Dhaka ০৩:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাহিরপুরের ২ সীমান্তে ৮ঘন্টায় কোটি টাকার মালামাল পাচাঁরের অভিযোগ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ২ সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে গত ৮ ঘন্টায় কয়েক কোটি টাকার বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু রাজস্ব ফাকি দিয়ে পাচাঁরকৃত কোন মালামাল আটকের খবর পাওয়া যায়নি। তাই ২ সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধসহ চোরাকারবারীদের গ্রেফতারের জন্য র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- আজ শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ভোর রাত থেকে তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট সীমান্তের পুলিশ ক্যাম্প ও খনি প্রকল্পের স্কুলের পিছন দিয়ে প্রায় ৫শ মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে পুটিয়া গ্রামে অবস্থিত খেতা শাহর মাজারের কাছে ৩৫টি বারকি নৌকা দিয়ে দুপুর পর্যন্ত টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের পিছনে অবস্থিত বিভিন্ন ডিপুতে নিয়ে মজুত করে চোরাকারবারীরা।

একই সময়ে এই সীমান্তের বরুঙ্গা ছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে পাচাঁরকৃত ১শ মেঃটন চুনাপাথর ও ৩শ মেঃটন কয়লা ২৫টি ঠেলাগাড়ি ও ১৫টি মোটর সাইকেলে বোঝাই করে বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন জয়বাংলা বাজারের কাঠের ব্রিজের পাশে ও শাহপরানের বাড়িতেসহ তোতা মিয়ার ডিপুর পাশে নিয়ে মজুত করে চোরাকারবারীরা। এজন্য পাচাঁরকৃত প্রতিবস্তা চোরাই কয়লা থেকে ৫০টাকা ও প্রতি ঠেলাগাড়ি চুনাপাথর থেকে ১শত টাকা করে বিজিবি ক্যাম্পের নাম ভাংগিয়ে চাঁদা উত্তোলন করে সোর্স পরিচয়ধারী কুদ্দুস মিয়া ও আক্কল আলী।

সেই সাথে থানা-পুলিশে নাম ভাংগিয়ে পাচাঁরকৃত প্রতিটন কয়লা থেকে ১৫শ টাকা করে চাঁদা নিয়ে ৬টি ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করেছে সোর্স পরিচয়ধারী নবাব মিয়া,শফিকুল ইসলাম ও মাসুক মিয়াগং।

অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাত ২টা আজ শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার ১২০৩ পিলার সংলগ্ন আনন্দনগর এলাকা দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে একাধিক চোরাচালান মামলার আসামী শাহিবুর মিয়া ২৬০কার্টুন ফুছকা ও ৮০ বস্তা চিনি,ফখর উদ্দিন ফক্কর ২শ কার্টুন ফুছকা ও ৪০বস্তা চিনি, তোতা মিয়া ১৬০কার্টুন ফুছকা ও ৫০বস্তা চিনি,শফিকুল ইসলাম ভুটকুন ১৮০কার্টুন ফছকা ও ৭০বস্তা চিনি,মিরাজ আলী ২৫০কার্টুন ফুছকা ও ৩৫বস্তা চিনি,আক্কল আলী ২২০কার্টুন ফুছকা ও ৩৪বস্তা চিনি,নিজাম মিয়া ১৮০কার্টুন ফুছকা ও ৪০বস্তা চিনি,রবীকুল মিয়া ১৬০বস্তা ফুছকা ও ২০বস্তা চিনি,বুলবুল মিয়া ২৭০কার্টুন ফুছকা ও ৫৫বস্তা চিনি ও হুমায়ুন মিয়া ১টি ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে প্রায় ৫ লাখ টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন প্রকার কসমেটিসসহ মোট ২২জন চোরাকারবারী কোটি টাকা মালামাল পাচাঁর করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া এই সীমান্তের রাজাই এলাকা দিয়ে লাল মিয়া,আকরাম,সাদ্দাম,জানু মিয়া,সাগর মিয়াগং ভারত থেকে মদ,গাঁজা,সুপারী ও বিড়ি পাঁচার করাসহ নয়াছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে চোরাকারবারী কালাম মিয়া,জহির মিয়া,হারুন মিয়া,নজরুল মিয়া,রুসমত আলীগং ভারত থেকে ২শ মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে মোটর সাইকেল যোগে পাশের টেকেরঘাট সীমান্তে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইপি সদস্য কফিল উদ্দিন বলেন- আমার বাড়ির সামনে দিয়ে চোরাকারবারীরা অটোরিক্স বোঝাই করে চিনি ও ফুছকাসহ বিভিন্ন মালামাল মোটর সাইকেলে করে বাদাঘাট, কামড়াবন্দ, শিমুলতলা ও চানপুর নিয়ে যায়। বিজিবি নামে প্রতি কার্টুন ফুছকা থেকে ১৫০টাকা ও চিনি ১শ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। আমি চোরাচালানের প্রতিবাদ করার কারণে হাবিলদার মিজান চোরাকারবারীদের নিয়ে আমাকে নানান হুমকি দিয়ে গেছে।

সূত্রে জানা যায়, দুই সীমান্ত দিয়ে যখন চোরাচালান হয়, তখন দুই ক্যাম্পে বারবার ফোন করার পরও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না। অথচ র‌্যাব পৃথক অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে মদসহ ৬জনকে ২ সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করেছে। তাই ২ সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

এব্যাপারে চাঁনপুর ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার তাজুল ইসলাম বলেন- আমি রাত ১২টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে ১টা সময় ক্যাম্পে এসে ঘুিময়ে পড়ি,তাই ভারত থেকে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের খবর পাইনি। এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখব। টেকেরঘাট কোম্পানী কমান্ডার আতিয়ার রহমান বলেন-আমাদের ক্যাম্পের কোন সোর্স নাই। যারা পাচাঁরকৃত কয়লা ও চুনাপাথর থেকে বিজিবির নামে চাঁদা তুলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে পরিত্যক্ত লোহা বিক্রি

তাহিরপুরের ২ সীমান্তে ৮ঘন্টায় কোটি টাকার মালামাল পাচাঁরের অভিযোগ

Update Time : ১০:৫৯:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ২ সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে গত ৮ ঘন্টায় কয়েক কোটি টাকার বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু রাজস্ব ফাকি দিয়ে পাচাঁরকৃত কোন মালামাল আটকের খবর পাওয়া যায়নি। তাই ২ সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধসহ চোরাকারবারীদের গ্রেফতারের জন্য র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- আজ শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ভোর রাত থেকে তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট সীমান্তের পুলিশ ক্যাম্প ও খনি প্রকল্পের স্কুলের পিছন দিয়ে প্রায় ৫শ মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে পুটিয়া গ্রামে অবস্থিত খেতা শাহর মাজারের কাছে ৩৫টি বারকি নৌকা দিয়ে দুপুর পর্যন্ত টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের পিছনে অবস্থিত বিভিন্ন ডিপুতে নিয়ে মজুত করে চোরাকারবারীরা।

একই সময়ে এই সীমান্তের বরুঙ্গা ছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে পাচাঁরকৃত ১শ মেঃটন চুনাপাথর ও ৩শ মেঃটন কয়লা ২৫টি ঠেলাগাড়ি ও ১৫টি মোটর সাইকেলে বোঝাই করে বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন জয়বাংলা বাজারের কাঠের ব্রিজের পাশে ও শাহপরানের বাড়িতেসহ তোতা মিয়ার ডিপুর পাশে নিয়ে মজুত করে চোরাকারবারীরা। এজন্য পাচাঁরকৃত প্রতিবস্তা চোরাই কয়লা থেকে ৫০টাকা ও প্রতি ঠেলাগাড়ি চুনাপাথর থেকে ১শত টাকা করে বিজিবি ক্যাম্পের নাম ভাংগিয়ে চাঁদা উত্তোলন করে সোর্স পরিচয়ধারী কুদ্দুস মিয়া ও আক্কল আলী।

সেই সাথে থানা-পুলিশে নাম ভাংগিয়ে পাচাঁরকৃত প্রতিটন কয়লা থেকে ১৫শ টাকা করে চাঁদা নিয়ে ৬টি ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করেছে সোর্স পরিচয়ধারী নবাব মিয়া,শফিকুল ইসলাম ও মাসুক মিয়াগং।

অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাত ২টা আজ শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার ১২০৩ পিলার সংলগ্ন আনন্দনগর এলাকা দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে একাধিক চোরাচালান মামলার আসামী শাহিবুর মিয়া ২৬০কার্টুন ফুছকা ও ৮০ বস্তা চিনি,ফখর উদ্দিন ফক্কর ২শ কার্টুন ফুছকা ও ৪০বস্তা চিনি, তোতা মিয়া ১৬০কার্টুন ফুছকা ও ৫০বস্তা চিনি,শফিকুল ইসলাম ভুটকুন ১৮০কার্টুন ফছকা ও ৭০বস্তা চিনি,মিরাজ আলী ২৫০কার্টুন ফুছকা ও ৩৫বস্তা চিনি,আক্কল আলী ২২০কার্টুন ফুছকা ও ৩৪বস্তা চিনি,নিজাম মিয়া ১৮০কার্টুন ফুছকা ও ৪০বস্তা চিনি,রবীকুল মিয়া ১৬০বস্তা ফুছকা ও ২০বস্তা চিনি,বুলবুল মিয়া ২৭০কার্টুন ফুছকা ও ৫৫বস্তা চিনি ও হুমায়ুন মিয়া ১টি ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে প্রায় ৫ লাখ টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন প্রকার কসমেটিসসহ মোট ২২জন চোরাকারবারী কোটি টাকা মালামাল পাচাঁর করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া এই সীমান্তের রাজাই এলাকা দিয়ে লাল মিয়া,আকরাম,সাদ্দাম,জানু মিয়া,সাগর মিয়াগং ভারত থেকে মদ,গাঁজা,সুপারী ও বিড়ি পাঁচার করাসহ নয়াছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে চোরাকারবারী কালাম মিয়া,জহির মিয়া,হারুন মিয়া,নজরুল মিয়া,রুসমত আলীগং ভারত থেকে ২শ মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে মোটর সাইকেল যোগে পাশের টেকেরঘাট সীমান্তে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইপি সদস্য কফিল উদ্দিন বলেন- আমার বাড়ির সামনে দিয়ে চোরাকারবারীরা অটোরিক্স বোঝাই করে চিনি ও ফুছকাসহ বিভিন্ন মালামাল মোটর সাইকেলে করে বাদাঘাট, কামড়াবন্দ, শিমুলতলা ও চানপুর নিয়ে যায়। বিজিবি নামে প্রতি কার্টুন ফুছকা থেকে ১৫০টাকা ও চিনি ১শ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। আমি চোরাচালানের প্রতিবাদ করার কারণে হাবিলদার মিজান চোরাকারবারীদের নিয়ে আমাকে নানান হুমকি দিয়ে গেছে।

সূত্রে জানা যায়, দুই সীমান্ত দিয়ে যখন চোরাচালান হয়, তখন দুই ক্যাম্পে বারবার ফোন করার পরও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না। অথচ র‌্যাব পৃথক অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে মদসহ ৬জনকে ২ সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করেছে। তাই ২ সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

এব্যাপারে চাঁনপুর ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার তাজুল ইসলাম বলেন- আমি রাত ১২টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে ১টা সময় ক্যাম্পে এসে ঘুিময়ে পড়ি,তাই ভারত থেকে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের খবর পাইনি। এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখব। টেকেরঘাট কোম্পানী কমান্ডার আতিয়ার রহমান বলেন-আমাদের ক্যাম্পের কোন সোর্স নাই। যারা পাচাঁরকৃত কয়লা ও চুনাপাথর থেকে বিজিবির নামে চাঁদা তুলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।