সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূল জুড়ে বিরাজ করছে সুপেয় পানির সংকট। বৈশাখী খরতায় শুকিয়ে গেছে খাবার পানির পুকুর। নলকূপের পানি নোনা। খাবার পানি মিলছে না কোথাও। এক কলসী পানি সংগ্রহ করতে কয়েক কিলোমিটার দূরে যেয়ে দিতে হচ্ছে লাইন। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর মিলছে এক কলসী পানি।
শ্যামনগর কৈখালি এলাকার কতিপয় বাসিন্দারা জানান, শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের জয়াখালী গ্রামে সরকারিভাবে খাবার পানির জন্য একটি পুকুর খনন করা আছে। কিন্তু পুকুরটি প্রভাবশালীরা দখল করে মাছ চাষ করছে। মাছের খাদ্য প্রয়োগ করায় পুকুরের পানি খাবার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সরকারি ওই পুকুর থেকে খাবার পানি সংগ্রহে বাঁধা প্রদান করছে প্রভাবশালী মহলটি। পুকুর থেকে পানি সংগ্রহের নিমিত্তে স্থাপিত ফিল্টারের পাইপ উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই গরমে বার বার প্রভাবশালী মহলের কাছে আকুতি জানালেও তারা কোন পাত্তা দিচ্ছেন না বলে জানান তিনি। পুকুর মালিক অমল প্রামান্য বলেছেন, পুকুর থেকে বিভিন্ন জায়গার মানুষ পানি নিয়ে যাচ্ছে। এতে পুকুর শুকিয়ে যেতে পারে সেজন্য তিনি কাউকে পানি দিতে চাচ্ছেন না। এদিকে খাবার পানি না পেয়ে স্থানীয়রা পড়েছেন চরম বিপাকে। এক কলসি পানির জন্য মানুষ তিন-চার ঘণ্টা প্রচন্ড রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে।
তারা ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দূর থেকে এসে জয়াখালী মোড় সংলগ্ন আকিজ কোম্পানির তৈরি পানির ফিল্টার থেকে পানি নিচ্ছে। কিন্তু ফিল্টারে যে পানি আছে তা দুই একদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তারপর যে কি হবে তা কেউ জানে না।
তিনি সরকারি, বেসরকারি সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ অবস্থা শুধু কৈখালি ইউনিয়নে নয়, পার্শ্ববর্তী রমজাননগর, ঈশ্বরীপুর, বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা, পদ্মপুকুরসহ গোটা উপকূলে একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা যায়। স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা লিডার্সের পক্ষ থেকে সুপেয় পানি সংকট নিরসনে কাজ করা হচ্ছে। সংস্থাটি নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার বিশ্বাস জানান, খরতায় খাল-বিল-পুকুর শুকিয়ে গেছে। নলকুপেও উঠছে না ঠিকমত পানি। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।পানির জন্য এসব এলাকায় একপ্রকার হা-হা-কা-র অবস্থা।
তিনি আরও জানান, সুপার সাইক্লোন আম্পানে উপদ্রুত উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ নিরাপদ খাবার পানির দাবিতে সম্প্রতি কয়েক দফা মানববন্ধন, মিছিল ও সমাবেশ করেছে। কয়েকজন কলেজ শিক্ষক এ প্রতিবেদকে বলেন, সুপার সাইক্লোন আম্পানে উপকূলের বেড়িবাঁধ ভেঙে সর্বত্র নোনা পানি ঢুকে পড়ে। বাড়িঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের ভেসে যায়।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এই এলাকার একমাত্র পানির উৎস পানির আঁধার (পুকুরগুলো)। কোথাও কোন সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকায় এনজিও লিডার্স পানির ব্যবস্থা করছিল। কিন্তু দশমাস পর তারাও দু’দিন পানি দিতে না পারায় সংকট এখন তীব্র। এ মুহূর্তে সরকারের পক্ষ থেকে পানির ব্যবস্থা না করলে মানুষ তীব্র পানি সংকটে পড়বে। এতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এদিকে স্থানীয় সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার বলেন, বুড়িগোয়ালিনী এলাকায় খাবার পানির সংকট নিরসনে সেখানে একটি পানির প¬ান্ট স্থাপন করা হয়েছে।
তবে অন্যান্য জায়গায় সুপেয় পানির সংকট নিরসনে তিনি উপজেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। তিনি আরও জানান, উপকূলবর্তী ইউনিয়নগুলোতে সুপেয় পানির চরম সংকট নিরসনে স্থানীয় সরকার, পল¬ী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বরাবর বরাদ্দ পাওয়ার প্রস্তাব প্রেরণ করেছি। মাননীয় মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অতি দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে-ইনস্টিটিউটশনাল রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং (১লক্ষ লিটার ক্যাপাসিটি) ১০০ টি, ৬০টি পুকুর পুনঃখনন, হাউসহোল্ড বেসিস রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং, গভীর নলকূপ স্থাপন, রিভার্স অসমোসিস প¬্যান্ট স্থাপন, পিএসএফ সোলার স্থাপনসহ বিভিন্ন প্রকল্প।