ব্রিটিশ কাউন্সিলের ফুলার রোড মিলনায়তনে আজ (০৬ নভেম্বর) ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ ২০২৪’ গবেষণা সিরিজের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। গবেষণা সিরিজটি তৃতীয়বারের মতো প্রকাশ করা হলো; এর আগে ২০১০ ও ২০১৫ সালে আগের দুটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই আয়োজনে সরকারি ও বেসরকারি খাত, দেশি-বিদেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, মিডিয়া ও তরুণ জনগোষ্ঠীর ১২০ জনের বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
তরুণ বাংলাদেশিদের চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি, ও প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ কাউন্সিল এই ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ ২০২৪’ প্রতিবেদন শীর্ষক অর্থবহ গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ করে। দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নীতি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তরুণ জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি, চাহিদা ও প্রতিবন্ধকতা গভীরভাবে উপলব্ধি করাই এ উদ্যোগের লক্ষ্য।
ব্রিটিশ কাউন্সিল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হেলেন সিলভেস্টার তার স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন, তিনি বলেন, “আজ আমরা নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ রিপোর্ট ২০২৪ প্রকাশ করতে পেরে গর্বিত। এ রিপোর্ট তরুণদের অগ্রগতির চালিকাশক্তি হিসেবে তাদের সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। সরকার, বেসরকারি খাত এবং সুশীল সমাজের সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে শিক্ষা, দক্ষতা, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি এবং নাগরিক অংশগ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্রিটিশ কাউন্সিল।
নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ ২০২৪-এর ফলাফল এবং সারসংক্ষেপ সবার সামনে উপস্থাপন করেন এমঅ্যান্ডসি সাচি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসেসের ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর অব রিসার্চ আইবেক ইলিয়াসভ। এই গবেষণাতে নানা শ্রেণি ও পেশার ১৮-৩৫ বছর বয়সী মোট ৩,০৮১ জন মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। উত্তরদাতাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসে; উদাহরণস্বরূপ, প্রায় অর্ধেক অংশগ্রহণকারী (৪৬%) লিঙ্গ-বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছে, বিশেষ করে নারীরা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে।
যদিও তরুণদের মধ্যে বাংলাদেশি জাতীয়তার গর্ব ও চেতনার দৃশ্যমান প্রতিফলন রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের আশাবাদ ২০১৫ সালে ৬০ শতাংশ ছিল, ২০২৪-এ তা কমে হয়েছে ৫১ শতাংশ। ৪২ শতাংশ তরুণের কাছে বেকারত্ব একটি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো বিষয়; এছাড়া, ৫৫ শতাংশ জানিয়েছেন তারা পড়াশুনা বা কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ইচ্ছুক, বিশেষ করে, সৌদি আরব (২৭%) ও কানাডায় (১৮%)। চাকরির সু্যােগ কম থাকার কারণে এখানে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রত্যাশা বেড়েছে, প্রতি ১০ জন বাংলাদেশি তরুণের ৪ জনই (৪৪%) আগামি ৫ বছরের মধ্যে নিজেদের ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। একইসাথে, ফলাফল থেকে আরও দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ তরুণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আরও আস্থা আনা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন; যেখানে নাগরিক নেতৃত্বের অভাব থাকায় থাকায় নিজেদের কমিউনিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুক্ত হন মাত্র ১৭ শতাংশ তরুণ।
আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের তরুণদের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করে যুক্তরাজ্য সরকার। আমি নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ রিপোর্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আনন্দিত। এই প্রতিবেদন তরুণদের কণ্ঠস্বরকে আরও জোরালো করেছে এবং তরুণ প্রজন্মের ক্ষমতায়নে আমাদের সমন্বিত দায়িত্বকেও তুলে ধরেছে। নীতি, বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আজ যে সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, তা নির্ধারণ করবে কতটা সফলভাবে আগামী প্রজন্ম তাদের সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করতে পারবে এবং বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ। তিনি বলেন, “নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ রিপোর্ট শুধুমাত্র একটি বিশ্লেষণ নয়, এটি বাংলাদেশের অর্জনগুলোর প্রতিফলন। আমরা আপনাদের কণ্ঠস্বরকে সমর্থন দিতে, শক্তিশালী করতে এবং আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেনো আপনারা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে পারেন যেখানে সকল মানুষের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।
পরে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কালচারাল এঙ্গেজমেন্টের রিসার্চ অ্যান্ড ইনসাইটস ডিরেক্টর ক্রিস্টিন উইলসনের পরিচালনায় ‘স্কিলস ফর দ্য ফিউচার’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন জয়া চৌধুরী, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর (শিক্ষা), এডিবি; সৈয়দ রাশেদ আল জায়েদ জশ, সিনিয়র ইকোনমিষ্ট, বিশ্বব্যাংক; শুভ্রা রায়, পরিচালক (সার্টিফিকেশন), ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনএসডিএ); এবং সৈয়দা আফজালুন নেসা, হেড অফ সাস্টেনিবিলিটি, এইচএসবিসি বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে তরুণদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বেশকিছু কার্যকর সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে- দক্ষতার ব্যবধান কমিয়ে আনতে ভোকেশনাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ জোরদার করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ তৈরি করা, সুশাসন নিশ্চিতে তরুণদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা, লিঙ্গ-সমতা নিশ্চিত করা এবং সামাজিক বৈষম্যগুলোকে চিহ্নিত করা।
এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ও সুপারিশগুলো মূল অংশীজনদের জানাতে ধারাবাহিকভাবে বেশকিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে ব্রিটিশ কাউন্সিল।