আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি কী হতে পারে তা নিয়ে। কমলা হ্যারিস জয়ী হলে বজায় থাকতে পারে বাইডেনের নীতির ধারাবাহিকতা বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ট্রাম্প বিজয়ী হলে, অভিবাসী, ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরো শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প-কমলা দুজনই। প্রতিরক্ষা খাতের আধুনিকায়নে নানা পরিকল্পনার কথা বলেছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অত্যাধুনিক অস্ত্রের বিকাশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারা। ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান দুজনেরই। অন্যদিকে, কিছু ইস্যুতে দ্বিমতও রয়েছে দুজনের মধ্যে। অন্যতম হলো ইউরোপ ও ন্যাটো। ট্রাম্প ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেনেও কোনো অস্ত্র সহায়তা না দেয়ার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের সামর্থ্য তার রয়েছে বলেও দাবি করেন ট্রাম্প।
শীর্ষ অবস্থানে থাকা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।মার্কিন প্রশাসন কার ওপর কতোটা ছড়ি ঘোরাবে, তা অনেকটা এ নীতির ওপর নির্ভরশীল। আর তাই নির্বাচন-পরবর্তী মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি কী হতে পারে, তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে মানুষের।
এবারের নির্বাচনে যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সকল পূর্বাভাসেই তা বলা হচ্ছে। কে জিতবেন, কে হারবেন তা অনিশ্চিত। চলতি বছরের শুরুতে বিভিন্ন জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও, শেষ দিকে এসে জনসমর্থনের কাঁটা উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করে। সামান্য ব্যবধানে হলেও ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে যান কমলা হ্যারিস। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট কমলা বিজয়ী হলে বাইডেনের নীতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। গেল চার বছরে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতির একটি বড় অংশ ছিল বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেয়া। যদিও, কমলা নিজে তার প্রচারণায় এ বিষয়টিতে খুব একটা গুরত্ব দেননি। অভিবাসী ইস্যুতে বাইডেনের সুরেই কথা বলেছেন কমলা। আবার ফিলিস্তিনিদের অধিকারের ব্যাপারে বেশ সোচ্চার থাকলেও ইসরাইল ইস্যুতে নীতি পরিবর্তনের কোনো আভাস দেননি কমলা। ইউক্রেন ইস্যুতেও তার নীতির কোনো পরবির্তন হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে,সবার আগে আমেরিকা’ এই আপ্তবাক্য আউড়ে ক্ষমতায় আসা ট্রাম্প তার ২০১৭-২১ মেয়াদে অনেকটাই বিশ্বব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার নীতি নেন। এবারের নির্বাচনে জয়ী হলে সেই নীতিই ফিরিয়ে আনতে পারেন এই রিপাবলিকান নেতা। অভিবাসী ইস্যুতে গত মেয়াদে বেশ কঠোর ছিলেন ট্রাম্প। এবারেও তার প্রচারণায় বার বার উঠে এসেছে ইস্যুটি। সংঘাত নয় শান্তি চান, এমন বার্তাও দিয়েছেন ট্রাম্প। তাই ধারণা করা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেন ইস্যুতে সমাধান বের করার চেষ্টা করবেন তিনি। দুই প্রার্থীর মধ্যে কিছু ইস্যুতে মিল রয়েছে। একটি হলো চীন। কমলা ও ট্রাম্প দুজনই চীনকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন। পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসী আচরণ জাপান ও ফিলিপিন্সের মতো মার্কিন মিত্রদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাইওয়ানে চীনা হস্তক্ষেপ নিয়েও বেশ সোচ্চার মার্কিন প্রশাসন। তাদের মধ্যে আর একটি বিষয়ে মিল পাওয়া যায়, তা হলো নব্য উদারনৈতিক অর্থনৈতিক নীতি। দু’জনই এই নীতি প্রত্যাখ্যান করেছেন।