কুড়িগ্রামের উলিপুরে রফিকুলকে জবাই করে হত্যার চাঞ্চল্যকর খুনের জটলা খুলতে শুরু করেছে। হত্যাকাণ্ডের দিনই সকালে হত্যাকাণ্ডের শিকার রফিকুলের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী আলিফ উদ্দিনের ছেলে রফিকুলকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই কিলিং মিশনে জড়িত ফেরদৌস আলী নামে (তেলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা) অপর এক আসামিকেও শুক্রবার রাতেই আটক করেছে থানা পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত উভয়েই স্বীকার করেছে, অর্থলোভের বশে কিলিং মিশনে জড়িত কয়েকজন মিলেই রফিকুলকে গলাকেটে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের শিকার রফিকুলের স্ত্রী লাইজু বেগম শুক্রবার রাতেই উলিপুর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। উলিপুর থানা পুলিশের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কিলিং মিশনে জড়িত অন্যদের দ্রুত গ্রেপ্তারে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে বলেও উলিপুর থানা সূত্রে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে জেলার উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ি ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের (ফাগু) পুত্র অটোচালক রফিকুলকে গলাকেটে হত্যার পর মুন্সিবাড়ির অদূরে তেলিপাড়া গ্রামে মরদেহ রাস্তার পাশে একটি বাঁশঝাঁড়ে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা।
এরপর শুক্রবার ভোরে তেলিপাড়া গ্রামের কয়েকজন মসজিদে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ওই মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। তৎক্ষণাৎ খবর পেয়ে উলিপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় ও সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
এদিকে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে কুড়িগ্রাম থেকে সিআইডির একটি চৌকস দল সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করে। কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম ঐদিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ঘটনা দ্রুত উদঘাটনে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
হত্যার শিকার রফিকুলের স্ত্রী লাইজু বেগম বলেন, তার স্বামী রফিকুল (৩৫) আগে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাতো। এতে এতে সংসারের টানাপোরণ লেগেই থাকতো, এরপর চায়ের দোকানেও বেশ কিছুদিন মেসিয়ারির কাজ করে।
পরবর্তীতে বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কিছুদিন আগে একটি অটোরিকশা ক্রয় করে। ওতি সম্প্রতি সেটা বিক্রি করে নতুন অটো কেনার কথা।
পুরোনো অটো বিক্রির ৮০ হাজার টাকা এবং ঘটনার আগের দিন আশা এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ তোলা হয়।
সব টাকাই তার স্বামীর কাছে ছিলো বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া, লাইজু বেগম আরো জানান, এ সব টাকার জন্যই তার স্বামীকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। স্বামী খুন হওয়ার পর লাইজুর জীবনে এখন চরম অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে। অবুঝ দুই সন্তানকে নিয়ে কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবে সেই চিন্তায় লাইজু এখন দিশেহারা।
এ ঘটনায় উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আশরাফুজ্জামান বলেন, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে, এরই মধ্যে দুজনকে আটক করা হয়েছে। খুব দ্রুত সব হত্যাকারীকে আটক করে আইনের আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে।