Dhaka ০৩:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে ভূয়া নিয়োগপত্র

ফুলবাড়ীতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাত্বের অভিযোগ

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কলেজের বিভিন্ন পদে চাকুরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে কয়েকজন ব্যাক্তির কাছ থেকে অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে মাদিলাহাট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় একাধিক ভুক্তভুগিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে (গত ২৭ আগষ্ট) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গভনিং বডির আহবায়ক মীর মোঃ আল কামাহ তমাল উপজেলা পল্লী উন্নয়ন (বিআরডিবি) কর্মকর্তা বিধু ভূষন রায়কে আহবায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

এদিকে গত ৫ আগষ্ট গণঅভ্যুথানে সরকরার পরিবর্তন হওয়ার পর ওই অধ্যক্ষ কলেজের গভনিং বডির আহবায়কের নিকট পদত্যাগ করে সটকে পড়েছেন। এখন অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভুগিরা।

চাকুরীর প্রত্যাশী ভুক্তভুগিরা জানায়, চাকুরীর প্রত্যাশায় অধ্যক্ষের দাবি মেনে তাকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মানুষের উপস্থিতিতে নগদ টাকা প্রদান করেন তারা। নিজেদের জমিসহ সহায় সম্বল বিক্রি করে চাকুরির জন্য অধ্যক্ষের চাহিদা মতো টাকা দেন তারা, কিন্তু পর্বর্তীতে বিল-বেতন না হলে কারন হিসেবে জানতে পারেন ওই পদগুলোতে আগে থেকেই লোক নিয়োগ দেয়া আছে। এছাড়া আরও এক যুবককে গবেষনাগার সহকারি (ইসলাম শিক্ষা) পদে ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাবেক ওই অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান। খোজ নিয়ে জানাগেছে, বাংলাদেশ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জনবল কাঠামো অনুযায়ী গবেষনাগার সহকারি (ইসলাম শিক্ষা) নামে কোন পদ নেই।

জানাগেছে, জৈনক মোছা: শাহিনা বেগম, মোছা: লাবনী আক্তার ও মো: শাহিন নামের তিন চাকরি প্রত্যাশীকে ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই অধ্যক্ষ। নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর তারা জানতে পারেন, ওই পদে অন্য ব্যাক্তিদের পুর্বেই নিয়োগ দেয়া আছে । সহায় সম্বল হারিয়ে ভুক্তভোগী ওই তিন চাকুরী প্রত্যাশী ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ফুলবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ ফুলবাড়ী উপজেলার মাদিলাহাট কলেজে কিছু শুন্য পদে নিয়োগ দেয়া হবে মর্মে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। সে অনুযায়ী তারা ওইসব পদের জন্য প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন। অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ার যথারীতি শেষ করেন, পর্বর্তীতে বিলের জন্য আবেদন করতে গেলে জানতে পারেন, ওই পদে পূর্বেই অন্য ব্যাক্তিদের নিয়োগ দেয়া আছে ।

কলেজের অধ্যক্ষ শূন্য পদ দেখিয়ে ল্যাব সহকারী (ভুগোল) পদে লাবনী আকতারের নিকট ১০ লাখ টাকা, অফিস সহায়ক পদে শাহিনা বেগমের নিকট ১৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং নিরাপত্তা কর্মী পদে শাহিনের নিকট থেকে ১৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, এদিকে হযরত আলী নামে আরও এক যুবককে গবেষনাগার সহকারি (ইসলাম শিক্ষা) পদে ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে সেই নিয়োগপত্রের আলোকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে নিয়ে ১৩ লাখ টাকা নিয়েছেন সাবেক ওই অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান।

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর আলম জানান, বাংলাদেশ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জনবল কাঠামো অনুযায়ী গবেষনাগার সহকারি (ইসলাম শিক্ষা) নামে কোন পদ নেই। কলেজ কতৃপক্ষ বলছেন, হযরত আলীর নামে কোন জিপি বোর্ড বা নিয়োগ বোর্ড রেজুলেশন কিছুই নেই। ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে তার নিকট থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ভুক্তভুগি হযরত আলী জানায়, গবেষনাগার সহকারি (ইসলাম শিক্ষা) পদে ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে তার কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা নিয়েছেন সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান। পরে টাকা ফেরেত চাইলে ভুক্তভুগির সাথে একটি এগ্রিমেন্ট করেন এবং টাকা ফেরত দেয়ার আশ^াস দিয়েছেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে একটি চিঠি তদন্ত কমিটির কাছে পাঠানো হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মাদিলাহাট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন মর্মে মোছা: লাবনী আক্তার, মোছা: শাহিনা বেগম, ও মো: শাহিন নামে তিন ভুক্তভুগির অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটিকে অভিযোগের বিষয়ে নিরপেক্ষ সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রমাণসহ ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়। চিঠির অনুলিপি দিনাজপুর জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রেরন করা হয়।

ভুক্তভুগি লাবনী আক্তার জানায়, প্রায় ২ বছর পূর্বে সাবেক অধক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান জানায় যে, তার কলেজে ল্যাব সহকারি পদে লোক নিয়োগ দিবে। নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে আমি আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠনে নিয়োগ পেতে হলে টাকা দিতে হবে, তাহলে চাকরি পাওয়ার সাথে সাথে বিল-বেতন পাওয়া যাবে। তিনি কৌশলে আমার কাছ থেকে দুই দফায় নগদ দশ লক্ষ টাকা নেয়। তার কলেজে ল্যাব সহকারি পদটি শুন্য না থাকা সত্বেও আমাকে ওই পদে নিয়োগ দেন। পরে আমার টাকা ফেরৎ দিতে অথবা আমার বিল/বেতন করে দেওয়ার কথা বললে বিভিন্ন টালবাহানা করে সময় ক্ষেপন করেন এবং বিভিন্ন হুমকি প্রদান করেন।

ভুক্তভোগী চাকরি প্রত্যাশীরা বলেন, চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই অধ্যক্ষ তাদের কাছ থেকে সুকৌশলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার কাছে থেকে টাকা ফেরত চাইলেও তিনি টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। তিনি বর্তমানে পদত্যাগ করে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন, ফোনও ধরেনা, এমনকি তার বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা।

বিষয়টি নিয়ে সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, যখন যে দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সরকারি দলে থাকে সে দলের নেতা বা এমপি, মন্ত্রীর বাইরে কোন প্রতিষ্ঠান প্রধান বাংলাদেশে কিছু করতে পারছে? আমি টাকা নিয়ে কাউকে নিয়োগের কনফেমশন দিতে পারব? ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে গবেষনাগার সহকারি (ইসলাম শিক্ষা) পদে নিয়েগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ পত্রে তো আমারি সই থাকবে। কোন পদ আছে বা নাই সেটা অফিসিয়াল ব্যাপার। কোন পদ থাকে আর কোন পদ যে নাই এগুলো বিতর্কিত বিষয়, এগেুলো নিয়ে আলটিমেট ডিসিশন কেউ দিতে পারবেনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জনবল কাঠামো সম্পর্কে জানো? আমি যদি প্রমান করে দিতে পারি? তুমি কি আমার বিচার করতে চাচ্ছো? তুমি তো আমার কথা রেকর্ড করতেছো এবং কার ইন্দোনে করতেছো সেটও জানি। তাই আমাকে মোবাইলে এসমস্ত কথা বলে কোন লাভ নাই। তিনি বলেন, সাংবাদিক মানে জার্নালিষ্ট, দিনাজপুর জেলায় কোন জার্নালিষ্ট নাই আমার জানামতে। তোমরা রিপোর্টার, তোমার রিপোর্ট করার দায়ীত্ব ঠিক আছে। আর তুমি আমার এগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছো, এসম্পর্কে প্রশ্ন তোলার অধিকার তোমার নাই। আমি সেটা জানাতে পারলাম না দুঃখিত বলে ফোন কেটে দেন।

মাদিলা হাট কলেজের পরিচালনা কমিটির (গর্ভনিং বডি) এর সদস্য সচিব ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধক্ষ্য আবু শহিদ জানায়, ইতি পূর্বেও টাকা আত্মসাতের দায়ে ওই অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানকে গর্ভনিং বডি (জিবি) সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে ওই অধ্যক্ষ কোর্টে মামলা করলে বিজ্ঞ আদালত তাঁর সাময়িক বরখাস্ত বৈধ ঘোষনা করলেও আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দিনাজপুর ৫ আসনের সাবেক এমপি মরহুম এ্যাডঃ মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার আদালতের রায়কে তোয়াক্কা না করেই, ওই অধ্যক্ষকে পুনরায় মাদিলাহাট কলেজের অধ্যক্ষ পদে বসিয়ে দেন। এর পরেই শুরু হয় তাঁর নিয়োগ বানিজ্যসহ টাকা আত্মসাতের মহোৎসব।

কথা বললে তদন্ত কমিটির আহবায়ক উপজেলা পল্লি উন্নয়ন (বিআরডিবি) কর্মকর্তা বিধু ভূষন রায় জানায়, বিষয়টি নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে আমাদের দায়ীত্ব দেয়া হয়েছিল। আমরা তদন্তের কাজ শেষ করে এক সপ্তাহ আগে লিখিত বিস্তারিত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর জমা দিয়েছি, বিষয়টি এখন তিনি দেখবেন। তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার জানান, প্রথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাদিলা হাট কলেজের পরিচালনা কমিটির (গর্ভনিং বডি) এর আহবায়ক মীর মো. আল কামাহ্ তমাল বলেন, মাদিলাহাট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানেরর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। তদন্ত রির্পোট অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে পরিত্যক্ত লোহা বিক্রি

চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে ভূয়া নিয়োগপত্র

ফুলবাড়ীতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাত্বের অভিযোগ

Update Time : ০১:৪৮:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কলেজের বিভিন্ন পদে চাকুরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে কয়েকজন ব্যাক্তির কাছ থেকে অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে মাদিলাহাট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় একাধিক ভুক্তভুগিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে (গত ২৭ আগষ্ট) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গভনিং বডির আহবায়ক মীর মোঃ আল কামাহ তমাল উপজেলা পল্লী উন্নয়ন (বিআরডিবি) কর্মকর্তা বিধু ভূষন রায়কে আহবায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

এদিকে গত ৫ আগষ্ট গণঅভ্যুথানে সরকরার পরিবর্তন হওয়ার পর ওই অধ্যক্ষ কলেজের গভনিং বডির আহবায়কের নিকট পদত্যাগ করে সটকে পড়েছেন। এখন অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভুগিরা।

চাকুরীর প্রত্যাশী ভুক্তভুগিরা জানায়, চাকুরীর প্রত্যাশায় অধ্যক্ষের দাবি মেনে তাকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মানুষের উপস্থিতিতে নগদ টাকা প্রদান করেন তারা। নিজেদের জমিসহ সহায় সম্বল বিক্রি করে চাকুরির জন্য অধ্যক্ষের চাহিদা মতো টাকা দেন তারা, কিন্তু পর্বর্তীতে বিল-বেতন না হলে কারন হিসেবে জানতে পারেন ওই পদগুলোতে আগে থেকেই লোক নিয়োগ দেয়া আছে। এছাড়া আরও এক যুবককে গবেষনাগার সহকারি (ইসলাম শিক্ষা) পদে ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাবেক ওই অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান। খোজ নিয়ে জানাগেছে, বাংলাদেশ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জনবল কাঠামো অনুযায়ী গবেষনাগার সহকারি (ইসলাম শিক্ষা) নামে কোন পদ নেই।

জানাগেছে, জৈনক মোছা: শাহিনা বেগম, মোছা: লাবনী আক্তার ও মো: শাহিন নামের তিন চাকরি প্রত্যাশীকে ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই অধ্যক্ষ। নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর তারা জানতে পারেন, ওই পদে অন্য ব্যাক্তিদের পুর্বেই নিয়োগ দেয়া আছে । সহায় সম্বল হারিয়ে ভুক্তভোগী ওই তিন চাকুরী প্রত্যাশী ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ফুলবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ ফুলবাড়ী উপজেলার মাদিলাহাট কলেজে কিছু শুন্য পদে নিয়োগ দেয়া হবে মর্মে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। সে অনুযায়ী তারা ওইসব পদের জন্য প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন। অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ার যথারীতি শেষ করেন, পর্বর্তীতে বিলের জন্য আবেদন করতে গেলে জানতে পারেন, ওই পদে পূর্বেই অন্য ব্যাক্তিদের নিয়োগ দেয়া আছে ।

কলেজের অধ্যক্ষ শূন্য পদ দেখিয়ে ল্যাব সহকারী (ভুগোল) পদে লাবনী আকতারের নিকট ১০ লাখ টাকা, অফিস সহায়ক পদে শাহিনা বেগমের নিকট ১৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং নিরাপত্তা কর্মী পদে শাহিনের নিকট থেকে ১৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, এদিকে হযরত আলী নামে আরও এক যুবককে গবেষনাগার সহকারি (ইসলাম শিক্ষা) পদে ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে সেই নিয়োগপত্রের আলোকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে নিয়ে ১৩ লাখ টাকা নিয়েছেন সাবেক ওই অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান।

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর আলম জানান, বাংলাদেশ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জনবল কাঠামো অনুযায়ী গবেষনাগার সহকারি (ইসলাম শিক্ষা) নামে কোন পদ নেই। কলেজ কতৃপক্ষ বলছেন, হযরত আলীর নামে কোন জিপি বোর্ড বা নিয়োগ বোর্ড রেজুলেশন কিছুই নেই। ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে তার নিকট থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ভুক্তভুগি হযরত আলী জানায়, গবেষনাগার সহকারি (ইসলাম শিক্ষা) পদে ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে তার কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা নিয়েছেন সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান। পরে টাকা ফেরেত চাইলে ভুক্তভুগির সাথে একটি এগ্রিমেন্ট করেন এবং টাকা ফেরত দেয়ার আশ^াস দিয়েছেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে একটি চিঠি তদন্ত কমিটির কাছে পাঠানো হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মাদিলাহাট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন মর্মে মোছা: লাবনী আক্তার, মোছা: শাহিনা বেগম, ও মো: শাহিন নামে তিন ভুক্তভুগির অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটিকে অভিযোগের বিষয়ে নিরপেক্ষ সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রমাণসহ ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়। চিঠির অনুলিপি দিনাজপুর জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রেরন করা হয়।

ভুক্তভুগি লাবনী আক্তার জানায়, প্রায় ২ বছর পূর্বে সাবেক অধক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান জানায় যে, তার কলেজে ল্যাব সহকারি পদে লোক নিয়োগ দিবে। নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে আমি আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠনে নিয়োগ পেতে হলে টাকা দিতে হবে, তাহলে চাকরি পাওয়ার সাথে সাথে বিল-বেতন পাওয়া যাবে। তিনি কৌশলে আমার কাছ থেকে দুই দফায় নগদ দশ লক্ষ টাকা নেয়। তার কলেজে ল্যাব সহকারি পদটি শুন্য না থাকা সত্বেও আমাকে ওই পদে নিয়োগ দেন। পরে আমার টাকা ফেরৎ দিতে অথবা আমার বিল/বেতন করে দেওয়ার কথা বললে বিভিন্ন টালবাহানা করে সময় ক্ষেপন করেন এবং বিভিন্ন হুমকি প্রদান করেন।

ভুক্তভোগী চাকরি প্রত্যাশীরা বলেন, চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই অধ্যক্ষ তাদের কাছ থেকে সুকৌশলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার কাছে থেকে টাকা ফেরত চাইলেও তিনি টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। তিনি বর্তমানে পদত্যাগ করে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন, ফোনও ধরেনা, এমনকি তার বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা।

বিষয়টি নিয়ে সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, যখন যে দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সরকারি দলে থাকে সে দলের নেতা বা এমপি, মন্ত্রীর বাইরে কোন প্রতিষ্ঠান প্রধান বাংলাদেশে কিছু করতে পারছে? আমি টাকা নিয়ে কাউকে নিয়োগের কনফেমশন দিতে পারব? ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে গবেষনাগার সহকারি (ইসলাম শিক্ষা) পদে নিয়েগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ পত্রে তো আমারি সই থাকবে। কোন পদ আছে বা নাই সেটা অফিসিয়াল ব্যাপার। কোন পদ থাকে আর কোন পদ যে নাই এগুলো বিতর্কিত বিষয়, এগেুলো নিয়ে আলটিমেট ডিসিশন কেউ দিতে পারবেনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জনবল কাঠামো সম্পর্কে জানো? আমি যদি প্রমান করে দিতে পারি? তুমি কি আমার বিচার করতে চাচ্ছো? তুমি তো আমার কথা রেকর্ড করতেছো এবং কার ইন্দোনে করতেছো সেটও জানি। তাই আমাকে মোবাইলে এসমস্ত কথা বলে কোন লাভ নাই। তিনি বলেন, সাংবাদিক মানে জার্নালিষ্ট, দিনাজপুর জেলায় কোন জার্নালিষ্ট নাই আমার জানামতে। তোমরা রিপোর্টার, তোমার রিপোর্ট করার দায়ীত্ব ঠিক আছে। আর তুমি আমার এগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছো, এসম্পর্কে প্রশ্ন তোলার অধিকার তোমার নাই। আমি সেটা জানাতে পারলাম না দুঃখিত বলে ফোন কেটে দেন।

মাদিলা হাট কলেজের পরিচালনা কমিটির (গর্ভনিং বডি) এর সদস্য সচিব ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধক্ষ্য আবু শহিদ জানায়, ইতি পূর্বেও টাকা আত্মসাতের দায়ে ওই অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানকে গর্ভনিং বডি (জিবি) সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে ওই অধ্যক্ষ কোর্টে মামলা করলে বিজ্ঞ আদালত তাঁর সাময়িক বরখাস্ত বৈধ ঘোষনা করলেও আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দিনাজপুর ৫ আসনের সাবেক এমপি মরহুম এ্যাডঃ মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার আদালতের রায়কে তোয়াক্কা না করেই, ওই অধ্যক্ষকে পুনরায় মাদিলাহাট কলেজের অধ্যক্ষ পদে বসিয়ে দেন। এর পরেই শুরু হয় তাঁর নিয়োগ বানিজ্যসহ টাকা আত্মসাতের মহোৎসব।

কথা বললে তদন্ত কমিটির আহবায়ক উপজেলা পল্লি উন্নয়ন (বিআরডিবি) কর্মকর্তা বিধু ভূষন রায় জানায়, বিষয়টি নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে আমাদের দায়ীত্ব দেয়া হয়েছিল। আমরা তদন্তের কাজ শেষ করে এক সপ্তাহ আগে লিখিত বিস্তারিত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর জমা দিয়েছি, বিষয়টি এখন তিনি দেখবেন। তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার জানান, প্রথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাদিলা হাট কলেজের পরিচালনা কমিটির (গর্ভনিং বডি) এর আহবায়ক মীর মো. আল কামাহ্ তমাল বলেন, মাদিলাহাট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানেরর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। তদন্ত রির্পোট অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।