Dhaka ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেখ মুজিবের ছবি সরানোর কারণ জানালেন উপদেষ্টা মাহফুজ

শেখ মুজিবের রহমানের ছবি রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে সরানো নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে। ছবিটি সরানোর কথা প্রথমে জানিয়েছিলেন অন্তর্র্বতী সরকারের নবনিযুক্ত উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেছেন, কেউ যদি সরকারি অফিস থেকে শেখদের ছবি সরানোর কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করেন, তবে তিনি এ গণঅভ্যুত্থান ও গণমানুষের চেতনারই নিন্দা জানালেন। বুধবার (১৩ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন মাহফুজ আলম। তার স্ট্যাটাসটি পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো- শেখ মুজিব ও তার কন্যা (আরেক শেখ) তাদের ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্য জনগণের তীব্র রাগ-ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। তাদের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হলো, শেখ মুজিব একসময় পূর্ব বাংলার গণমানুষের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন, যে জনপ্রিয়তা হাসিনার ছিল না। জনগণ পাকিস্তানি নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার (শেখ মুজিব) নেতৃত্ব অনুসরণ করেছিলেন, কিন্তু ‘৭১-এর পর তিনি নিজেই একজন অত্যাচারী হয়ে ওঠেন। মুজিববাদের প্রতি তার সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ১৯৭১ এর পর বাংলাদেশ পঙ্গু ও বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। নিজের ফ্যাসিবাদী ভূমিকার কারণে ১৯৭৫ সালে তার মৃত্যুতে মানুষ শোক প্রকাশ করেনি। তবে, শেখ তার ‘৭১ সালের আগের ভূমিকার জন্য সম্মান পাবেন, যদি শেখের ‘৭১-এর পরবর্তী গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ ও নিশ্চিতভাবেই ‘৭২-এর সংবিধান, যা বাকশাল প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছিল-এসবের জন্য তার দল ও পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চান। শেখের কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কথাও তাদের স্বীকার করা, ক্ষমা চাওয়া এবং এ জন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত (তিনি শেখ মুজিবকে একজন ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও উপহাসের পাত্র বানিয়েছিলেন)। তাদের উচিত, মুজিববাদী রাজনীতি ও শেখ পরিবারের বন্দনা পরিহার করা।

কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে শেখের ছবি সরানো হয়েছে (কর্মকর্তারা সরিয়েছেন, যদিও তা হয়েছে); যে শাসন মেয়ে করেছেন ফ্যাসিবাদী বাবার নামে ও তার ‘৭১-পরবর্তী চেতনার কথা বলে। তার বাবাকে দেবতুল্য করা হয়েছিল, কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের মানুষ একসঙ্গে তাদের দুজনের ছবি, ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নামিয়ে ফেলেছেন। কেউ যদি সরকারি অফিস থেকে শেখদের ছবি সরানোর কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করেন, তবে তিনি এ গণঅভ্যুত্থান ও গণমানুষের চেতনারই নিন্দা জানালেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। আমরা এখানে এসেছি, ঐতিহাসিক অসংগতি ও অপব্যাখ্যাগুলো দূর করতে। মনে রাখতে হবে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের গণমানুষের। আবার, কোনো মুক্তিযোদ্ধাও যদি ‘৭১- এর পর কোনো অন্যায় করে থাকেন, তার বিচার ও সাজা হওয়া উচিত। স্বাধীনতাযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন বলেই তাদের এ ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া উচিত নয়। শাসক পরিবারগুলোকে দেবতুল্য করা ও ক্ষমতাসীন পরিবারগুলোর সবকিছু নিজেদের বলে মনে করা-এ থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে আসা উচিত। ‘৪৭ ও ‘৭১-এর পাশাপাশি জুলাইয়ের চেতনা আমাদের সবার স্মৃতিতে বেঁচে থাকুক!

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইইউর ২৭ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক ৯ ডিসেম্বর

শেখ মুজিবের ছবি সরানোর কারণ জানালেন উপদেষ্টা মাহফুজ

Update Time : ০২:২৫:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

শেখ মুজিবের রহমানের ছবি রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে সরানো নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে। ছবিটি সরানোর কথা প্রথমে জানিয়েছিলেন অন্তর্র্বতী সরকারের নবনিযুক্ত উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেছেন, কেউ যদি সরকারি অফিস থেকে শেখদের ছবি সরানোর কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করেন, তবে তিনি এ গণঅভ্যুত্থান ও গণমানুষের চেতনারই নিন্দা জানালেন। বুধবার (১৩ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন মাহফুজ আলম। তার স্ট্যাটাসটি পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো- শেখ মুজিব ও তার কন্যা (আরেক শেখ) তাদের ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্য জনগণের তীব্র রাগ-ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। তাদের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হলো, শেখ মুজিব একসময় পূর্ব বাংলার গণমানুষের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন, যে জনপ্রিয়তা হাসিনার ছিল না। জনগণ পাকিস্তানি নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার (শেখ মুজিব) নেতৃত্ব অনুসরণ করেছিলেন, কিন্তু ‘৭১-এর পর তিনি নিজেই একজন অত্যাচারী হয়ে ওঠেন। মুজিববাদের প্রতি তার সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ১৯৭১ এর পর বাংলাদেশ পঙ্গু ও বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। নিজের ফ্যাসিবাদী ভূমিকার কারণে ১৯৭৫ সালে তার মৃত্যুতে মানুষ শোক প্রকাশ করেনি। তবে, শেখ তার ‘৭১ সালের আগের ভূমিকার জন্য সম্মান পাবেন, যদি শেখের ‘৭১-এর পরবর্তী গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ ও নিশ্চিতভাবেই ‘৭২-এর সংবিধান, যা বাকশাল প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছিল-এসবের জন্য তার দল ও পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চান। শেখের কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কথাও তাদের স্বীকার করা, ক্ষমা চাওয়া এবং এ জন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত (তিনি শেখ মুজিবকে একজন ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও উপহাসের পাত্র বানিয়েছিলেন)। তাদের উচিত, মুজিববাদী রাজনীতি ও শেখ পরিবারের বন্দনা পরিহার করা।

কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে শেখের ছবি সরানো হয়েছে (কর্মকর্তারা সরিয়েছেন, যদিও তা হয়েছে); যে শাসন মেয়ে করেছেন ফ্যাসিবাদী বাবার নামে ও তার ‘৭১-পরবর্তী চেতনার কথা বলে। তার বাবাকে দেবতুল্য করা হয়েছিল, কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের মানুষ একসঙ্গে তাদের দুজনের ছবি, ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নামিয়ে ফেলেছেন। কেউ যদি সরকারি অফিস থেকে শেখদের ছবি সরানোর কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করেন, তবে তিনি এ গণঅভ্যুত্থান ও গণমানুষের চেতনারই নিন্দা জানালেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। আমরা এখানে এসেছি, ঐতিহাসিক অসংগতি ও অপব্যাখ্যাগুলো দূর করতে। মনে রাখতে হবে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের গণমানুষের। আবার, কোনো মুক্তিযোদ্ধাও যদি ‘৭১- এর পর কোনো অন্যায় করে থাকেন, তার বিচার ও সাজা হওয়া উচিত। স্বাধীনতাযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন বলেই তাদের এ ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া উচিত নয়। শাসক পরিবারগুলোকে দেবতুল্য করা ও ক্ষমতাসীন পরিবারগুলোর সবকিছু নিজেদের বলে মনে করা-এ থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে আসা উচিত। ‘৪৭ ও ‘৭১-এর পাশাপাশি জুলাইয়ের চেতনা আমাদের সবার স্মৃতিতে বেঁচে থাকুক!