রাজশাহীর তানোরে বিসমিল্লাহ হিমাগারে রাখা আলুতে গজিয়েছে গাছ, মুখ নষ্ট ও ওজনেও হয়েছে কম বলে অভিযোগ উঠেছে। হিমাগারটি প্রথম বার আলু রেখেই এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছেন বলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি। আবার হিমাগারে রাখা আলুর এমন অবস্থা মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। তদারকি না করার কারনে হিমাগার ইচ্ছে মত সবকিছু করে থাকে বলেও সুত্র নিশ্চিত করেন। তবে গাছ গজানোর চেয়ে মুখ নষ্ট হয়েছে বেশির ভাগ আলুতে। ফলে প্রচুর লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষক দের।

জানা গেছে, গত আলু মৌসুমে প্রথমবারের মত চালু হয় বিসমিল্লাহ নামের হিমাগারটি। তানোর টু চৌবাড়িয়া রাস্তার মালার মোড়ের উত্তরে এবং মুল রাস্তার পশ্চিম দিকে বিসমিল্লাহ নামক হিমাগারটি তিন ফসলী কৃষি জমিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। জমির শ্রেনীও পরিবর্তন করা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী রাজশাহী শহরের ঠিকাদার বজলুর রশিদ বিরুদ্ধে ।

তানোর পৌর এলাকার কৃষক টিপু জানান, রাসেদুলের নামে বুকিং করা ছিল। আমি ৮০০ বস্তা আলু ওই বুকিংয়ে রেখেছিলাম। গত প্রায় ২০ দিন আগে আলু বিক্রি করার জন্য মেঝেতে ফেলা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ আলুতে গাছ বের হয়েছে এবং মুখ নষ্ট হয়ে গেছে। কি কারনে এরকম হতে পারে জানতে চাইলে তিনি জানান, হাওয়া ও গ্যাস কম এবং যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে আলুর এঅবস্থা হয়। হাওয়া ও গ্যাস কম দিলে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।

শুধু তাই না প্রতি বস্তায় ৬০ কেজি করে ওজন হওয়ার কথা। কিন্তু প্রতি বস্তায় ৫২ কেজি করে ওজন হয়েছে। ৮০০ বস্তা আলুর বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। আমিসহ যে সকল আলু রাখা কৃষকদের এমন অবস্থা হয়েছে তারা সবাই মিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
রাসেদুল নামের আরেক কৃষক জানান, সম্প্রতি ৭২ বস্তা আলু বিক্রি করার জন্য মেঝেতে ফেলা হয়। প্রায় আলুর মুখ নষ্ট হয়েছে। তবে আমার আলুতে গাছ গজায়নি। ৭২ বস্তা আলুর বিপরীতে ৫৭ বস্তা টিকেছে। কারন বস্তা প্রতি ৮/১০ কেজি করে আলু কম। এটা হিমাগার কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অনিয়মের কারনে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

সরেজমিনে তদন্ত করলেই হিমাগারের অনিয়ম দূর্নীতি ধরা পড়বে বলে তিনি নিশ্চিত করেন। এদুই কৃষক আরো জানান, আলু চাষ মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ ও খরচ প্রচুর, শ্রম দিতে হয় দিনরাত। জীবনের ঝুকি ঋন করে প্রায় সবাই আলু চাষ করে থাকেন। লাভের জন্য এত ঝুকি নেয়া হয় আলু চাষে। গত মৌসুমে এক বিঘা আলু রোপন থেকে উত্তোলন পর্যন্ত প্রকার ভেদে ৫০/৬০ হাজার টাকা করে খরচ হয়। হিমাগারে আলু রাখা হয় সংরক্ষণের জন্য। যাতে করে আলু ভালো থাকে। কিন্তু সংরক্ষণের জায়গা থেকে যদি আলু নষ্ট হয় তাহলে কৃষকরা যাবে কোথায়। তারা তো ভাড়া কম নেয় না।

স্থানীয়রা জানান, বিসমিল্লাহ হিমাগারের মালিকের বাড়ি রাজশাহী শহরে। সে অত্যান্ত প্রভাবশালী। তিনি সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় ঠিকাদারি করতেন। মনে হয় হিমাগার ব্যবসায় তার অভিজ্ঞতা কম। তাছাড়া প্রথম বারেই কেন আলুর সমস্যা হবে।

এবিষয়ে জানতে হিমাগারের ম্যানেজার হেলালের সাথে মোবাইলে কথা বলা হলে তিনি জানান, আমাদের হিমাগারে এরকম হওয়ার কথা না, আপনি এসে দেখতে পারেন। গত বৃহস্পতিবার হিমাগারে গিয়ে ম্যানেজারকে আলুর ছবি দেখিয়ে বলা হলে তিনি জানান, কার আলু, কার নামে বুকিং, নম্বর কত ইত্যাদি ইত্যাদি। তাকে বলা হয় রাসেদুলের নামে বুকিং, নম্বর ২০১০। তখন ম্যানেজার নিরব হয়ে মালিক বজলুর রশিদের সাথে কথা বলতে বলেন।
মালিক বজলুর রশিদ কে বিষয় টি সম্পর্কে বলা হলে তিনিও অস্বীকার করে বলেন, যার আলু, যে সময় এসব ধরা পড়েছে ওই সময় বলতে হবে বলেও দাম্ভিকতা দেখান তিনি।

আলু রাখা বেশকিছু কৃষকরা জানান, হিমাগারের কাছে আলু রাখা ব্যক্তিরা চরমভাবে জিম্মি। কারো ক্ষতি হলেও কিছুই বলার থাকেনা। কারন বাকি আলু যদি নষ্ট করে দেয়। মুলত একারনে হিমাগার মালিকদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যায় না। বিশেষ করে প্রথমবার চালুর সময় এরকম হয়না, কিন্তু বিসমিল্লাহ হিমাগার বিসমিল্লাহ গলদ দেখিয়েছে।

এবিষয়ে জানতে উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুল ইসলামের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তারা কেউ রিসিভ করেননি।