারের চেয়ে অধিকমূল্য দিয়েও লকডাউনের কারণে মানসম্মত খাবার উপযোগী ইফতার পাচ্ছে না। পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের এ ধরণের বাস্তব অভিজ্ঞতায় জেলা পুলিশ ৫ টাকায় ইফতারি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। শনিবার পুলিশ সুপার ৫ টাকায় ইফতারি সরবরাহ উদ্বোধন করেছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়িতা শিল্পী আরো বলেন, লকডাউন উপেক্ষা করে পেটের তাগিদে কর্মের জন্য নগরীর অল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ ইফতার কিনতে সমস্যায় পড়ছেন। অধিকমূল্য দিয়েও মানসম্মত ইফতার পাচ্ছেনা। অনেকক্ষেত্রে দোকানপাঠ বন্ধ রয়েছে। মানবিক পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান রমজানে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে ৫ টাকায় ইফতারি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। ৬২ টাকা মুল্যের ৫৭ টাকা ভর্তুকি দিয়ে অল্প আয়ের মানুষদের জন্য ৫ টাকায় ইফতারি দেয়া হচ্ছে।
পুলিশ সুপারের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরো বলেন, ইফতার ফ্রি নিতে কারো মনে দ্বিধা সংকোচ দেখা দিতে পারে, এমন আশংকায় প্রতিকী মূল্য নেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন তিন শতাধিক মানুষের মাঝে ইফতার সরবরাহ করা হচ্ছে। ইফতারিতে মুড়ি, ছোলা, পিয়াজু, বেগুনি, শষা, খেজুর, আঙ্গুর, কলা ও জিলাপী পরিমাণমত দেয়া হয়।
৫ টাকার ইফতারি পেয়ে উপস্থিত অল্প আয়ের মানুষজন পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, রমজানে ৫ টাকায় ইফতারি পেয়ে আমাদের অনেক উপকার হলো। সারা দিন রোজা রেখে কাজ শেষে এই ইফতার না পেলে আমার ইফতার ছাড়াই কঠিন হয়ে পড়তো।
ডিবির ওসি শাহ কামাল আকন্দের তত্বাবধানে ৫ টাকায় ইফতারি সরবরাহ অনুষ্ঠানে ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ডিবির পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক আহাম্মদ, ডিবির সেকেন্ড অফিসার আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।