নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিনতলা ক্লাস ভবন ঘেষে বহুতল ভবন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। পৌরসভা এলাকায় স্হাপনা নির্মাণের যে নীতিমালা রয়েছে তা মানা হয়নি। এমন অভিযোগ মিলেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, কলেজের মূল ভবনের পাশে উত্তর দিকে আব্দুল ওয়াদুদ টেনিয়া নামে এক ব্যক্তির ৫ শতক জমি রয়েছে । এরপরই রেলওয়ের ২ শতক পতিত জমি,পৌরসভার বড় ড্রেন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্টগামী সড়ক। দীর্ঘ দিন থেকে টেনিয়ার ওই জমিটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির জন্য বলা সত্ত্বেও তিনি দেন নাই। এতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক এমপি ও পৌর মেয়র অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার ওই ৫ শতকের পরিবর্তে দক্ষিন দিকে (স্কুলের পেছনে) ১০ শতক জমি বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও টেনিয়া সম্মত হননি। বরং ওই জমিটি তিনি তার মেয়ে ও জামাতাকে হেবা দলিল করে দিয়ে সেখানে বহুতল ভবন নির্মানের জন্য পৌরসভা থেকে নকশা অনুমোদনের আবেদন করেন। আমজাদ হোসেন সরকার জীবিত থাকাকালে টেনিয়া সেই অনুমোদন নিতে পারেনি।
কিন্তু ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি আমজাদ হোসেন সরকার মারা যাওয়ার পরই প্যানেল মেয়র জিয়াউল হক জিয়ার স্বাক্ষরে অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে নকশাটি অনুমোদন করে নিয়ে রাতারাতিই তড়িঘড়ি করে নির্মান কাজ শুরু করা হয়। বিষয়টি তৎকালীন সভাপতি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিনকে অবগত করলে তাঁর পরামর্শে পৌর ও উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়। এতে ১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী মানোয়ার হোসেন হায়দারকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই তদন্ত আজও হয়নি।
এদিকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী মানোয়ার হোসেন হায়দারই এখন আমাদের প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। তিনি নিষেধ করা সত্ত্বেও নকশা অনুমোদনের জোরে তড়তড় করে তিন তলা বিল্ডিং সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন। আমি নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সকল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানালেও কারও জোরালো সহযোগীতা না পাওয়ায় তা ঠেকাতে পারিনি।
এমতাবস্থায় বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে জানালে তিনি মোবাইলে ওই স্থাপনার মালিক টেনিয়ার জামাতা আবুল কাশেমকে কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তাই এখন কাজ বন্ধ আছে। কিন্তু তিনি এভাবে একটি প্রতিষ্ঠান ঘেষে বহুতল ভবন করায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে পড়েছে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, প্রশাসন সুন্দরভাবে এই সমস্যার সমাধান না করলে আমরা মাঠে নামতে বাধ্য হবো। প্রয়োজনে মানববন্ধনসহ সবধরনের আন্দোলন করবো। তবুও যোগসাজশের অবৈধ কাজ বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবেনা। টাকার জোরে নকশা পাশ করলেই বিল্ডিং করা যায়না।
প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী মনোয়ার হোসেন হায়দার বলেন, সাবেক মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার মারা যাওয়ার সুযোগ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র জিয়াউল হক জিয়া নকশা অনুমোদন করেছেন। যা বিধিসম্মতভাবে হয়নি। আর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়েও এর বিরুদ্ধে জোরাল অবস্থান না নেয়ায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছে ওই ব্যক্তি।
এখন আমি সভাপতি হয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে যা করা প্রয়োজন সব দিক দিয়ে চেষ্টা করছি। নকশা অনুমোদনে কারসাজি বিষয়ে তদন্তপূর্বক তা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে এবং রেলওয়ের জায়গাটুকু প্রতিষ্ঠানের নামে লিজ নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।
মো. আব্দুল ওয়াদুদ টেনিয়া বলেন, জামাই আর মেয়েকে ৫ শতক জমি অর্ধেক অর্ধেক করে দান করেছি। স্কুলের হর্তাকর্তাদের ঢিলেমির কারণেই তারা জমিটা নিতে পারেনি। এখন বাধা দিয়ে কোন লাভ হবেনা। পৌরসভা অনুমোদন দিয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর আমাদের পক্ষে।
এব্যাপারে স্থাপনা নির্মানকারী আবুল কাশেমের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পৌরসভার অনুমোদন নিয়ে নিয়ম মতই কাজ করছি। নকশা অনুমোদনে কোন ত্রুটি থাকলে পৌর কর্তৃপক্ষের বিষয়। আর রেলওয়ের জমিটা আমরা পাকশী থেকে ১১ বছর আগেই লিজ নিয়েছি। অতএব দখলের অভিযোগ সঠিক নয়।
তিনি বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জমিটা নিতে বলেছি, তারা নেয়নি। এখন নিয়ম মেনে নিজের জমিতে নিজে বাড়ি করছি