বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী কালাচাঁদ আউলিয়ার মেলা দীর্ঘ ২ বছর পরে ভক্তরা আবারো ফিরে পাচ্ছেন প্রানবন্ত। মহামারী করোনার কারনে গত দুই বছরে জমে উঠেনি এ মেলা। লোক সমাগম ছিলো খুবই কম। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে মেলার প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় ২৫ শে অগ্রহায়ন কালাচাঁদ ফকির নামেও পরিচিত তিন দিন ব্যাপি এ মেলা আরম্ভের কিছুদিন দিন আগে থেকেই এখানে প্রচুর লোক সমাগম হতে শুরু করে। রাতভর চলবে ওরশ, মুর্শিদী ও মাইজ ভান্ডারী গান। ভক্তবৃন্দরা কালাচাঁদ আউলিয়ার মাজারে আগরবাতি আর মোমবাতি দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। হাজারো ভক্তরা মনের আশা পূরনের জন্য মানতের টাকা পয়সা মাজারে দান করে তৃপ্ত হবে।
অনেক দোকানীরা মেলা প্রাঙ্গন ও তার আশপাশে এলাকায় জায়গা নির্ধারণ করে পশরা সাজিয়ে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দক্ষিনাঞ্চল সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার ভক্ত ও আশেকানবৃন্দ সহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও ভক্ত ও দর্শনার্থীরা এ মেলা দেখতে আসে। হাজার হাজার দোকানী, দর্শনার্থী ও ভক্তবৃন্দের উপচে পড়া লোক সমাগম ঘটে কালাচাঁদের মেলায়। সরকারিভাবে উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদাধিকার বলে মেলা কমিটির সভাপতি।
জনশ্রুতি আছে, ২০০ বছরেরও উর্ধে বিটিশ শাসন আমলে কালাচাঁদ আউলিয়া কিশোর বয়সে পানগুছি নদীতে জায়নামাজে আসন দিয়ে অলৌকিক ভাবে ভেসে এসেছিল এবং বারইখালী কাজী বাড়ি এলাকায় আস্থানা গেড়েছিলেন। লোকমুখে রয়েছে তার বিভিন্ন ধরনের অলৌকিক কাহিনী।শোনা যায়,এক লোক শীতার্ত কালাচাঁদকে দেখে তার গাঁয়ের চাদর দিয়ে দেয়। কালাচাঁদ চাদরটি পেয়ে তার সামনে জলন্ত আগুনের ভিতরে ফেলে দিলে তা পুড়ে যায়। এতে ঐ লোকটির আফসোস হলে কালাচাঁদ জ্বলন্ত আগুন থেকে চাদরটিকে অক্ষত অবস্থায় উঠিয়ে তাকে দিয়ে দেয়। সমসাময়িক সময়ে কালাচাঁদ আউলিয়া বাঘের পিঠেও নাকি ঘুরে বেড়াত।এমনকি তার হুকুমে পানগুছি নদী থেকে কুমির পানির উপর দিয়ে ভেসে যেত। এভাবে তার নামে নানা জনশ্রুতি রয়েছে। বারইখালী ফকিরের তাকিয়া মৌজা তার নামেই হয়েছে বলে এলাকাবাসি জানায়। বারইখালীর কাজী বাড়ির চত্বরে তিনি অস্তানা গাড়েন এবং এখানেই তিনি জ্যান্ত কবর নিয়েছিল। তার নামে এখানে প্রতিবছর মেলা বসে।
হযরত কালাচাঁদ আউলিয়া মাজারের খাদেম শাহসুফি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, গত দুই বছরে করোনার কারনে মেলার আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ প্রতি বছরেই ২৫ অগ্রহায়ন এই দিনটিতে ছুটে আসেন মেলা প্রাঙ্গনে। দূর দূরান্ত থেকে লোকজন বিভিন্ন দোকানী সরঞ্জাম নিয়ে মেলায় আশা শুরু করেছে। মেলা এ বছর জমজমাট হবে। প্রশাসনের সহযোগীতা তিনি আশা করেন।
এ ব্যাপারে মেলা কমিটির সভাপতি নির্বাহী কর্মকতা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী এ মেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উৎযাপনের জন্য প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। দর্শনার্থী ও আগত ভক্তবৃন্দসহ সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনী ও মেলা কমিটি সার্বক্ষনিক তদারকিতে থাকবেন।