নীলফামারীর সৈয়দপুর শহর সহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও ভেজাল হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক সহ খামারিরা। অন্যদিকে অসাধু ব্যবসায়িরা ভেজাল গো-খাদ্য তৈরি করে চড়া দামে তা বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন বলে ভুক্তভূগীদের অভিযোগ।
শহর সহ উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।
আর এক কেজি গো-খাদ্য গমের ভূষি বিক্রি হচ্ছে ৫৫/৬০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া খৈল, মসুর পাউডার, চালের খুদ সহ এ্যাংকর ডালের খোসা ও বিভিন্ন খাদ্যের মিশ্রিত গো-খাদ্যের দাম রয়েছে বৃদ্ধির তালিকায়। এক দিকে জৈষ্ঠ্য মাসের বৃষ্টিতে বন্যার আশংকা আর অন্যদিকে গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার সাধারণ কৃষকসহ খামারিরা। এতে দুধ উৎপাদন ও কুরবানিতে পশুর মোটাজাত করনে প্রভাব পরেছে।
সৈয়দপুরের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান বাজার উর্ধগতি থাকার পরও ভেজাল মুক্ত এক কেজি গমের ভূষি বিক্রি করছি ৫৫ টাকা কেজি দরে। চালের খুদ বিক্রি করছি ৩০/৩৫ টাকা কেজি দরে। অথচ শহরের বেশ কজন ব্যবসায়ী নিম্নমানের গো-খাদ্য তৈরি করার পর আকর্ষনীয় ও পরিস্কার ঝকঝকে করে চরা দামে বিক্রি করতে ডেনামাইট নামের এক ধরনের কেমিক্যাল মিশ্রন করছেন। আর ক্রেতারাও সেগুলি ক্রয় করে পশুকে খাওয়াতে গিয়ে বিপদগামী হচ্ছেন। তিনি বলেন সম্প্রতি কেমিক্যাল মিশ্রিত গো-খাদ্য খাওয়ায় শহরের মুন্সিপাড়ায় খেজুরবাগ মসজিদ সংলগ্ন সোহাগ নামের এক যুবকের তিনটি গরুর অকাল মৃত্যু হয়েছে।
ভেজাল গো-খাদ্যের সাথে বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত খাদ্য খাওয়ানোর ফলে উপজেলার একাধিক কৃষকসহ খামারির মাথায় হাত পরেছে। কৃষকসহ খামারিরা ওইসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করতে না পারায় বৈধ ব্যবসায়ীরা লোকসান ও বদনামের কবলে পরে সর্বসান্ত হচ্ছেন। শহরের সকল গো-খাদ্য ব্যবসায়ীদের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে সঠিক তদন্ত করলেই অবৈধ ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
শহরের ইউসুফ ডেইরি ফার্মের সত্বাধিকারী আলহাজ্ব মিন্টু জানান কুরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরই ৩/৪শত গরু ও ২/৩শত ছাগল মোটাজাত করি। সবুজ ঘাস, গমের ভূষি, মসুর ডাল ও চালের খুদ সহ আলু খাওয়ানো হত গবাদি পশুকে। এ কারনে স্বাস্থ্যবান ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় নিমিশেই ওইসব পশু বিক্রি হয়ে যেতো। লোকসানের কবলেও পরতে হয়নি কখনো। কিন্তু এবারে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও ভেজাল গো-খাদ্যের কথা শুনে মাথায় হাত পরেছে। প্রশাসনের উচিত এখনই অবৈধ গো-খাদ্য ব্যবসায়ীদের দোকানসহ গোডাউনে তল্লাসি করা।
শহরের গো-খাদ্য ব্যবসায়ী মাহমুদ আলম, আরমান ও হাসান মোল্লা সহ বেশ কজন জানান এবারের গো-খাদ্য বেশি দামে কিনতে হয়েছে বলেই বেশি দামে তা বিক্রি করতে হচ্ছে। কৃষক ও খামারিদের পশু মোটাজাত করতে গমের ভূষি, এ্যাংকরের ভূষি সহ একাধিক ডালের ভূষি মিশ্রিত করে তা বিক্রি করাকে অনেকেই ভেজাল খাদ্য বলছেন। আসলে এইগুলি ভেজাল খাদ্য নয়।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শ্যামল কুমার রায় জানান, কৃষক ও খামারিদের সব ধরনের পরামর্শ আমরা দিচ্ছি। তবে গো-খাদ্যে ভেজাল ও দাম বৃদ্ধির কারনেই অচিরেই অভিজান চালানো হবে। ভেজাল গো-খাদ্যের প্রমাণ মিল্লেই কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।