ছাতকে আপন তিন বোনের পাঁচ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের পৈত্রিক সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এক ভাইয়ের বিরুদ্ধে।
বাড়ি বানানোর কথা বলে কৌশলে বোনদের কাছ থেকে প্রায় নয় লক্ষ টাকা মূল্যের ১৮শতক ভূমি রেজিস্ট্রি করে নিয়ে এখন টাকা পয়সা না দিয়ে প্রতারণা করেন ভাই। এ মধ্যে টাকার অভাবে এক বোনের মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশিদের মাধ্যমে ভাইকে নিয়ে বারবার বৈঠক হলেও জায়গার বিনিময়ে কোন টাকা-পয়সা না দিয়ে সে নানা টালবাহানা শুরু করেছে। ফলে একদিকে যেমন বোনেরা পৈত্রিক সম্পত্তিতে ঠকা খাচ্ছেন, অপর দিকে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে মৃত্যুর পথে যাত্রী হচ্ছেন এক বোন।
অবশেষে ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় ভাইয়ের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন ভূক্তভোগি বোন। মামলার প্রেক্ষিতে আদালত সমন জারি করেন।
জানা যায়, উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের হাইলকেয়ারী গ্রামের মৃত ইদ্রিছ আলী দুই ছেলে ও চার মেয়ে রেখে গেছেন। সব সন্তানরা পৈত্রিক সম্পত্তি অংশে পেয়েছেন। জালালপুর-লামারসুলগঞ্জ সড়কের হাইলকেয়ারী গ্রামের পাশে মৃত ইদ্রিছ আলীর মেয়ে, একই গ্রামের মৃত আছলম আলীর স্ত্রী সোনামালা বেগম, আলাপুর গ্রামের মৃত ওয়ারিছ আলীর স্ত্রী রংমালা বেগম ও বিশ্বনাথের বিলপারের ছিদ্দেক আলীর স্ত্রী শুকুর বিবির ১৮শতক জায়গা রয়েছে।
প্রায় ৭বছর আগে বাড়ি তৈরির জন্য তিন বোনকে ফুঁসলিয়ে ওই ১৮শতক জায়গা নিজের নামে রেজিস্ট্র করে নেন ভাই দিলবর আলী। জায়গার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল আড়াই লাখ টাকা। কিন্তু রেজিস্ট্রি করার পর ভাই তার বোনদেরকে তাদের প্রাপ্য টাকা পয়সা দিচ্ছেন না। তাদেরকে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। এ নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য বৈঠক হয়। তার পর ও কোন সুরাহা হয়নি। সম্প্রতি গোষ্টিগত এক বৈঠকে পৈত্রিক সম্পত্তি ও জমি বিক্রিসহ মোট পাঁচ লাখ টাকা ওই ভাইয়ের কাছে বোনেরা পায় মর্মে স্বাব্যস্থ হয়। তাদের প্রাপ্তি টাকাগুলো দ্রুত পরিশোধ করারও আশ্বাস দেন ভাই। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করে তিনি প্রতারণার আশ্রয় নেন।
ক্যান্সার আক্রান্ত মৃত ইদ্রিছ আলীর মেয়ে সোনা মালা বেগম জানান,তারা তিন বোনের ১৮ শতক জায়গা বিশ্বাস করে দিলবর আলী নামের ভাইকে বাড়ি বানানোর জন্য রেজিস্ট্রি করে দেয়। এর বিনিময়ে তিনি আগে বা পরে কোন টাকা পয়সা তাদের দেয়নি। পরে ওই জমি রেজিস্ট্রিসহ অন্যান্য বিষয়ে মধ্যস্থকারীদের মাধ্যমে সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তাদেরকে তিনি পাঁচ লক্ষটাকা দেবেন, কিন্তু এখনো তারা টাকাগুলো পাইনি। প্রায় ৬ মাস আগে তার গলায় একটি টিউমার হয়। ভাইয়ে টাকা না দেয়ায় এবং সময়মতো চিকিৎসা করাতে না পারায় বর্তমানে টিউমারের স্থানে ধরা পড়েছে ক্যান্সার। টাকার অভাবে তিনি চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় ভাই দিলবর আলী ও তার ছেলে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে গত ৩০ নভেম্বর সুনামগঞ্জ আদালতে তিনি একটি (সিআর মামলা নং-৫৪০/২০২২ইং) দায়ের করেন। একই দাবি সোনামালার বোন রঙমালা বেগম ও শুকুর বিবির। তারা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরত চায়। মৃত ইদ্রিছ আলীর বড় ছেলে আবদুস ছত্তার, সোনামালার ছেলে নূরুল আমীন ও ইরন মিয়া, মেয়ে রহিমা বেগম, রঙমালার ছেলে জবান আলী, হাইলকেয়ারী গ্রামের হাফেজ আবদুল হামিদ, আজিজুর রহমান, জামাল উদ্দিন, শমসর আলী,
মনসুর আলী, আসর আলী, আবদুস শহিদসহ আরো অনেকেই এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত দিলবর আলীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল রিং হচ্ছে কেউ রিসিভ করেনি।