ভারতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপে একদিনে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। একইসময়ে ২ হাজার ৮১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে একটানা পাঁচ দিন ভারতে দৈনিক ৩ লাখেরও বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ, গত ৫ দিনেই দেশে ১৫ লাখেরও বেশি নয়া সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। গত ৪ দিনে যথাক্রমে ৩.৪৮ লাখ, ৩.৪৫ লাখ, ৩.৩২ লাখ এবং ৩.১৫ লক্ষ করোনা সংক্রমণ হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রকাশ, গতকাল (রোববার) সকাল ৮ টা থেকে আজ (সোমবার) সকাল ৮ টা পর্যন্ত দেশে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। একইসময়ে ২ হাজার ৮১২ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
সরকারি সূত্রে প্রকাশ, ভারতে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৭৩ লাখ ১৩ হাজার ১৬৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় মারা গেছেন, ১ লাখ ৯৫ হাজার ১২৩ জন। মৃত্যু হার দাঁড়িয়েছে ১.১৩ শতাংশে। সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৪৩ লাখ ৪ হাজার ৩১২ জন। বর্তমানে হাসপাতাল অথবা হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন থাকা রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৮ লাখ ১৩ হাজার ৬৫৮ জন। অর্থাৎ ১৬.২৫ শতাংশ করোনা রোগী সক্রিয় রয়েছে। গতকাল (রোববার) ওই সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৮২ হাজার ৭৫১ জন।
ভারতে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত হয়েছে মহারাষ্ট্রে। রাজ্যটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৬ হাজার ১৯১ টি নয়া সংক্রমণ এবং একইসময়ে ৮৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে এপর্যন্ত মোট ১৪ কোটি ১৯ লাখ ১১ হাজার ২২৩ জনকে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৮৮৯ টি নয়া সংক্রমণ হয়েছে। একইসময়ে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল নয়া সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ২৮১। রাজ্যে এ নিয়ে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ৮৮ হাজার ৮০০ জন করোনা রোগী হাসপাতাল অথবা হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন। গতকাল রোববার ওই সংখ্যা ছিল ৮১ হাজার ৩৭৫।
দেশে গতবছর ১৯ মে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৩৯। কিন্তু আজ ২৬ এপ্রিল সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে মোট করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ১ কোটি ৭৩ লাখ ১৩ হাজার ১৬৩ জন।
হাসপাতালে শয্যা ও অক্সিজেন সংকট
এদিকে, সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে স্বাস্থ্য পরিসেবাতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে ঘুরে ঘুরেও বেড ফাঁকা পাচ্ছেন না রোগীরা। অনেক হাসপাতালেই একই বেডে থাকতে হচ্ছে একাধিক রোগীকে। একইসঙ্গে অক্সিজেনের অভাবও প্রকট হয়েছে।
আজ হিন্দি ওয়েবসাইট জনসত্তা ডট কম জানিয়েছে গত শনিবার আগ্রার ১০ টি কোভিড হাসপাতালে অক্সিজেনের ঘাটতি থাকায় সুস্থ হওয়ার আগেই কমপক্ষে ১ হাজার রোগীকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে, করোনায় মৃত্যু মিছিল বাড়তে থাকায় বিভিন্ন শ্মশানে গণচিতায় মৃতদেহ সৎকার করা হচ্ছে। কখনও কখনও লাশ সৎকারে তিনদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার আগ্রার রেলকর্মী প্রেমলাল সিং করোনা সংক্রমণে মারা গেলে তাঁর সৎকারের জন্য স্থানীয় শ্মশান থেকে তিন দিন অপেক্ষা করতে বলা হয়। পরবর্তীতে তাকে তাঁর আত্মীয়স্বজনরা আগ্রা থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে সন্ধ্যে সাড়ে ৭টা নাগাদ আলীগড় নুমাইশ গ্রাউন্ডে সৎকারের ব্যবস্থা করেন।
একইভাবে মোহিত কুমার নামে এক ব্যক্তি তাঁর মৃত বাবা অবধেশ কুমারের জন্য আগ্রার তাজগঞ্জে একটি স্লট পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি অ্যাম্বুলেন্স পাননি। অবশেষে তাঁর বাবার লাশ গাড়ির ছাদের মাথ্য বেঁধে নিয়ে শ্মশানঘাটে পৌঁছন।