Dhaka ০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফুলবাড়ীতে মাশরুম চাষে সফল রাকেশ

হতে হবে সফল। তাই মাথায় ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। সাথে ছিল প্রবল ইচ্ছাশক্তি। সেই ইচ্ছাশক্তিই সফলতার চাবিকাঠি তুলে দিয়েছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পৌরএলাকার শিক্ষার্থী রাকেশ সরকার প্লাবনের হাতে। পড়ালেখার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হয়ে পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা দেয়াই লক্ষ্য ছিল তার। যা ভাবনা তাই কাজ। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজ বাড়িতে পরীক্ষামূলকভাবে মাশরুম চাষ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। মাত্র দুই মাসেই নিজেকে সফল উদ্যোক্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা মাশরুম এখন বাজার জাতের অপেক্ষায় আছে। ফুলবাড়ী উপজেলায় এর চাহিদা তেমন একটা না থাকায় এখন বাজারজাত নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার। তবে অনেক হোটেল রেস্তরায় তার উৎপাদিত মাশরুমের নমুনা চেয়েছে।

এদিকে এলাকায় অপরিচিত এই মাশরুম দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়রা। যারা কি-না এখন পর্যন্ত জানেনই না এটিও একটি খাবারযোগ্য পণ্য। অনেকে ভাবছেন এটি ব্যাঙের ছত্রাক।

তরুণ এ উদ্যোক্তা পৌরএলাকার চাঁদপাড়া গ্রামের নিখিল চন্দ্র সরকারের ছেলে। বর্তমানে তিনি দিনাজপুর গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব সাইন্স টেকনোলজির ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপ্লোমার তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে একটি অসম্পন্ন কক্ষ। সেখানে নেই দরজা-জানালাসহ উপরে চালা। সেই কক্ষেই ওপরে বাঁশ দিয়ে দঁড়ি ঝুলিয়েছেন। সে দঁড়িতে টানিয়েছেন পলিথিন ব্যাগের ভেতরে থাকা খড় দিয়ে মোড়ানো মাশরুমের স্পন। যা রীতিমতো ঝুলে থাকছে।

উদ্যোক্ত রাকেশ সরকার প্লাবন বলেন, আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমার বাবা। তিনি একজন শ্রমিক। তার উপার্জিত অর্থদিয়ে আমার পড়ালেখাসহ পরিবারের খরচ চলে। আমি এখন বড় হয়েছি। বাবার পাশাপাশি আমিও রোজগার করে পরিবারে সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু এতোদিন অনেককিছু চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। পরে একদিন মাথায় আশে মাশরুম চাষ করার। বিষয়টি নিয়ে আমি দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টার ও ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে পরামর্শ গ্রহণ করি। তাদের পরামর্শে আমি মাশরুমের স্পন সংগ্রহ করি। গত জানুয়ারীর ১৩ তারিখে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করি এবং ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ হতে মাশরুম সংগ্রহ করি। বর্তমানে মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে।

তিনি বলেন, মাশরুম চাষ হলেও এখন বাজার জাত করা নিয়ে দুশ্চিন্তা। ফুলবাড়ী উপজেলায় মাশরুমের চাহিদা তেমন একটা নেই। যার ফলে বিভিন্ন রেস্তরা বা হোটেলে যোগাযোগ করছি কিন্তু তাদের তেমন আগ্রহ দেখছি না। তবে কিছু কিছু রেস্তরা ও হোটেল মালিকরা আমার উৎপাদিত মাশরুমের নমুনা চেয়েছেন। তাদেরকে সেগুলো দিয়েছে। এখন অপেক্ষা তাদের উত্তরের। তবে সরকারিভাবে কৃষি ঋণ বা সরকারি সহযোগিতা পাওয়া গেলে আরো বড় আকারে মাশরুম চাষের কথা জানান তরুণ এ উদ্যোক্তা।

উদ্যোক্তা আরো বলেন, প্রতি কেজি মাশরুম উৎপাদনে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা খরচ হয়। প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পাইকারি দরে বিভিন্নস্থানে বিক্রি হবে। এটি ওয়েস্টার জাতের মাশরুম। এগুলো বাজারদর ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।

তরুণ এ উদ্যোক্তার বাবা নিখিল চন্দ্র সরকার ও মা রিক্তা রানী সরকার বলেন, ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি যখন প্রথমে মাশরুম চাষের কথা আমাদেরকে জানায় তখন আমরা বিরক্ত হই। বলি এসব করে কি হবে? কিন্তু তার জেদের কাছে আমরা হেরে যাই। সে নিজে থেকেই মাশরুম চাষ শুরু করে। এক পর্যায়ে যখন মাশরুম উৎপাদন শুরু করে তখন আমরাও তাকে সহযোগিতা করি। ছেলে দিনাজপুরের লেখাপড়া করায় সে বাড়িতে থাকে না। তাই আমরা দুই বেলা মাশরুমের সেই স্পনগুলোতে পানি স্প্রে করি। ছেলে ছুটি পেলেই ছুটে আসে। আশা করছি আমাদের ছেলে স্বাবলম্বী হবে। ঈশ্বর তার কষ্টকে সফলতার মুখ দেখাবেন।

প্রতিবেশী শিশির চন্দ্র প্রামানিক, সুমিতা রানী ও অরুনা সরকার বলেন, মাশরুম কি জিনিস তা আমরা আগে কখনো দেখিনি বা নামও শুনিনি। রাকেশ সরকার প্লাবন এটি যখন বাসায় চাষ শুরু করে তখন আমরা দেখি ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে। এটি খাওয়া যায় আমাদের প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পরে ইউটিউবে দেখি জানতে পারি যে এটিও খাদ্যপণ্য। মাশরুম চাষে সে সফল হলে আমরাও চাষ শুরু করবো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী ও ঔষধিগুণে ভরপুর একটি দ্রব্যের সহজ সরল নাম মাশরুম। মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন খাবারের পাশাপাশি মাশরুম চাষ অনেক লাভজনক। মাশরুম একটি সম্ভাবনাময় ফসল। এদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের উপযোগী। মাশরুম চাষের জন্য কোনো উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না।

বসত ঘরের পাশে অব্যবহৃত জায়গা ও ঘরের বারান্দা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। উপজেলায় পরীক্ষা মূলকভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে রাকেশ সরকার প্লাবন নামের এক শিক্ষার্থী মাশরুম চাষ করেছে। আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।এছাড়া স্পন কেনার ব্যবস্থা করে দিয়েছি হর্টিকালচার সেন্টার থেকে। তার কাছ থেকে আমিও মাশরুম কিনেছি। তাকে আরো দক্ষ করে তুলতে প্রশিক্ষণের জন্য মাশরুম উন্নয়ন ইনিস্টিউটে কথা বলা হয়েছে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

ফুলবাড়ীতে মাশরুম চাষে সফল রাকেশ

Update Time : ০৪:২৯:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

হতে হবে সফল। তাই মাথায় ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। সাথে ছিল প্রবল ইচ্ছাশক্তি। সেই ইচ্ছাশক্তিই সফলতার চাবিকাঠি তুলে দিয়েছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পৌরএলাকার শিক্ষার্থী রাকেশ সরকার প্লাবনের হাতে। পড়ালেখার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হয়ে পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা দেয়াই লক্ষ্য ছিল তার। যা ভাবনা তাই কাজ। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজ বাড়িতে পরীক্ষামূলকভাবে মাশরুম চাষ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। মাত্র দুই মাসেই নিজেকে সফল উদ্যোক্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা মাশরুম এখন বাজার জাতের অপেক্ষায় আছে। ফুলবাড়ী উপজেলায় এর চাহিদা তেমন একটা না থাকায় এখন বাজারজাত নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার। তবে অনেক হোটেল রেস্তরায় তার উৎপাদিত মাশরুমের নমুনা চেয়েছে।

এদিকে এলাকায় অপরিচিত এই মাশরুম দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়রা। যারা কি-না এখন পর্যন্ত জানেনই না এটিও একটি খাবারযোগ্য পণ্য। অনেকে ভাবছেন এটি ব্যাঙের ছত্রাক।

তরুণ এ উদ্যোক্তা পৌরএলাকার চাঁদপাড়া গ্রামের নিখিল চন্দ্র সরকারের ছেলে। বর্তমানে তিনি দিনাজপুর গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব সাইন্স টেকনোলজির ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপ্লোমার তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে একটি অসম্পন্ন কক্ষ। সেখানে নেই দরজা-জানালাসহ উপরে চালা। সেই কক্ষেই ওপরে বাঁশ দিয়ে দঁড়ি ঝুলিয়েছেন। সে দঁড়িতে টানিয়েছেন পলিথিন ব্যাগের ভেতরে থাকা খড় দিয়ে মোড়ানো মাশরুমের স্পন। যা রীতিমতো ঝুলে থাকছে।

উদ্যোক্ত রাকেশ সরকার প্লাবন বলেন, আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমার বাবা। তিনি একজন শ্রমিক। তার উপার্জিত অর্থদিয়ে আমার পড়ালেখাসহ পরিবারের খরচ চলে। আমি এখন বড় হয়েছি। বাবার পাশাপাশি আমিও রোজগার করে পরিবারে সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু এতোদিন অনেককিছু চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। পরে একদিন মাথায় আশে মাশরুম চাষ করার। বিষয়টি নিয়ে আমি দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টার ও ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে পরামর্শ গ্রহণ করি। তাদের পরামর্শে আমি মাশরুমের স্পন সংগ্রহ করি। গত জানুয়ারীর ১৩ তারিখে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করি এবং ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ হতে মাশরুম সংগ্রহ করি। বর্তমানে মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে।

তিনি বলেন, মাশরুম চাষ হলেও এখন বাজার জাত করা নিয়ে দুশ্চিন্তা। ফুলবাড়ী উপজেলায় মাশরুমের চাহিদা তেমন একটা নেই। যার ফলে বিভিন্ন রেস্তরা বা হোটেলে যোগাযোগ করছি কিন্তু তাদের তেমন আগ্রহ দেখছি না। তবে কিছু কিছু রেস্তরা ও হোটেল মালিকরা আমার উৎপাদিত মাশরুমের নমুনা চেয়েছেন। তাদেরকে সেগুলো দিয়েছে। এখন অপেক্ষা তাদের উত্তরের। তবে সরকারিভাবে কৃষি ঋণ বা সরকারি সহযোগিতা পাওয়া গেলে আরো বড় আকারে মাশরুম চাষের কথা জানান তরুণ এ উদ্যোক্তা।

উদ্যোক্তা আরো বলেন, প্রতি কেজি মাশরুম উৎপাদনে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা খরচ হয়। প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পাইকারি দরে বিভিন্নস্থানে বিক্রি হবে। এটি ওয়েস্টার জাতের মাশরুম। এগুলো বাজারদর ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।

তরুণ এ উদ্যোক্তার বাবা নিখিল চন্দ্র সরকার ও মা রিক্তা রানী সরকার বলেন, ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি যখন প্রথমে মাশরুম চাষের কথা আমাদেরকে জানায় তখন আমরা বিরক্ত হই। বলি এসব করে কি হবে? কিন্তু তার জেদের কাছে আমরা হেরে যাই। সে নিজে থেকেই মাশরুম চাষ শুরু করে। এক পর্যায়ে যখন মাশরুম উৎপাদন শুরু করে তখন আমরাও তাকে সহযোগিতা করি। ছেলে দিনাজপুরের লেখাপড়া করায় সে বাড়িতে থাকে না। তাই আমরা দুই বেলা মাশরুমের সেই স্পনগুলোতে পানি স্প্রে করি। ছেলে ছুটি পেলেই ছুটে আসে। আশা করছি আমাদের ছেলে স্বাবলম্বী হবে। ঈশ্বর তার কষ্টকে সফলতার মুখ দেখাবেন।

প্রতিবেশী শিশির চন্দ্র প্রামানিক, সুমিতা রানী ও অরুনা সরকার বলেন, মাশরুম কি জিনিস তা আমরা আগে কখনো দেখিনি বা নামও শুনিনি। রাকেশ সরকার প্লাবন এটি যখন বাসায় চাষ শুরু করে তখন আমরা দেখি ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে। এটি খাওয়া যায় আমাদের প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পরে ইউটিউবে দেখি জানতে পারি যে এটিও খাদ্যপণ্য। মাশরুম চাষে সে সফল হলে আমরাও চাষ শুরু করবো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী ও ঔষধিগুণে ভরপুর একটি দ্রব্যের সহজ সরল নাম মাশরুম। মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন খাবারের পাশাপাশি মাশরুম চাষ অনেক লাভজনক। মাশরুম একটি সম্ভাবনাময় ফসল। এদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের উপযোগী। মাশরুম চাষের জন্য কোনো উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না।

বসত ঘরের পাশে অব্যবহৃত জায়গা ও ঘরের বারান্দা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। উপজেলায় পরীক্ষা মূলকভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে রাকেশ সরকার প্লাবন নামের এক শিক্ষার্থী মাশরুম চাষ করেছে। আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।এছাড়া স্পন কেনার ব্যবস্থা করে দিয়েছি হর্টিকালচার সেন্টার থেকে। তার কাছ থেকে আমিও মাশরুম কিনেছি। তাকে আরো দক্ষ করে তুলতে প্রশিক্ষণের জন্য মাশরুম উন্নয়ন ইনিস্টিউটে কথা বলা হয়েছে।