দুইতলা ভবনের নিচতলায় ৩০টি মৎস্য ও সবজি আড়তের ২৫টিই ফাঁকা। বাকি পাঁচটি মৎস্য আড়তে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি নগণ্য। ভাড়া হয়নি কৃষি উপকরণ ও গো-খাদ্য বিক্রির দোকানও। ব্যবহার না হওয়ায় বেকার পড়ে রয়েছে বরফ মিল, হিমাগার, ফিস-সবজি প্রসেসিং সেন্টার ও ডিপো।
তবে সবকিছু ছাঁপিয়ে বেশ জমজমাট পূর্ব-দক্ষিণ কোণের চিলিং সেন্টার। সেখানে প্রতিদিন কেনা-বেচা হচ্ছে অন্তত দুই হাজার লিটার গরুর দুধ।
ডুমুরিয়া উপজেলায় খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের পাশে ২ একর ১০ শতক জমির উপর নির্মিত আধুনিকমানের দৃষ্টিনন্দন ভিলেজ সুপার মার্কেট ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হওয়ায় পর বর্তমান এমনই জৌলুসহীন চিত্র। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণ গুরুত্ব দেয়ায় বিশেষ করে ডিজিটাল মিটারে স্বচ্ছ পরিমাপ ও অনৈতিক সুযোগ না থাকায় আড়তদার ও ক্রেতারা আসছে না। ফলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে খুলনা জেলাধীন ডুমুরিয়া উপজেলার টিপনা গ্রামের শেখ বাড়ির সামনে ভিলেজ সুপার নামের এ মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ইন্টারন্যাশনাল এনজিও ‘সলিডাড়িডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’।
উদ্যোগটি বাস্তবায়নে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ২ একর ১০ শতক জমির উপর বিদেশী নেদারল্যান্ডের অর্থে ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মার্কেটটির কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয় ৩টি মাছের ডিপো, ১০ হাজার লিটার উৎপাদন ক্ষমতার বরফ মিল, মসজিদ, ইলেকট্রিক্যাল ম্যাকানিক্যাল রুম, ফিস ও সবজি প্রসেসিং জোন, ২০টি মৎস্য আড়ত, ১০টি সবজি আড়ত, ২টি কৃষি উপকরণ বিক্রির দোকান, ১টি গো-খাদ্য বিক্রির দোকান, হিমাগার, চিলিং সেন্টার, ব্যাংক, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অফিস সিকিউরিটি রুম, টয়লেট জোন ও বাউন্ডারী ওয়াল ইত্যাদি। নির্মাণ কাজ শেষে মার্কেটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চালু করা হয়।
কিন্তু এখনও মার্কেটটি জমেনি। আজ সোমবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ আড়ত খালি পড়ে রয়েছে। ৫ থেকে ৬টি আড়তে সামান্য পরিমাণ কিছু মাছ এসেছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। ফলে মৎস্য ও সবজি বাজারে প্রায় ক্রেতা-বিক্রেতা শূন্য। তবে চিলিং সেন্টারে ব্র্যাক ডেইরি এন্ড ফুড প্রজেক্ট-এর আওতায় খামারী ও প্রতিনিধি দুধ বিক্রি করছে। ব্র্যাক ডেইরি এন্ড ফুড প্রজেক্ট-এর ল্যাব টেকনোলোজিস্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন চিলিং সেন্টারে ২ হাজার লিটার দুধ বেচা-কেনা হচ্ছে। ফলে খামারীরা লাভবান হচ্ছেন।
চিলিং সেন্টারের কারণেই এখনও মার্কেটটির অস্তিত্ব ঠিকে আছে। কতিপয় কৃষকরা বলেন, মার্কেটটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিলো এলাকার তৃণমূল কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে সরাসরি কৃষি পণ্য (ফল-মূল, শাক-সবজি, দুধ, মাছ ইত্যাদি) ক্রয় করে দেশের বিভাগী শহরগুলোর আগোড়া সুপার শপে বিক্রি করা। বিদেশেও রপ্তানি করা। এছাড়া কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের উপযোগী হয়ে গড়ে তোলা। কিন্তু কোন উদ্দেশ্যই সফল হচ্ছে না। কারণ মার্কেটে আড়তদার ও ক্রেতাই নেই। ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতাও আসছে না
। ফলে কার্যতঃ এক প্রকার অচল হয়ে পড়েছে অতিগুরুত্বপূর্ণ এ মার্কেটটি। মার্কেট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘সলিডাড়িডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’ অপারেশন ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বলেন, মার্কেটে সিসি ক্যামেরা ও ব্যাংকসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু মার্কেটটি প্রধানত্ব দু’টি কারণে জমানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রথম কারণ হচ্ছে ডিজিটাল মিটারে শাক-সবজি, ফল ও মাছ পরিমাপ করা হচ্ছে। ফলে ক্রেতারা ওজনে বেশি নিতে পারছে না। কিন্তু আশপাশের অন্য মার্কেটে ডিজিটাল মিটারে পরিমাপ না হওয়ায় তারা ক্রয়ের সময় ওজনে বেশি পণ্য নিয়ে থাকে। পাশাপাশি তোলাও নেয় আড়তদাররা। দ্বিতীয়তঃ দাদনের ব্যবসা।
যেমন ডুমুরিয়া, খর্ণিয়া, থুড়কাসহ অন্যান্য মার্কেটে আগে থেকে কৃষকের কাছে দাদন দেয়া হয়। ফলে কৃষকরা ইচ্ছা থাকলেও এ মার্কেটে আসতে পারছে না। তবে তিনি আশ্বাস দেন আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন এ মার্কেটি চাঙ্গা করতে উদ্ভুত সমস্যার দ্রুত সমাধান দরকার। এজন্য তারা নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া কমিশন কমিয়ে নেবে। পাশাপাশি আগামী মাছের মৌসুমকে টার্গেট করে বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে ক্রেতা হিসেবে আনার চেষ্টা করা হবে।