বাবা মারা গেছেন ১ যুগ হয়। আর বৃদ্ধা মা ও শয্যাশায়ী। এ দম্পত্তির মেয়ে মনি আক্তারের বিয়ে হয়েছে প্রায় ১১ বছর আগে। স্বামী বাদশা মিয়া ও অসুস্থ। কাজ কর্ম করতে পারেন না তিনি। মনি আক্তারের বড় ছেলে ৩য় শ্রেণী আর ছোট ১ম শ্রেণীতে পড়ে। মায়ের চিকিৎসা, খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি ছেলেদের মানুষ করতে ফুটপাতে চা বিক্রি করছেন তিনি।
রাত ৯টা পর্যন্ত চলা চায়ের দোকানের আয়েই চলে তাদের সংসার। বড় বোন ও ভাইয়েরা বিয়ের পর আলাদা সংসার পেতেছেন। অসুস্থ মায়ের খোজ খবর রাখেন না তারা। তাই সংসারের খাওয়া দাওয়া চিকিৎসা সহ সন্তানের পড়াশুনার খরচ চালাতে চায়ের কেতলি হাতে নিয়েছেন মনি আক্তার।তার স্বপ্ন মা ও স্বামির চিকিৎসার সাথে সন্তানদের মানুষের মত মানুষ গড়া। এক সময় চৌধুরী পরিবারে জন্ম গ্রহন করায় বর্তমানে অভাব অনটনের সংসারে মেম্বার, চেয়ারম্যান ও খোজ খবর রাখেন না তাদের। এ কারনেই চৌধুরী পরিবারের সন্তান হয়েও সংসারের ঘানি টানছেন মনি আক্তার।
মনি আক্তার নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভাধীন বঙ্গবন্ধু সড়কের মুকুল স মিল সংলগ্ন ভাড়ায় বাড়িতে থাকেন। মনির বাবা ইদ্রিস চৌধুরির দ্বীতিয় স্ত্রী হলো রোমেদা বেগম। বাবা মারা যাওয়ায় সৎ ভাই বোনেরা জমি যায়গা থেকে বঞ্চিত করেছেন তাদের। কোন রকম খোজ খবরও রাখেন না তারা। মা রোমেদা বেগম এক বেলা খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের বিয়েও দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি অক্ষম হওয়ায় সংসারের হাল ধরেছেন মেজো মেয়ে মনি আক্তার।
সোমবার দুপুরে লকডাউন এর মাঝেও সংসারের খরচ চালাতে ফুটপাতে চা বিক্রি করছিলেন মনি আক্তার। চা বানানো ও কাস্টমারের হাতে চা দেয়ার ফাকে কথা হয় মনি আক্তার এর সাথে। তিনি জানান আমার একটাই আশা স্বামী ও মায়ের চিকিৎসার পাশাপাশি দুই সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা। এক সময় আক্ষেপ করে বলেন আর পারছিনা ভাই। প্রায় ২ বছর থেকে চলছে লকডাউন। স্কুল কলেজ ও বন্ধ রয়েছে। এ কারনে চায়ের দোকানে কাস্টমারের সংখ্যা নেই বললেই চলে।
সন্তানের পড়াশুনা প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। ভাই বোনরা ও সংসারের খোজ খবর রাখছেন না। মনি আক্তার বলেন মেম্বার, চেয়ারম্যান ও সরকার নাকি গরিব অসহায়দের সাহায্য করছেন। কিন্তু কই আমাদের সংসারে তো কেউ সাহায্য করে না। সরকারের সাহায্য পেলে স্বামি ও মায়ের চিকিৎসার সাথে সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করতে পারতেন বলে জানান তিনি।
মনি আক্তার এর মা রোবেদা বেগম বলেন আমার নিজের প্রতি লজ্জা ও ঘৃণা হয়। চা বিক্রি করে মেয়েকে সংসারের ঘানি টানতে হচ্ছে। কি আর করা সব আল¬াহর ইচ্ছা।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রমিজ আলম জানান মনি আক্তার এর ব্যাপারে আমি শুনেছি। খোজ খবর নিয়ে ঐ পরিবারকে অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে।