রাজশাহীর তানোরে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত রাস্তায় ভয়ংকর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তের কারনে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা। এলজিইডি অফিস থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে এমন গর্তের সৃষ্টি হলেও কোন নজর নেই কর্তৃপক্ষের। পৌর এলাকার ধানতৈড় মোড়ে এমন ভয়বহ গর্তের সৃষ্টি হয়ে আছে। উপজেলা মোড় থেকে চৌবাড়িয়া পর্যন্ত রাস্তাটি সদ্য নির্মিত হয়। কিন্তু ঠিকদার ও কর্তাবাবুদের অনিয়ম দূর্নীতির কারনে রাস্তায় ভয়ংকর গর্ত হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত না হলে প্রাণহানির মত ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চলাচল কারীরা।
জানা গেছে, উপজেলা মোড় থেকে চৌবাড়িয়া পর্যন্ত রাস্তাটি নতুন ভাবে নির্মাণ করা হয়। চাপড়া থেকে চৌবাড়িয়া পর্যন্ত পুরাতন রাস্তা টেক্টর দিয়ে উল্টিয়ে নামমাত্র নিম্নমানের খোয়া বালি ইট ব্যবহার করা হয়। কার্পেটিংয়ের সময় যত সামান্য পিচ দিলেও বিটুমিন দেয়া হয়নি প্রয়োজন মত। যার কারনে পুরো রাস্তায় ফাটল ও বিভিন্ন জায়গা দেবে গেছে এবং অনেক জায়গায় পিচ উঠেছে। উপজেলা মোড় থেকে চাপড়া পর্যন্ত পুরাতন রাস্তা না উল্টিয়ে সিলকোট করা হয়। একারনে ধানতৈড় মোড়ের গর্ত হওয়া জায়গায় প্রথমে পিচ খোয়া উঠে কিছুটা গর্ত হয়। ওই সময় লাল নিশানা দেয়া হয়। কার্পেটিংয়ের পরপরই এমন ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয়নি। এতে করে ধানতৈড় মোড়ের ওই জায়গা ভয়ংকর গর্ত হয়ে পড়েছে। সোমবার সকাল প্রায় ১১ টার দিকে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। মারাত্মক আহত হয় পথচারী। মোড়ের ব্যবসায়ী জসিম, মুজাহিদসহ অনেকে জানান, উপজেলা এলজিইডি অফিস থেকে খুব বেশি হলে এক কিলোমিটার হবে। কিন্তু কর্মকর্তাদের কোন নজর নেই। রাস্তায় কার্পেটিং করার দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে গর্ত হওয়া শুরু করে। তখনই ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে পড়ে জায়গাটি। সোমবার সকালে দূর্ঘটনা হয় শুধু মাত্র গর্তের কারনে। তানোর উপজেলা মোড় থেকে চৌবাড়িয়া পর্যন্ত ১০.১৪ কিলোমিটার রাস্তাটি নতুন ভাবে কার্পেটিং করা হয়। যদিও চাপড় থেকে চৌবাড়িয়া পর্যন্ত এজিং ডাবলু, বিএম ও প্রাইম বোর্ড করে কার্পেটিং করা হয়। কিন্তু উপজেলা মোড় থেকে চাপড় পর্যন্ত হ্যারো ট্যাক্টর দিয়ে পুরাতন রাস্তা উল্টিয়ে কয়েকদিন রাখার পরে পিচ দিয়ে কার্পেটিং করা হয়। যার কারনেই অল্প সময়ের মধ্যে রাস্তার অবস্থা বেগতিক হয়ে পড়েছে।
সুত্রে জানা যায়, লোকাল গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট (আরসিআইপি)। অর্থায়নে এডিবি এন্ড গভর্মেন্ট অফ বাংলাদেশ (জিওবি)। রোর্ড আইডি ১৮১৯৪২০০২। কাজের ওয়ার্কাডার দেয়া হয় ২০২০ সালের ৩০ আগস্টে। ঠিকাদারের নাম দেয়া আছে মইনদ্দিন বাসী লিমিটেড, মানেজিং ডিরেক্টর মইনদ্দিন ( বাসী)। ঠিকানা দেয়া আছে ০৭ এইচএমএম রোড, ডোরটানা, যশোর ৭৪০০ যশোর।
কাজের বরাদ্দ ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪৬ টাকা।
কার্যাদেশ মইনদ্দিন পেলেও রাস্তার কাজ করেন রাজশাহী শহরের ঠিকাদার ওয়াসিম।
স্থানীয়রা জানান, কাজটি মইনদ্দিন পেলেও অগ্রিম লাভ দিয়ে ওয়াসিম কিনে করেছেন। যে কোন কাজ কিনে করলে প্রচুর অনিয়ম করতে হয়। তাছাড়া কোন ভাবেই কাজ করতে পারবেনা। রাস্তার দু’ধারে ঘাস লাগাতে হবে। কিন্তু ওয়াসিম কোন ধরনের ঘাষ লাগায়নি। মাঝে মাঝে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাস্তা পরিদর্শনে এলে যে সব জায়গা ভালো আছে সেগুলো দেখিয়ে এবং ভালো মানের আপ্যায়ন করে বিদায় দিয়ে থাকেন ঠিকাদার ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। কার্যাদেশ ২০২০ সালে পেলেও করোনার দোহায়ে অনেক দেরিতে কাজ করেন। যখন কাজ শুরু করেন তখন কাজের মালামালের দাম অনেক বাড়তি। এমন খোড়া অজুহাতে প্রতিটি রাস্তার কাজে অনিয়ম করে করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধানতৈড় মোড়ের মুজাহিদের বালাইনাশকের দোকানের সামনে ও রাস্তার পশ্চিমে ৪/৫ হাত জায়গা গর্ত হয় আছে এবং সামান্য বৃষ্টি হলেও জমা হচ্ছে পানি, বেরিয়ে পড়েছে পুরাতন মাটি। পশ্চিম দিকে উঁচু হয়ে গেছে মাঝে, পূর্ব দিকে ভয়াবহ গর্ত।ভ্যান চালক মামুন, ওহাব, সামাদ, বাবুসহ অনেকে জানান, নতুন রাস্তায় এমন গর্ত কল্পনাতীত। বেশি মালামাল নিয়ে যাওয়া যায়না গর্তের কারনে। আবার চার পাঁচজন লোক থাকলে নামিয়ে দিয়ে পার হতে হয়। খালি গাড়ি নিয়ে যাওয়াও বিপদজনক। নির্মানের সময় ওই জায়গা খনন করে পর্যাপ্ত বালু খোয়া দিতে হত। কিন্তু কিছুই দেয়া হয়নি।
কাজ করা ঠিকাদার ওয়াসিম বলেন, রাস্তার কাজ শেষ করতে পেরেছি এটাই অনেক কিছু। রাস্তা তো সারা জীবন টিকসই হবে না। মানুষের জীবনের গ্যারান্টি নেই তো রাস্তার গ্যারান্টি কে দিবে বলেও দাম্ভিকতা দেখান তিনি। উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমানকে গর্তের বিষয়ে অবহিত করা হলে তিনি জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে খনন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুত্র জানায়, শুধু এরাস্তা না। উপজেলায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। কামারগাঁ ইউপির কচুয়া থেকে হাতিশাইল মোড় পর্যন্ত, তালন্দ সুমাসপুর মোড় হতে বিল্লি হাট পর্যন্ত, মুন্ডুমালা পৌর এলাকার আয়ড়া মোড় হতে বিল্লি হাট পর্যন্ত, সরনজাই বাজার হতে দেবিপুর মোড় হয়ে লালপুর, নারায়নপুর, দিয়ে ইলামদহী হাট হয়ে প্রকাশনগর পর্যন্ত ও তানোর থানা মোড় থেকে শেষ প্রান্ত ধামধুম পর্যন্ত। প্রতিটি রাস্তা নির্মাণ করেন ঠিকাদার ওয়াসিম। প্রতিটি রাস্তার কোন জায়গায় ফাটল, তো কোন জায়গা দেবে গেছে, কোন জায়গার পিচ উঠে পড়েছে। সরেজমিনে তদন্ত করলেই এসব অনিয়ম ধরা পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।