কালজয়ী ইতিহাসের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু। শোকের মাস আগস্টের ধারাবাহিক আলোকপাতে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্য তার যে অসীম মমত্ববোধ ও ত্যাগ স্বীকার এবং অনেক রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় তা নিয়ে আলোচনা করেছি। মূলত বাঙালি জাতীয়তাবাদের কতগুলো বৈশিষ্ট বা উপাদান রয়েছে।
যেমন- ১. ভাষা ২. সংষ্কৃতি ৩. ইতিহাস ও ঐতিহ্য ৪. ধর্ম ৫. প্রথা, রীতি, রেওয়াজ ৬. প্রকৃতি ৭. অস্তিত্বের সাতন্ত্রতা ৮. আদি ভিত্তি ৯. বাহ্যিক আচরণ ও স্বকীয়তা ১০. অস্তিত্বের সামাজিকতার ক্রম বিবর্তন ১১. প্রগতি ইত্যাদি।
এইসব বৈশিষ্ট্য বা উপাদান সম্পর্কে জানা দরকার। বিশেষ করে বর্তমান এবং আগামী প্রজন্মের জন্য এগুলো জানা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন তারা সমকালীন বাস্তবতার প্রেক্ষিতেই দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ব হয়েই প্রাণের মায়া ত্যাগ করেই বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। এইসব বীরদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই আজকের বাংলাদেশ। তাত্ত্বিক জ্ঞান তাদের না জানলেও ক্ষতি নেই কেননা তারা বাস্তবে দেখেছিলেন সবকিছু।
সাড়ে সাত কোটি বাঙালির অধিকাংশই দেশ-মাতৃকাকে মুক্ত করার সংগ্রামে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। যে কালজয়ী ইতিহাস আমাদের পূর্ব প্রজন্ম সৃষ্টি করেছেন, তাও আমাদের জানতে হবে। আর তাহলেই জাতির পিতার আত্মত্যাগ সার্থক হবে। সার্থক হবে তার সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন।
ইতিহাস জড় নয়-জঙ্গম। সমাজও তাই। প্রগতির পথে যে সচল, নিত্য পরিবর্তনশীল। নদীর জলধারার মতো অবিরাম প্রবাহিত। নদীর বাঁধা বাঁকে বাঁকে। সমাজের বাঁধা স্তরে স্তরে। সামাজিক বিবর্তনের ইতিহাস লক্ষ লক্ষ বছরের ইতিহাস। সংগ্রাম এবং লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সুনির্দিষ্ট সামাজিক প্রগতি ও শান্তি বিধান করা। সংঘাতের পর সংঘাত সৃষ্টি করে সংঘাতের, শোষণের অবসান ঘটানো। মুজিববাদের অন্যতম উপাদান হচ্ছে সমাজবাদ।
জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা যে দেশটি অর্জন করল। সেই যুদ্ধ বিধস্ত বাংলাদেশের শুরুর সময়টা ছিল হাহাকারে ভরপুর। কোথাও কিছু নেই। রাস্তা, ঘাট, ব্রিজ, স্কুল, কলেজ, প্রতিষ্ঠান সব কিছুই ভঙ্গুর। এই সময় কেউ যদি দেশটাকে দাঁড় করানোর সাধ্য রাখতেন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লন্ডনের ‘দ্য ইকোনোমিস্ট’ পত্রিকায় লেখা হয়েছিল ‘যদি পুরো পদ্মাকে লালে রাঙিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচানো যায়, তাই করা হোক।
যদি আওয়ামী লীগ চন্দ্রপৃষ্ঠে আরোহন করলে মানুষগুলো বেঁচে যায়, তাই করা হোক। যদি মুজিব প্রেসিডেন্ট হলে দেশটা বেঁচে যায়, তাহলে প্রেসিডেন্ট কেন যে কোনো পদে তিনি আসীন হতে চাননা কেন, তাই দেয়া হোক।’ এই ছিল সেই সময়কার বিদেশি সাংবাদিকদের মন্তব্য। তাইতো সৈয়দ শামসুল হক লিখেছিলেন-
‘এই ইতিহাস ভুলে যাব আজ আমি কি তেমন সন্তান?
যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান।
লেখক ঃ ড. আসাদুজ্জামান খান।