Dhaka ১১:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফুলবাড়ী সরকারি হাসপাতাল ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দখলে কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে পর্যায়ক্রমে ইমাজেন্সি ডাক্তারের সহযোগী হয়ে ডাক্তারের মাধ্যমে নিজেদের কোম্পানির ঔষধ লেখানোর সুবিধা নিচ্ছেন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। চোখের সামনে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি নিষেধ অমান্য করে ডাক্তারের পাশের চেয়ারে বসে এমন কার্যক্রম চললেও প্রমান চায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মশিউর রহমান।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিন সরকারী বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানীর সেলস-রিপ্রেজেনটেটিভরা তাদের মটরসাইকেল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যত্রতত্র রেখে অনাকাঙ্খিত জটলা করছেন। এতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মক ভাবে বিঘিœত হচ্ছে। তারা হাসপাতালের ভিতরে ইমার্জেন্সিতে সরকারী চেয়ারে বসে,সরকারী রেজিষ্টারে লেখা-লেখির সহযোগীতার ওযুহাতে  কর্তব্যরত ডাক্তার তার কোম্পানির ঔষধ লিখছেন কিনা তা তদারকি করছেন।

এছাড়াও হাসপাতালের ভিতরে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে রুগীদের কাছ থেকে ডাক্তারী ব্যবস্থাপত্র কেড়ে নিয়ে ছবি তুলছে। সরকারী অফিস সময়ের বেশীর ভাগ সকাল ৯ থেকে ৫ টা পর্যন্ত কর্তব্যরত চিকিৎসকদের চেম্বার রিপ্রেজেন্টেটিভদের দখলে থাকায় চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশী সাধারণ রোগীদের ঘন্টার পর ঘন্টা বাইরে অপেক্ষা করতে হয়। রিপ্রেজেনটেটিভদের দেওয়া পরামর্শে প্রেসক্রিপশন লেখার কারনে হাসপাতালে ঔষুধ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগী।

হাসপালে সেবা নিতে আসা পৌর এলাকার থানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা দুখু মিয়া বলেন, আমি আমার ছোট বাচ্ছাকে সাথে নিয়ে সকাল সাড়ে ১০ টায় হাসপালে এসেছি। এসে আধাঘন্টা ধরে ডাক্তার সাহেবের চেম্বারের সামনে দাড়িয়ে আছি তারপরও ওনার ব্যাস্থতা কাটে না। পরে শুনলাম ডাক্তার সাহেব তার কক্ষে রিপ্রেজেনটেটিভদের সাথে কথা বলছেন।  আধাঘন্টা পর ডাক্তারকে আমার রোগী দেখালাম। ডাক্তার আমার রোগীকে ভালো করে না দেখে ঔষুধ লিখে দিলো আমি প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাহিরে আসতেই এখানে থাকা রিপ্রেজেনটেটিভরা আমার প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানা টানি শুরু করে দিলো। প্রেসক্রিপশনে যে ঔষধ লেখা হয়েছে তা হাসপাতালে পাওয়া যায় না।

শিবনগর ঘাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোছা নুরজাহান বলেন, আমি আমার বোনকে নিয়ে এসেছি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছি। এখানে ডাক্তার আমার রোগী দেখে ঔষধ লিখেছে। যে ঔষধ হাসপাতালে নাই। আমরা গরিব মানুষ বাহিরে ঔষধ কেনার ক্ষমতা আমাদের নাই।  এমন অভিযোগ করছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অনেক রোগী ও তার পরিবারের লোকজন ।

ইমাজেন্সি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত ডাক্তার শামীম বলেন, রোগীর চাপ বেশি থাকায় রিপ্রেজেনটেটিভদের সহযোগীতা নিয়ে ভর্তি রেজিষ্ট্রারে লেখিয়ে নিচ্ছি। এবিষয়ে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোতি নেওয়া আছে। এখানে রিপ্রেজেটেটিভ দিয়ে লেখা লেখি করতে হবে কেন সমাজে আরো তো লোক আছে এমন প্রশ্ন করা হলে ডাক্তার শামীম  প্রশ্ন উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।

ফুলবাড়ী হাসপাতাল রিপ্রেজেটেটিভের দখলে। তারাই এখন ইমাজেন্সিতে বসে তাদের ইচ্ছে মতো ঔষধ লেখাতে পারছেন। রিপ্রেজেটেটিভেদের এমন সুবিধা আপনার অনুমোতিতে পাচ্ছে।

এমন প্রশ্ন করা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ডাক্তার মো. মশিউর রহমান বলেন, রিপ্রেজেটেটিভগন যাতে সব সময় হাসপাতালের ডাক্তারদের ভিজিট করাতে আসে না। সে জন্য আমি অনেক নোটিশ করেছি। রিপ্রেজেনটেটিভদের সাথে আলোচনা করেছি কিন্তু তারা কোন কথাই শুনতে চাননা। তারা সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত হাসপাতালে আনাগোনা করে। আমি বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলবো। আপনার অনুমোতিতে ইর্মাজেন্সিতে চেয়ারে বসে পর্যায়ক্রমে রিপ্রেজেনটেটিভ সরকারী রেজিষ্টারের লেখা লেখি করে এই প্রশ্নের জবাবে ডাক্তার মশিউর রহমান বলেন, আমি কাউকে এমন কোন অনুমোতি দেই নাই। ইমার্জেন্সিতে রিপ্রেজেটেটিভ বসার কোন প্রশ্নই আসে না। যদি প্রমান হয়, তাহলে যে ডাক্তার বসিয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ডাক্তার মো. মশিউর রহমান ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্বক্ষণিক উপস্থিত না থেকে তার নিজ এলাকা বিরামপুরে চলে যান।

এ ব্যপারে এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল, স্থানীয় সুধিজন তার বদলীর দাবী করেছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

ফুলবাড়ী সরকারি হাসপাতাল ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দখলে কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই

Update Time : ০৫:৫৪:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে পর্যায়ক্রমে ইমাজেন্সি ডাক্তারের সহযোগী হয়ে ডাক্তারের মাধ্যমে নিজেদের কোম্পানির ঔষধ লেখানোর সুবিধা নিচ্ছেন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। চোখের সামনে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি নিষেধ অমান্য করে ডাক্তারের পাশের চেয়ারে বসে এমন কার্যক্রম চললেও প্রমান চায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মশিউর রহমান।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিন সরকারী বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানীর সেলস-রিপ্রেজেনটেটিভরা তাদের মটরসাইকেল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যত্রতত্র রেখে অনাকাঙ্খিত জটলা করছেন। এতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মক ভাবে বিঘিœত হচ্ছে। তারা হাসপাতালের ভিতরে ইমার্জেন্সিতে সরকারী চেয়ারে বসে,সরকারী রেজিষ্টারে লেখা-লেখির সহযোগীতার ওযুহাতে  কর্তব্যরত ডাক্তার তার কোম্পানির ঔষধ লিখছেন কিনা তা তদারকি করছেন।

এছাড়াও হাসপাতালের ভিতরে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে রুগীদের কাছ থেকে ডাক্তারী ব্যবস্থাপত্র কেড়ে নিয়ে ছবি তুলছে। সরকারী অফিস সময়ের বেশীর ভাগ সকাল ৯ থেকে ৫ টা পর্যন্ত কর্তব্যরত চিকিৎসকদের চেম্বার রিপ্রেজেন্টেটিভদের দখলে থাকায় চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশী সাধারণ রোগীদের ঘন্টার পর ঘন্টা বাইরে অপেক্ষা করতে হয়। রিপ্রেজেনটেটিভদের দেওয়া পরামর্শে প্রেসক্রিপশন লেখার কারনে হাসপাতালে ঔষুধ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগী।

হাসপালে সেবা নিতে আসা পৌর এলাকার থানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা দুখু মিয়া বলেন, আমি আমার ছোট বাচ্ছাকে সাথে নিয়ে সকাল সাড়ে ১০ টায় হাসপালে এসেছি। এসে আধাঘন্টা ধরে ডাক্তার সাহেবের চেম্বারের সামনে দাড়িয়ে আছি তারপরও ওনার ব্যাস্থতা কাটে না। পরে শুনলাম ডাক্তার সাহেব তার কক্ষে রিপ্রেজেনটেটিভদের সাথে কথা বলছেন।  আধাঘন্টা পর ডাক্তারকে আমার রোগী দেখালাম। ডাক্তার আমার রোগীকে ভালো করে না দেখে ঔষুধ লিখে দিলো আমি প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাহিরে আসতেই এখানে থাকা রিপ্রেজেনটেটিভরা আমার প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানা টানি শুরু করে দিলো। প্রেসক্রিপশনে যে ঔষধ লেখা হয়েছে তা হাসপাতালে পাওয়া যায় না।

শিবনগর ঘাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোছা নুরজাহান বলেন, আমি আমার বোনকে নিয়ে এসেছি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছি। এখানে ডাক্তার আমার রোগী দেখে ঔষধ লিখেছে। যে ঔষধ হাসপাতালে নাই। আমরা গরিব মানুষ বাহিরে ঔষধ কেনার ক্ষমতা আমাদের নাই।  এমন অভিযোগ করছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অনেক রোগী ও তার পরিবারের লোকজন ।

ইমাজেন্সি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত ডাক্তার শামীম বলেন, রোগীর চাপ বেশি থাকায় রিপ্রেজেনটেটিভদের সহযোগীতা নিয়ে ভর্তি রেজিষ্ট্রারে লেখিয়ে নিচ্ছি। এবিষয়ে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোতি নেওয়া আছে। এখানে রিপ্রেজেটেটিভ দিয়ে লেখা লেখি করতে হবে কেন সমাজে আরো তো লোক আছে এমন প্রশ্ন করা হলে ডাক্তার শামীম  প্রশ্ন উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।

ফুলবাড়ী হাসপাতাল রিপ্রেজেটেটিভের দখলে। তারাই এখন ইমাজেন্সিতে বসে তাদের ইচ্ছে মতো ঔষধ লেখাতে পারছেন। রিপ্রেজেটেটিভেদের এমন সুবিধা আপনার অনুমোতিতে পাচ্ছে।

এমন প্রশ্ন করা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ডাক্তার মো. মশিউর রহমান বলেন, রিপ্রেজেটেটিভগন যাতে সব সময় হাসপাতালের ডাক্তারদের ভিজিট করাতে আসে না। সে জন্য আমি অনেক নোটিশ করেছি। রিপ্রেজেনটেটিভদের সাথে আলোচনা করেছি কিন্তু তারা কোন কথাই শুনতে চাননা। তারা সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত হাসপাতালে আনাগোনা করে। আমি বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলবো। আপনার অনুমোতিতে ইর্মাজেন্সিতে চেয়ারে বসে পর্যায়ক্রমে রিপ্রেজেনটেটিভ সরকারী রেজিষ্টারের লেখা লেখি করে এই প্রশ্নের জবাবে ডাক্তার মশিউর রহমান বলেন, আমি কাউকে এমন কোন অনুমোতি দেই নাই। ইমার্জেন্সিতে রিপ্রেজেটেটিভ বসার কোন প্রশ্নই আসে না। যদি প্রমান হয়, তাহলে যে ডাক্তার বসিয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ডাক্তার মো. মশিউর রহমান ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্বক্ষণিক উপস্থিত না থেকে তার নিজ এলাকা বিরামপুরে চলে যান।

এ ব্যপারে এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল, স্থানীয় সুধিজন তার বদলীর দাবী করেছেন।