সুনামগঞ্জে গত ৫দিনে পৃথক অভিযান চালিয়ে এক নারীসহ ১০জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও বিজিবি। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক পৃথক মামলা দায়ের করে পৃথক ভাবে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশ,বিজিবি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনে মতো আজ বুধবার (৬ নভেম্বর) ভোর রাত জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের ১২০৫ পিলার সংলগ্ন কবিরের বাড়ির সামনে দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৫০লাখ টাকার ফুছকা, চিনি, কাজু বাদাম, টমেটো, নাসির উদ্দিন বিড়ি ও বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন বসতবাড়িতে মজুত করেছে। এছাড়া এই সীমান্তের মনাইপাড় নদী ও লাউরগড় গ্রামের খাল থেকে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন করে ঠেলাগাড়ি ও লড়ি বোঝাই করে লাউড়গড় বাজারের আশেপাশে মজুত করা হয়েছে। অন্যদিকে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া ও রজনীলাইনসহ টেকেরঘাট সীমান্তের বুরুঙ্গাছড়া, নীলাদ্রীলেক পাড়, টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির পিছন দিয়ে ও লাকমা এলাকা থেকে বিপুল পরিমান কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করে ঠেলাগাড়ি, মোটর সাইকেল ও নৌকা যোগে নিলাদ্রী লেক পাড়ের অবস্থিত একাধিক ডিপুসহ জয়বাংলা বাজারের পাশে অবস্থিত বাশের ব্রিজের কাছে ও তার আশেপাশে মজুত করাসহ ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে নদী পথে নিয়ে গেছে সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা। কিন্তু অবৈধ মালামাল আটকের কোন খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্তের ১২২৯এর ৪নং পিলার সংলগ্ন পেকপাড়া এলাকা দিয়ে ভারত থেকে মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের সময় বিজিবি অভিযান চালিয়ে মোটর সাইকেলসহ চোরাকারবারীকে মোশারফ মিয়া (২৫) কে আটক করে। পরে তার শরীর তল্লাশী করে ১০পিছ ইয়াবাসহ কাতারের ৭ রিয়াল উদ্ধার করা হয়। সে উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের দলিয়া গ্রামের মোস্তাফা কামালের ছেলে। অন্যদিকে এদিন বিকেলে বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা সীমান্তের ধোপাজান-চলতি নদী দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে বালি-পাথর পাচাঁরকারীদের কাছ থেকে বিজিবির নামে চাঁদাবাজি করার অভিযোগে বিজিবির দায়েরকৃত মামলায় সীমান্ত চাঁদাবাজ মোঃ ফরিদ মিয়া (৪৫) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের ডলুরা গ্রামের হাসেম মিয়ার ছেলে।
অপরদিকে গত সোমবার (৪ নভেম্বর) ভোর রাতে তাহিরপুর উপজেলার বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের কচুয়াছড়া, বাগলী নদী, সুন্দরবন ও লামাকাটা এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী হযরত আলী, তার ভাই আলী আকবর, বিশিষ্ট চোরাকারবারী যুবলীগ সভাপতি আল উদ্দিন, যুবলীগ নেতা আইনাল মিয়া, রফ মিয়া ও লেংড়া জামালগং পৃথক ভাবে ভারত থেকে কয়লা ও মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের সময় বিজিবি অভিযান চালায়। ওই সময় ভারত থেকে ফেরার পথে লেংড়া জামাল (৩৮) কে মোটর সাইকেলসহ আটক করে। পরে তার শরীর তল্লাশী করে ১টি মোবাইল ও ২টি সীম উদ্ধার করা হয়। সে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের লামাকাটা গ্রামের আব্দুল হাসিমের ছেলে। অন্যদিকে শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাত ৮টায় মধ্যনগর উপজেলা সীমান্ত দিয়ে মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের খবর পেয়ে পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে ৪৫ পিছ ইয়াবা ও ১৪ পুড়িয়া গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ী নয়ন সরকার (২৪), দীনবন্ধু সরকার (৬৮), কাজল সরকার (৩০) ও রাসেল মিয়া (২৭)কে গ্রেফতার করে। ওই সময় উপজেলার কার্তিকপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের যুবলীগ সভাপতি বিশিষ্ট চোরাকারবারী আলাউদ্দিন সুকৌশলে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা উপজেলার দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের বাসিন্দা। অন্যদিকে এদিন দুপুর ১টায় দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্ত দিয়ে মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে নিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষীপুর ইউনিয়নের চৌকিরঘাট গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার দোকানের পাশে রাস্তায় অভিযান চালায় পুলিশ। ওই সময় ৪শত পিছ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী হযরত আলী(৩৫), জমির হোসেন(৩২) ও পান্না আক্তার(৩০)কে গ্রেফতার করা হয়।
সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক জাকারিয়া কাদির ও দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল হক, তাহিরপুর থানার ওসি দিলোয়ার হোসেন, বিশ^ম্ভরপুর থানার ওসি কাউছার আলম ও মধ্যনগর থানার ওসি সজীব রহমান পৃথক অভিযানে নারীসহ ১০জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান-সীমান্ত চোরাচালান ও মাদক প্রতিরোধের জন্য এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।