Dhaka ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালিয়াকৈরে বনের অবৈধ স্থাপনা সেচ্ছায় সরিয়ে নিচ্ছেন গ্রামবাসী

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকার পতনের পর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দুটি রেঞ্জের বনের জমিতে প্রায় কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে। অবশেষে এক গ্রামে যৌথ অভিযানের পর অপর কয়েকটি গ্রামে বনবিভাগে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো সেচ্ছায় সরিয়ে নিচ্ছেন গ্রামবাসী।

গ্রামবাসী, বনবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে। পরের দিন বিজয় মিছিল নিয়ে উপজেলার কালিয়াকৈর রেঞ্জ অফিসে হানা দেয় একটি চক্র। লুটে নিয়েছে ওই অফিসে থাকা গুলিসহ ১২টি আগ্নেয় অস্ত্র। এরপর উপজেলার কালিয়াকৈর ও কাচিঘাটা রেঞ্জের বিভিন্ন বিট অফিসের আওতাধীন বিভিন্ন বনে অরাজকতার সৃষ্টি হয়। দেদারছে বনের গাছ কেটে পাচার ও বনের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে বনদস্যু ও ভুমিদস্যুরা। গত দুই মাসে ওই দুটি রেঞ্জে প্রায় কয়েক হাজার বাড়ি-ঘর, দোকানপাট, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে। এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের সুযোগে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্থানীয় দালালরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই টাকার ভাগ গেছেন বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পটেকেও। অবশেষে মাইকিং করে গত বুধবার উপজেলার বোডমিল পাশাগেট গ্রামে দিনব্যাপী যৌথ বাহিনী উচ্ছেদ অভিযান চালায়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন- সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যসহ বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অভিযান চালিয়ে ওই গ্রামে প্রায় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে প্রায় ছয় একর বনের জমি উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা। এরপর ওই নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা এবং উচ্ছেদ অভিযান, বন মামলা ও নতুনের সঙ্গে পুরাতন অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ার ভয়ে আতঙ্কে আছেন বিভিন্ন গ্রামের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীরা। এ কারণে কালিয়াকৈর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পাঁচলক্ষী, বক্তারপুর, রয়েলগ্রীণসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ বনের জমিতে গড়ে উঠা তাদের অবৈধ স্থাপনাগুলো সেচ্ছায় সরিয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার ওই চন্দ্রা বন অফিসের আওতায় এসব অবৈধ স্থাপনা সেচ্ছায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে বিভিন্ন এলাকার অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ, দালাল ও অসাধু বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম জানান, বনের জমি থেকে অবৈধ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিচ্ছে বলছে প্রশাসন। এজন্য আমরা নতুন স্থাপনাগুলো সেচ্ছায় সরিয়ে নিচ্ছি। গত দুই দিনে ১৭টি নতুন স্থাপনা সরিয়ে ফেলেছি। এখনো ১৯ জন লোক নেওয়া হয়েছে, তারা নতুন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন।

চন্দ্রা রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল করিম জানান, যারা সেচ্ছায় বনের জমিতে স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছেন, তাদেরকে স্বাধুবাদ জানাই। নিঃসন্দেহে তারা ভাল কাজ করছেন। এছাড়াও যে সকল দালালরা তাকেরকে বনের জমিতে স্থাপনা নির্মাণে সহযোগিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে বনের জমি রক্ষার্থে আমাদের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ জানান, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে যারা সেচ্ছায় বনের জমি থেকে তাদের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছেন, তাদেরকে আমরা স্বাধুবাদ জানাই। এছাড়াও জনগনের প্রতি আমাদের ম্যাসেস থাকবে তারা প্রত্যেকেই যেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে কোনো অন্যায় কাজে জড়িত না হয়। তবে যারা বনের জমিতে অবৈধ স্থাপনা কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে, তাদের চিহিৃত করা গেলে আইনের আওতায় আনা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

জয়পুরহাটে ৬০ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেফতার

কালিয়াকৈরে বনের অবৈধ স্থাপনা সেচ্ছায় সরিয়ে নিচ্ছেন গ্রামবাসী

Update Time : ০৮:২১:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকার পতনের পর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দুটি রেঞ্জের বনের জমিতে প্রায় কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে। অবশেষে এক গ্রামে যৌথ অভিযানের পর অপর কয়েকটি গ্রামে বনবিভাগে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো সেচ্ছায় সরিয়ে নিচ্ছেন গ্রামবাসী।

গ্রামবাসী, বনবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে। পরের দিন বিজয় মিছিল নিয়ে উপজেলার কালিয়াকৈর রেঞ্জ অফিসে হানা দেয় একটি চক্র। লুটে নিয়েছে ওই অফিসে থাকা গুলিসহ ১২টি আগ্নেয় অস্ত্র। এরপর উপজেলার কালিয়াকৈর ও কাচিঘাটা রেঞ্জের বিভিন্ন বিট অফিসের আওতাধীন বিভিন্ন বনে অরাজকতার সৃষ্টি হয়। দেদারছে বনের গাছ কেটে পাচার ও বনের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে বনদস্যু ও ভুমিদস্যুরা। গত দুই মাসে ওই দুটি রেঞ্জে প্রায় কয়েক হাজার বাড়ি-ঘর, দোকানপাট, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে। এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের সুযোগে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্থানীয় দালালরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই টাকার ভাগ গেছেন বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পটেকেও। অবশেষে মাইকিং করে গত বুধবার উপজেলার বোডমিল পাশাগেট গ্রামে দিনব্যাপী যৌথ বাহিনী উচ্ছেদ অভিযান চালায়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন- সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যসহ বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অভিযান চালিয়ে ওই গ্রামে প্রায় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে প্রায় ছয় একর বনের জমি উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা। এরপর ওই নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা এবং উচ্ছেদ অভিযান, বন মামলা ও নতুনের সঙ্গে পুরাতন অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ার ভয়ে আতঙ্কে আছেন বিভিন্ন গ্রামের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীরা। এ কারণে কালিয়াকৈর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পাঁচলক্ষী, বক্তারপুর, রয়েলগ্রীণসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ বনের জমিতে গড়ে উঠা তাদের অবৈধ স্থাপনাগুলো সেচ্ছায় সরিয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার ওই চন্দ্রা বন অফিসের আওতায় এসব অবৈধ স্থাপনা সেচ্ছায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে বিভিন্ন এলাকার অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ, দালাল ও অসাধু বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম জানান, বনের জমি থেকে অবৈধ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিচ্ছে বলছে প্রশাসন। এজন্য আমরা নতুন স্থাপনাগুলো সেচ্ছায় সরিয়ে নিচ্ছি। গত দুই দিনে ১৭টি নতুন স্থাপনা সরিয়ে ফেলেছি। এখনো ১৯ জন লোক নেওয়া হয়েছে, তারা নতুন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন।

চন্দ্রা রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল করিম জানান, যারা সেচ্ছায় বনের জমিতে স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছেন, তাদেরকে স্বাধুবাদ জানাই। নিঃসন্দেহে তারা ভাল কাজ করছেন। এছাড়াও যে সকল দালালরা তাকেরকে বনের জমিতে স্থাপনা নির্মাণে সহযোগিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে বনের জমি রক্ষার্থে আমাদের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ জানান, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে যারা সেচ্ছায় বনের জমি থেকে তাদের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছেন, তাদেরকে আমরা স্বাধুবাদ জানাই। এছাড়াও জনগনের প্রতি আমাদের ম্যাসেস থাকবে তারা প্রত্যেকেই যেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে কোনো অন্যায় কাজে জড়িত না হয়। তবে যারা বনের জমিতে অবৈধ স্থাপনা কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে, তাদের চিহিৃত করা গেলে আইনের আওতায় আনা হবে।