ভোলায় কীটনাশক এবং ফাঁদ ব্যবহার করেও ইঁদুরের আক্রমণ ঠেকাতে পারছেন না কৃষকরা। আমন ধানের ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। ক্ষেতের ধান গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে ইঁদুর। আমন ধানের ক্ষেতে ইঁদুরের এমন বেপরোয়া আক্রমণে এখন রীতিমতো কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। আমন ক্ষেতে ইঁদুরের এমন আক্রমনে দুশ্চিন্তাই রয়েছেন কৃষকরা । জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসূমে ভোলা জেলায় ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩২ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে ভোলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠজুড়ে কেবল সবুজের সমারোহ। তবে সেই সবুজের বুকে কেউ যেন ক্ষত চিহ্ন এঁকে দিয়েছে, ইঁদুরের আক্রমণে দূর থেকে আমনের ক্ষেতে চোখ পড়লে এমনটাই মনে হচ্ছে। কৃষকরা ইঁদুর দমন করতে নানা ধরনের ওষুধ ও ফাঁদ ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। ক্ষেতে ধান গাছের অবস্থা ভালো হলেও শেষ পর্যন্ত ইঁদুরের এমন বেপরোয়া আক্রমণে ফলনের ক্ষতির চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
এ সময় কথা হয় একাধিক কৃষকের সাথে। সদর উপজেলার কৃষক জহিরুল ইসলাম বলে বলেন, ২০ শতাংশ ধান ক্ষেতে দুইবার ইঁদুর মারার ঔষুধ দিলাম কোন কাজ হলো না। ক্ষেতের ধানের শীষ কাটতেছে ইঁদুর। স্প্রে করলাম, ঔষুধ দিয়ে কাজ হচ্ছে না। ইঁদুরের গর্তের ভিতরে ঔষুধ দিয়ে ও ফাঁদ পেতে ১০টি ইঁদুর মারছি। এই ধান ঘরে তোলার আগ অবধি ইঁদুরের উপদ্রব কমবে না। প্রতিদিন ফসলের ক্ষতি করে।
ভেলুমিয়া ইউনিয়নের গাজীরচর এলাকার কৃষক ফারুক মিয়া বলেন, জমির সাথেই বাঁশ ঝাড়। রাতের অন্ধকারে ইদুর জমিতে নেমে এসে ধানের গাছ কেটে ফেলছে। যে এলাকার জমি নিচু, সেখানে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হচ্ছে। ইঁদুরের আক্রমন থেকে রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তিনি। বাধ্য হয়ে বাঁশের ডোঙ্গার ফাঁদ দিয়ে ইঁদুর নিধনের চেষ্টা চালাচ্ছি।
আমন ধানের খেত ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা ইঁদুরের উপদ্রব থেকে ধান রক্ষা করতে খেতের মধ্যে বাঁশের কঞ্চি গেড়ে এতে পলিথিন টাঙিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার খেতের চারপাশে ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরি করে রেখেছেন। তবুও কোনো কাজে আসছে না। খেতে ইঁদুরের হানা দেয়া ধানের গাছ দেখে মনে হবে কেউ কাঁচি দিয়ে কেটে রেখেছে।
কথা হয় লালমোন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কৃষক মো. হানিফ বয়াতি এবং রেজাউল করিম সোহাগ বলেন, মৌসুমের শুরুতেই অতিবৃষ্টির কারণে আমন ধানের বীজতলা কয়েকবার নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও বিভিন্নভাবে চারা সংগ্রহ করে নির্ধারিত জমিতে আমনের আবাদ করেছি। তবে সেই ধানে এখন ব্যাপকভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে ইঁদুর। পোকার চেয়েও আমরা এখন বেশি ইঁদুর আতঙ্কে রয়েছি। ক্ষেতে ইঁদুর আক্রমণ করে ধান গাছ কেটে ফেলছে। নানা ধরনের ওষুধ আর ফাঁদ ব্যবহার করেও ইঁদুরের এই আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে কাক্সিক্ষত ফলন না পাওয়ার সম্ভাবনাই অনেক বেশি।
মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কৃষক রমজান আলী এবার ৩একর জমিতে আমন চাষ করেছেন। এখন ধানের শীষ বের হচ্ছে। এ অবস্থায় খেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দেয়ায় তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন। ঔষুধ ছিটিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। খেতের মধ্যে পলিথিন বেঁধে দিয়েছেন। বাতাসে কাগজ উড়ার শব্দে ইঁদুর পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কমকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, ইঁদুর দমনে জেলা কৃষি অফিসের পক্ষে থেকে প্রতিটা উপজেলায় সচেতনতা সভা করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়ে আসছে সংশ্লিষ্ট ব্লক সুপারভাইজাররা। তিনি আরো বলেন, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোলায় ১ লক্ষ ৪ হাজার ৯শ’৪৮টি ইঁদুর দমন করা হয়েছে। এর মধ্য চরফ্যাশনের অরবিন্দু বংশী নামের এক কৃষক ৮ হাজার ৪শ’ ২৩টি ইঁদুর দমন করে পুরস্কৃত হয়েছেন।
ভোলা সদর উপজেলার কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা (রাজাপুর ব্লক) মঞ্জুরুল আলম বলেন, রোপা আমন খেতে ইঁদুর তাড়ানোর জন্য কীটনাশক প্রয়োগসহ বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্য এর সমাধান হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ভোলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক মোঃ হাসান ওয়ারিসুল কবীর বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ইঁদুর নিধন অভিযান গত অক্টোবর থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শুরু হয়েছে। ইঁদূর কেউ একা নিধন করতে পারবে না। সমন্বিত ভাবে এটা নির্মুল করতে হবে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন উঠান বৈঠকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে কৃষি বিভাগ। এখন বর্ষা মৌসূম শেষ হয়েছে, ইঁদুর নিধনের উপযুক্ত সময় এটা। ইঁদুর নিধনে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে।